কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

মলয় রায়চৌধুরী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৯


সালফি খেলে মানুষ মেঘ হয়ে যায়

গোঁড়-মাড়িয়া দোভাষীর উপদেশ ছিল,  নোংরা জলের চেয়ে সালফি খাওয়া ভালো, সকাল হবার আগেই খেয়ে নেবেন, সকালের সালফি খেলে আকাশ তাকে নেয় না । সকালের পর সালফি খেলে মানুষ মেঘ হয়ে যায় ।

দোভাষী বলা বজায় রাখল, সালফি হল তাড়ির মতন দেখতে একরকম মদ । তালগাছ বা খেজুরগাছের মতন দেখতে হয় গাছগুলো , যেমন করে চেঁচে নিয়ে তালের বা খেজুরের রস বেরোয়, তেমন করে বের করা হয় । তালের রস পচলে তাড়ি হয়, তেমনই সালফির রস চব্বিশ ঘণ্টার পর সাদা রঙের মেঘ হয়ে যায় । বাতের আর গা-হাতপা ব্যথার রোগ খুব হয় অবুঝমাড়ে । আমরা তাই বিয়ার বাহুতি পোকা থেকে তেল বের করে বাড়িতে রাখি । যাদের নতুন বিয়ে হয়েছে তারা ওগুলো শুকিয়ে খায় ।

আমি জানি, বললুম, পোকাগুলোকে বলে বিয়ার বাহেতি, লাল টকটকে  বলে রেড ভেলভেট মাইট বা ট্রমবিডাইডা পোকা ।  গাঁয়ের লোকেরা পোকাগুলো শুকিয়ে ইনডিয়ান ভায়াগ্রা হিসেবে খায়।পুরুষ পাখিরাও বসন্ত ঋতুতে খায় পোকাগুলো, প্রজননের জন্য ।

ঢিবি দেখে জানতে চাইলুম, ওগুলো কী ? ঢিবিগুলো । রঙিন কাপড়ে উড়ছে ? একটায় শার্টও ঝোলানো রয়েছে ।    দোভাষী বলল, ওগুলো মাড়িয়াদের কবর । কোনো আত্মীয় আৎমার শান্তির জন্য কাপড়ের টুকরো বেঁধে গেছে, কাপড়গুলো অমাবসের রাকছসদের থেকে আৎমাদের রক্ষা করে ।

লোহার তোরণের মত দেখতে একটা জায়গায় থামলুম । তোরণের ওপরের টিনে সবুজ রঙের ওপর সাদা রঙে হিন্দিতে লেখা রয়েছে, ‘ভারতীয় সেনা ওয়াপস যাও, বস্তরওয়াসী বাহরি নহিঁ হ্যাঁয়’ । জঙ মত লড়ো ।’ টিনের সাইনবোর্ডের পেছনে লেখা, ‘বস্তরকে য়ুবায়োঁ, সরকার কে নাজায়জ জঙ কে খিলাফ জনয়ুধ মেঁ শামিল হো জাও ।’

মিনিট পনেরো হাঁটার পর, দেখলুম, দুটো নিচুছাদ চালাঘরের গ্রামের মতন একটা জায়গায়  উলঙ্গ বাচ্চারা খেলা করছে, ছেলে-মেয়ে দুই-ই, রুক্ষ চুল, দেখেই বোঝা যায় বহুদিন, বা হয়ত কখনও, স্নান করেনি । শহরে এই বয়সের মেয়েরা কুঁচকি আর বুকঢাকা পোশাক পরে । কয়েকজন শিড়িঙ্গে শিথিল-দাবনা পুরুষ বসে আছে, তারাও প্রায় উলঙ্গ, কৌপিনগোছের ন্যাকড়ায় লিঙ্গ ঢাকা। লোকগুলোর কোনো আগ্রহ হল না আমাদের উপস্হিতিতে, সম্পূর্ণ উদাসীন , যেন সত্যিই আকাশে ভেসে রয়েছে । ওরা এ গ্রামের নয়, কুরুসনার গিয়ে সালফি খেয়ে এখানে মৌতাত নিচ্ছে । এই অবস্হায় ওরা ভেতরে গেলে মাওওয়াদিরা ধরে ফেললে ফাইন করবে ।

বড় ধাপ থেকে ছোটো হতে থাকা সিঁড়ির মতন ওঠা লাল আর সাদা কয়েকটা স্তুপের দিকে ইশারা করে  মাড়িয়া দোভাষী বলল, ওগুলো শহিদ-বেদি ; যারা আধামিলিট্রির গুলিতে মারা গেছে তাদের ইয়াদগারে বানানো, বেশিরভাগ বেদি আসলে সমাধি, দেখছেন না বেদির ওপরে টিনের কাস্তে-হাতুড়ি ।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন