কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৭ |
ম-এ মিডিয়া
হাফ চান করার পরেই হঠাৎ জল শেষ। বগল আর নিম্নপ্রদেশ সাবানে শাদা। কপাল বেয়ে জল চুঁয়ে পড়ছে। ধৃতরাষ্ট্র একবার চোখ পিটপিটিয়ে এদিক ওদিক চাইল। দেওয়ালে একটা মাত্র টিকটিকি শার্সির ওপারে চলে যাচ্ছে। মুখের খিস্তি গিলে চিৎকার করে বউকে বলল পাম্পটা চালাতে। সে কি আর আছে এ জগতে! হাতে মোবাইল ঠুসে অন্ধের মতো ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে কত বছর। এখন মন্দা চলছে বলে রান্নার বিজনেস করে। ভদ্দরলোকের বউ রান্নার মাসি হয় না তাই রাঁধছে আর সাপ্লাই দিচ্ছে যাদের হাতজোড়া অন্য কাজে। পাঁচমিনিট অপেক্ষা করতে হবে এভাবেই নাংগা হয়ে। সঞ্জয় তো বসার ঘরে অপেক্ষা করছে আধঘন্টা। গানুর সঙ্গে মনে হয় কোনো কেওড়া হয়েছে। ধৃতরাষ্ট্র লক্ষ্য করছে আজকাল বউ আর পাত্তা দেয় না সঞ্জয়কে। যাক তার আর কী! সারাটা জীবন তো চোখ বন্ধ করেই কেটে গেল। কোটি টাকার ব্যবসা বাপ ট্যালামার্কা ভাইটাকে দিয়ে দিল, তার ভাগ্যে কেবল মিডিয়ার ব্যবসাটা। টাকার রংচটা থেকে মহামারী চলছিল মোটামুটি, সঙ্গে টুকটাক ধর্ষণ-টর্ষণ, খেয়োখেয়ি... কিন্তু ইদানিং সব কেমন যেন নেস্কে পড়েছে। ওপরওলাদেরও তেমন হম্বিতম্বি নেই। সবাই বেশ পমেটম মেখে সুখি প্রজা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বাজার খারাপ তাই ‘ম-এ-মিডিয়ার’।
তা সঞ্জয় তলাপাত্র কাজটা এমনিতে ভালোই করে। চাঞ্চল্যকর সবকিছুই তুলে আনে ছেঁকে তারপর নিজের মতো মসলাদার খাবার তৈরি কাস্টমারের জন্য। তবে কিনা ইদানিং লোকে নিজেরাই এত খবরাখবর রাখছে, দেখছে আর ভাইরাল করে ফেলছে যে, মিডিয়ার ওপর আর তেমন ভরসা নেই। গা মুছতে মুছতে ভাবছে ধৃতরাষ্ট্র, কিছু একটা করতে হবেই! সঞ্জয়ের হিসেবমতো বাজারে অনেক দেনা বেড়েছে তার। এছাড়াও জিএসটি’র ফ্যাকড়া।
সোফার ওপর শাদাচুল একপাশে আঁচড়ে ফুলকপির মতো বসে আছে সঞ্জয় আর হাতের ওপর হাত রেখে ছলো-ছলো চোখে তাকিয়ে আছে তার বউ গান্ধারী গড়াই মণ্ডল। ঘুষুড়ির মহাদেব গড়াই-এর একমাত্র কন্যা গান্ধারী গড়াই। রূপ-টুপ তেমন নেই তবে বেশ উর্বর। বিয়ের সময় মহাদেব নগদ এককোটি দিয়েছিল মেয়ের নামে তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। দেবে নাই বা কেন! ঘুষুড়ির শ্যামের মন্দির বাদে ওদের কাপড়ের দোকানটাই তো বিখ্যাত। আপাতত গানু আর সঞ্জয় গভীর দুখে মগ্ন।
এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখতে দেখতে ধৃতরাষ্ট্র অন্যমনস্ক। তার হঠাৎ মনে হল যদি, মানে যদি কাপড় ধরে টান দেওয়া যেত রাজমহিষীর, তবে কান কেন, উঠে আসত সারা শরীর আর গুপ্তরাজ্য অনেক পারিষদের। আর তাহলে বছরখানেকের জন্য নিশ্চিত আয়ু পেতো তাঁর মিডিয়া-হাউসটি। জল নাড়া দেওয়া দরকার মাঝে মাঝে। মতিভ্রম না হলে আজ সমস্ত কর্পোরেট বিশ্বে রাজত্ব করত ভীষ্মবাবু। কিন্তু অকারণ সেন্টু খেয়ে সব শেষ। ধৃত দেখছে দেওয়ালের কোনে ঝুলন্ত মাকড়সা, সঞ্জয়ের ঝাপসা চশমা আনমনা হয়ে যায়।
শুধু তাদের পরিবারের কেচ্ছা নিয়েই একটা চ্যানেল চলতে পারতো, ভাবছে ধৃত। ছেলেগুলো একটাও মানুষ হয়নি। ভাবতে ভাবতে অজান্তেই মোবাইলে প্রভুপাদের নম্বরে ধৃতরাষ্ট্র মণ্ডলের বুড়োটে আঙুল খেলা করতে থাকে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন