কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

নূপুর রায়চৌধুরী

 

কবিতার কালিমাটি ১৩৫


নির্জনসন্ধ্যা

 

এই নির্জন সন্ধ্যাগুলো,

আমার খুব একা লাগে।

চেয়ে চেয়ে দেখি,

মহীরুহের সীমন্ত লেপ্টে,

সূর্যের শেষ রক্তবিন্দুর মায়া।

ভবঘুরেগুলো দূর পাড়ি দেয়,

রাতের আস্তানার খোঁজে,

জঙ্গলে ক্লান্তির ঘুম নামে,

অর্থহীন শব্দেরা আমায় ঘিরে

কেমন ফিসফিস করে।

আমি খুঁজি ওদের উৎস,

অলিন্দে না করোটিতে?

বুঝতে পারি না, ধাঁধা লাগে,

টেনে নিয়ে চলে যেতে চায়,

পাকদন্ডীর ফেলে আসা,

কদাকার পিচ্ছিল পথে।

 

আমি তীব্র প্রতিবাদ করি,

যুক্তির বেড়াজাল বাঁধি,

মাটি আঁকড়ে রক্ষাগন্ডি কাটি।

হিসহিস করে ওদের উদ্যত ফণা,

প্রচন্ড নিষ্ফলতায়,

বারংবার, বারংবার।

শ্রান্ত আমি ঘুমোব এখন,

চোখে এঁকে ভোরের স্বপন।

 

পেতাম যদি এক জাদুদন্ড

 

আমার হাতে যদি একটা জাদুদন্ড থাকত,

সবচেয়ে আগে আমি সময়কে বন্দী করতাম,

বুকের মধ্যকার নীল জলাশয়ের গহবরে,

মন্ত্র পড়ে ওকে লুকিয়ে রাখতাম,

অনেক অনেক দিন,

সেই ফাঁকে স্কাইলার্কের ডানা মেলে,

সাত সমুদ্দুরের ডুবুরি হয়ে,

মণিকাঞ্চন আঁজলা ভরে,

জড়ো করে বিলিয়ে দিতাম,

যে চায় তাকে,

হার্মোনিকায় নিয়মভাঙা গান সাজিয়ে,

বনবাদাড় চষে বেড়াতাম,

যা খুশি তাই করতাম।

কে ভাবে কালের কথা?

আজই আমার বেশ ।

 

আমার পুজো

 

মা কত কত বছর আমি পুজো দেখিনি।

সেই যে আসমানী রঙের জামদানি শাড়ি,

ওই আমার শেষ পুজোর সাজ।

তার পরের পুজোয় মারাত্মক অসুখটা,

তোমার শরীরে বিষাক্ত নখ দিয়ে,

একের পর এক আঁচড় কাটল।

 

যোজন দূর উড়ে এসে আমি,

তোমার শুকনো শরীরটায় হাত ছোঁয়ালাম।

তোমার চোখের কোণে জল,

আর ঠোঁটের ক্লান্ত হাসিতেই,

ধন্য আমার সে পুজোর রাস অধিবাস।

পয়মন্ত রক্তকরবী গাছটার সাথে সাথে,

তুমিও ভেঙে চুরে অচিরেই স্থবির হলে।  

 

জানো মা, অশনি সংকেতের সেই শুরু!

ঘূর্ণিঝড়ে কবে যেন উড়ে গেল,

তাসের ঘর আমার।

কোথায়? হদিসই পেলাম না।

আলতা পেড়ে শাড়ি আর হাত ভর্তি চুড়ি,

সে কি এতই সুলভ গো মা?

এখন পুজো আসে যায়,

অগুরু জ্বালানো একলা ঘরে,

শিউলির মালাজড়ানো চুলের গন্ধ খুঁজি,

চন্দনের বনে ঘুরে ঘুরে স্বপ্ন দেখি,

সিঁদুর রাঙা সিঁথিতে গরবিনী ললনার,

লাজারুণ কাঁকনের রিনিঝিনি,   

রাগ ললিতের সাথে চোখের নোনা পানি,

মিলে মিশে বিসর্জনের ঝাপসা সন্ধ্যা এরপর, 

আরও অনেক অস্পষ্ট,

আরেকটা ভাঙা প্রতিশ্রুতির উৎসব এখন সমাপ্ত।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন