কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২২


ভুল ঠিকানা

‘মন, হাওয়ায় পেয়েছি তোর নাম... মন, হাওয়ায় হারিয়ে ফেললাম

হাওয়া দিল শিরশিরানি ডাক, হাওয়া দিল ডানা... হাওয়া দিল ছেঁড়া স্যান্ডেল, ভুল ঠিকানা...’

এক শতছিন্ন ময়লা ফটো নিয়ে সামনের ভদ্রলোকের কাছে এগিয়ে গেলাম।

-দাদা, এই মেয়েটির ঠিকানা একটু বলে দিতে পারেন? আমি ভুলে গেছি...

লোকটা ভুরু কুঁচকে অনেকক্ষণ ফটোটা দেখল। একমাত্র গোলাপি ওড়না মাথার ওপর ঘোমটার মত দিয়ে  ক্যামেরার দিকে হেসে চেয়ে থাকা আর নিচে উল্টো করে রিতু লেখা ছাড়া এখানে আর কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটার মুখ রং গড়ন হাইট রোগা-না-মোটা কিচ্ছু না। বিবর্ণ কাগজ।

-এ কে হয় আপনার? কোথায় থাকে? এ পাড়ায় দেখেছি বলে তো মনে করতে পারছি না।

আমি একটু মাথা চুলকোলাম। এ আমার কে হয় সেটা বলতে গেলে শ্রদিঞ্জার ওয়েভ ইকোয়েশনের স্থান কাল নির্ভরতা বোঝাতে হবে। এরা বুঝবে কি? তাছাড়া মেয়েটা এ পাড়ায় থাকে কিনা আমারো মনে নেই। কেন এখানে এসে পড়লাম, তাও ভুলে গেছি।

-আপনি একবার থানায় জিজ্ঞেস করুন। ওদের কাছে মিসিং ডায়েরীতে অনেক কিছু থাকে।

ঘাড় নেড়ে এগোলাম। এর সঙ্গে শেষবার কী কথা হয়েছিল মনে নেই, কিন্তু এ আমায় ছেড়ে চলে যাবে হুমকি দিয়েছিল। আমায় চরিত্রহীন বলেছিল। ওর ঘরে গেলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে অপমান করবে। ঘা যেন বড্ড দগদগে। তারপর থেকে আমি হাইজেনবার্গের মত পজিশন ধরব না মোমেন্টাম ধরব বুঝতে পারিনি। দিনরাত সব এক করে আজ হঠাৎ এখানে, এপাড়ায়।

একটা গ্রীলঘেরা দূর্গাদালান আছে দেখছি। কেউ নেই। বসা যাক। সত্যিই তো, মেয়েটা আমার কে হয়? ফটোটা বের করে খানিক দেখলাম। দেখে তো রিসেন্ট ফটো মনে হচ্ছে, পেছন দিকে জঙ্গলের হাল্কা সবুজ লাইনিং। তাহলে এরকম অবস্থা হল কী করে? ছেঁড়া কাটা ভাঁজ ভাঁজ পুরনো। প্রায় অচেনা। উল্টো করে লেখা রিতু। কোন্‌ ঋতু? নাকি তুরী? মিষ্টি না তেতো নাকি কস্‌? একটুও মনে করতে পারছি না।

দূর থেকে একজন লোক হাতে এক মদের বোতল ঝুলিয়ে এদিকেই আসছে। টলতে টলতে। হাতের আবশিষ্ট পানীয় স্বচ্ছ। কাছে আসতেই ভক্‌ দুর্গন্ধ। হাঁড়িয়া বা ধেনো। একে জিজ্ঞেস করি। নিশ্চই এপাড়ার।

-দাদা, এই মেয়েটার ঠিকানা জানেন? এই যে এই ফটোটা...

একবার চাইল। তারপর আমার হাত থেকে ফটোটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,

-তুই কে বে? আমার মাল খাবার টাকা নেই, আর তুই এখানে ঠিকানা মারাচ্ছিস? ফোট্‌, ফোট্‌ শালা...

ফটোটা ও উড়িয়ে দিল। আমি চাইছি হাওয়া দিক, জোরে হাওয়া দিক। খুব জোর। ঋতু ডাক ফুটুক।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন