কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৯


টনিক

 

ডাক্তার: আপনার কোন প্রবলেম নেই। হি ইজ দ্য রুট। দীর্ঘস্থায়ী ট্রিটমেন্ট করতে হবে। একটু খরচ আছে।

ধুস্ যত্তোসব, টাকার পিন্ডি চটকানো ডাক্তার! চলো, চলো। হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এল মনোরমা। বর্গভীমা মন্দিরে মা কালীর থানে ঢিল বেঁধে কত বাঁজা-খোজা ঠিক হয়ে গেল!

ইতিমধ্যে একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বন্ধু বিপ্রতীপের সাথে দেখা। প্রায় পাঁচবছর পর। একই কলেজে পড়েছে। মনোরমার পাড়াতুতো বন্ধুও বটে। এছাড়া বিপ্রতীপ কলেজ ম্যাগাজিনের সম্পাদনা করত, টুকটাক লেখালেখিও‌ করত। বিয়ের পর ওকে ভোলেনি তুষার। বড়লোকের ছেলে বিপ্রতীপ, নিম্নবিত্ত বন্ধুটিকে সে বড় ভালোবাসতো। দুর্দিনে ওর পাশে ছিল। বলল, কতদিন পর দেখা হলো বল তো, হঠাৎ কোথায় হাওয়া হয়ে গেলি? বিয়েতেও তো গরহাজির ছিলি। বিপ্রতীপ চুপ করে থাকে। তুষার বলে যায়: লেখালেখি করিস, জানি, মনোরমার কাছে শুনেছি তোর গল্প-টল্প বিভিন্ন পত্রিকায় বেরোয়। এছাড়া আর কিছু?

--না, ওটাই। আমার দ্বারা আর কিছু হবে না। বাবা অনেক টাকা রেখে গেছে, খাই আর ঘুরি। যত্র রাত, তত্র কাৎ। 

--ঠিক আছে, তবে আজ আমার ফ্ল্যাটে চল্। রাতটা না হয় ওখানেই কাটাস।

--আমার আর কি, কিন্তু... তোদের মধ্যে... মনোরমা... বিপ্রতীপ ইতস্তত করছিল। এমন হওয়ার কথা ছিলো না। আজ বুঝল, পাঁচবছর বড় কম কথা নয়।

--কি মনে হয়, তোকে দেখলে ও অসন্তুষ্ট হবে? চুপ করে গেল বিপ্রতীপ। বাড়ির দোরগোড়ায় এসেই পড়ে ছিল; দরজা খুলে মনোরমা ভিতরে চলে যাচ্ছিল, তুষারের ডাকে ঘুরে দাঁড়ালো।  --আরে, কোথায় চললে, চিনলে না, বিপ্রতীপ, তোমাদের পাড়ার'। যেন খেয়াল করেনি এইভাবে ঘুরল মনোরমা, 'হ্যাঁ, তাই তো, চিনবো না কেন! মাথার চুল তেমনি আছে, পেকেছে শুধু'। আর দাঁড়াল না সে। পাঁচ বছরে কিছুই বদলায়নি মনোরমার। তবু বিপ্রতীপ মনে মনে অপ্রস্তুত বোধ করলো। পাঁআআচ বছর, সে বড় কম কথা নয় হে, বিপ্রতীপ!

সেই থেকেই বিপ্রতীপের  আসা যাওয়া। মাঝে মাঝে ওদের অনুরোধে দিনকয়েক করে টানাও থাকতে হলো। একদিন বর্গভীমা মন্দিরে পুজো দিয়ে মানতের ঢিল বেঁধে ফেরার সময় মনোরমার হাতের একটা ছোট শিশিতে সাদা জল দেখে বিপ্রতীপ জানতে চাইলে মনোরমা হাসে। এটা টনিক। তুমি বুঝবে না।

এভাবেই চলছিল। মানত আর চিকিৎসা দুটোই পাশাপাশি। মাস খানেক পর একদিন রাতে বিছানায় মনোরমা তুষারকে বললো, জানো তো, আমার না খুব ভয় করছে; এমাসে হয়নি।

তুষার: তার মানে? তার মানে... টনিকে কাজ হয়েছে! বল কি গো, টনিকে কাজ হয়েছে... বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো তুষার। এই সময় মনোরমার কপালে হাত দিলে সে দেখতো এই শীতের রাতেও রীতিমতো ঘামছে তার স্ত্রী।

 


1 কমেন্টস্: