কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

পার্থ ভট্টাচার্য

স্টিং-অপারেশন


রাতের একপশলা বৃষ্টিতে মেঘ কেটে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে আজ চায়ে চুমুক  দিতে দিতে চারতলার ব্যালকনি থেকে রাস্তার ওপাশের মাঠটাতে ছেলেগুলোর প্র্যাকটিস দেখছিল সন্দীপ নাহ্! চা-টা বেশ ভালোই বানিয়েছে! নিজেই নিজের তারিফ করে সে
দশ মাস হলো হাকিমপাড়ার এই ফ্ল্যাটটা নিয়েছে ১২০০ স্ক্যোয়ার ফিট সব মিলিয়ে ত্রিশ লাখের ওপর পড়েছিল ছোট নিলেই হতো, কিন্তু অতসীর জেদ আজ অব্দি ওর কাছে কোনোদিনই জিততে পারলো না
শুতে শুতে বেশ রাত হয়ে গেছিল কালআজকের দিনটাও ব্যস্তই কাটবে ঘরে ঢুকে শেভিং ক্রিমটা গালে লাগালো, অতসী এখনও বেরোয়নি বাথরুম থেকে

- ফিরতে দেরী হবে তুমি খেয়ে নিওবেরোনোর জন্য রেডি সন্দীপ
ড্রেসিং-টেবিলের সামনে তুলির শেষটান দিতে দিতে অতসী বলল, - নতুন শিকার নাকি?
- না না! অফিসে অনেক কাজ বাকি তোমার ব্যাঙ্কেও যাব লোনটার জন্য আর... সেটা অবশ্য চুনোপুটি
- লোনের ব্যাপারে কথা বলব নাকি?
- নাহ! শৈবালদা ঠিক ম্যানেজ করে নেবে বেরিয়ে গেল সন্দীপ

এখনও হামারা বাজাজটাই ওর ভরসা সাত বছর হলো, অনেক দিয়েছে দুচাকার লাকি বাহনটি আজকাল বেশ তাড়াতাড়িই কলকব্জাগুলো সারাতে হচ্ছে বটে, তবু মায়া ছাড়তে পারে না সন্দীপ
অতসীও জ্বালাচ্ছে বেশ কিছুদিন চারচাকা নিয়েই নাও না! ই এম আই ঠিক হয়ে যাবে, দুজনের মিলিয়ে
অতসীকে লুকিয়ে মাকে পাঠানো মাসে মাসে পাঁচহাজার টাকার কথা ভাবে সন্দীপ

পয়সা না হলেও ভালোই নাম ছড়িয়েছে সন্দীপের। জাগরণপত্রিকার এডিটর শৈবাল দে'র সবচেয়ে কাছের আর কাজের লোক বাইরের লোক জানতেও পারে না, শহরের   সব সাড়া জাগানো খবরের অন্তর্তদন্তের পেছনে মাস্টারমাইন্ড আসলে সন্দীপ সরকার

আগের দিনের রয়ে বাকি কাজ সেরে উঠতেই তিনটে বেজে গেল শৈবালদা এখনও এসে পৌঁছননি ডেস্ক থেকে উঠে পড়ল সন্দীপ, লাঞ্চ সেরেই বেরোতে হবে

ভেনাস মোড় ক্রস করে হিলকার্ট রোড ধরতেই যেন মুখের সামনে নেচে উঠল সোনালি চূড়াটা, মেঘমুক্ত আকাশে রোদ পোয়াচ্ছে 
...আমিও পৌঁছব একদিন... শিলিগুড়ি কলকাতার সীমানা ছাড়িয়ে তোমার উচ্চতায়, দেখে নিও!

অ্যাপয়েনমেন্ট ছিল সাড়ে চারটেতে পাঁচমিনিট আগেই পৌঁছে গেল সন্দীপ

ঠিক জালে ফেঁসে গেলেন অতসীদের ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মিঃ সরখেল সুদর্শন, প্রায় ছ' ফুটের কাছাকাছি, চেইন স্মোকার-৫৫৫ একমুঠো ধোঁয়ার কুন্ডলির ফাঁক গলিয়ে বললেন, 15%... চোখে মুখে কনফিডেন্স
... ফুসফুস দুটোতো নিজেই খেয়েছিস, বাকিটা আমি দেখছি! মনে মনেই হাসে সন্দীপ
পঁচিশ লাখের লোন-কাগজপত্র আগেই দেখানো ছিল আজ ছিল ফাইনাল ডিল অনেক বলে কয়ে 10% রাজি হলেন, তবে অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেবেন না, ক্যাশেই নেবেন
গোপন ক্যামেরায় রেকর্ডেড হয়ে রইলো সব কথোপকথনএবার বমাল ধরার অপেক্ষা মাছটাকে

সেদিন পার্টিতে অতসী আলাপ করিয়ে দেওয়ার পর, দু'চার কথার পরেই সরখেল  সোজাসুজি যখন - আপনারদের অফিসের জন্য লোন লাগলে বলবেন, ব্যবস্থা হয়ে যাবে - বলেছিল, সন্দেহটা তখনই হয়েছিল নতুন এসেছে, ব্যাটা তো আর জানে  না...

যা ভেবেছিল, সেটা হলো নাঅফিসেই আসেননি শৈবালদা ফোন করেছিলেন সাব- এডিটর মুকুলকে মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছেনকাল আলোচনা করবেন সন্দীপের সাথে
সবাইকেই যেন কেমন ঠেকছে আজকাল সন্দীপের আগরওয়ালদের কেসটা যেভাবে চেপে দিলেন শৈবালদা... ব্ল্যাকমেল করে টাকা কামাচ্ছে না তো!
...ধুর! বড় বেশি সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠছি আজকাল! নিজেকেই বকে দিল সন্দীপ

আটটার মধ্যেই বাড়ি ফিরে এলো বেজেই চলেছে কলিং-বেলটা সে কি! এখনো ফেরেনি অতসী? ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো সন্দীপ

ঢুকতেই খুউউব চেনা একটা সিগারেটের গন্ধ ধক্ করে নাকে এলোএকটা চিনচিনে জ্বালা যেন ছড়িয়ে পড়ছে বুক থেকে মাথায়

এত কাছে, তবু অধরা!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন