কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩

জরিনা আখতার

 

কবিতার কালিমাটি ১২৭


শব্দের আর এক নাম

 

খুদ কুঁড়ো চাল নয়, কড়ি ও মু্দ্রাও নয় ——

আমি জলের ভিখারি

দীর্ঘ পথ পরিক্রমণে উত্তরে কোথাও মেলেনি জলের দেখা,

এসেছি দক্ষিণে জলের প্রত্যাশায় ——

এই বুকে তৃষ্ণা চেপে আছে জগদ্দল পাথরের মতো;

সব জলই জল নয় ——

যত্রতত্র জল ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা

ঝাউবন জলে স্নাত -- তার সমগ্র শরীর ভিজে আছে জলে

শিরীষের শাখায় শাখায় পাতায় পাতায় ফোঁটা ফোঁটা শিশির

নগণ্য ঘাসেও রোদ-ঝিকমিক জলকণা

নদীও আছে তার বুক ভরা জল নিয়ে;

তবু লালনের মতো বুকভরা তৃষ্ণা নিয়ে ছুটে চলেছি দিগ্বিদিক

আমি তো ভিখারি সেই অনন্য সুপেয় জলের

যে জলের অপর নাম শব্দ

আর যে শব্দের অপর নাম জীবন।  

 

লালনের গান হয়ে

 

কাল সারারাত ঝড় ছিল,

ঝড়ের সন্ত্রস্ত হাতে অপমানিত হয়েছিল অরণ্যের কুমারী শরীর ——

ভোরের আলোয় দেখ স্বপ্নের বসতি ভেঙে  চুরমার হয়ে আছে,

নীড়ভাঙা পাখিদের আর্তনাদ আরও বেশি শোকার্ত

করে তুলেছে অরণ্যের বাতাস ——

কাল যারা কেঁদেছিল রাতের তাণ্ডবে

আজ ভোরে তারা কেউ নেই —— চলে গেছে দূর দূরান্তরে

একতারা হাতে অন্য কোনো প্রান্তরে;

এভাবে গল্পের শেষে আর কোনো গল্প থাকে না ——

শুধু গাছের বিধ্বস্ত শরীরে পাতার মর্মর বাজে

লালনের গান হয়ে।

 

আকালের মাঠ

 

লাল আগুন-ঝরা ক্ষুধায় নেমে আসে আকাশের মুখ ——

আকালের মাঠে মানুষের ঢল

মরচেপড়া কাস্তেতে প্রতিফলিত হয় না তারকাদের ছবি

বীজে ঘুণ, অনাকাঙ্ক্ষিত স্রোতে ভেসে গেছে চারাগাছ;

কী নেবে তবে ক্ষুধার্ত আকাশ!

তবু রাত জেগে জঙ্গনামা পুথিপাঠ শোনে কিছু লোক

কিন্তু মোরগডাকা ভোরে আলোকিত হয় না গ্রাম --

জলে ঢেউয়ের খেলা নেই

সাঁতারকাটা ভুলে গেছে কিশোরেরাও

বিকেলের খোলা মাঠে ভূতুড়ে সন্ধ্যার

নৃত্যপর ভঙ্গিমায় আবার রাত নামে ——

কিন্তু উঠোনের উনুনে চাপে না ভাতের হাঁড়ি;

আকালের মাঠ থেকে কেউ কেউ ঘরে ফেরে

কেউ কেউ পুনরায় মাঠে নামে!

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন