কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯


বক্সিং কম্পিটিশন

তুই এভাবে রাজাকে মারলি কেন? জানিস ওর নিচের পাটির দুটো দাঁত নড়ে  গেছে? নাক দিয়ে রক্তও ঝরছিল! মাথা ঘুরে পড়ে গেছিল! না সম্রাট, এটা তুই একেবারেই ঠিক করিসনি। তোর ক্ষমা চাওয়া উচিৎ রাজার কাছে! কথাগুলো  একনাগাড়ে বলে যাচ্ছিল সোমাশ্রী। সম্রাট কোনো কথা বলছিল না। হোয়াটসঅ্যাপ খুলে মেসেজে চোখ বোলাচ্ছিল। সোমাশ্রী এবার রীতিমতো খচে  গিয়ে চিৎকার করে বলল, কীরে, কানে যাচ্ছে না আমার কথা? নিজেকে কী ভাবিস তুই? মাস্তান? খুব বাড় বেড়ে গেছে কিন্তু তোর!

এবার সম্রাটকে মৌনব্রত ভাঙতেই হলো। খুব নিরীহ গলায় বলল, মানে তুই বলতে চাইছিস রাজার নয়, বরং আমার নিচের পাটির দুটো দাঁত নড়ে যাওয়া উচিত ছিল? আমার নাক দিয়ে রক্ত গড়ালে তুই খুশ হতিস?

-মানে? আমি সেকথা বলেছি নাকি?

-না, তা বলিসনি, কিন্তু আমি রাজাকে না মারলে রাজা আমাকে মারত।

সোমাশ্রী আরও রেগে গেল।

-তোদের মারামারি করার দরকার কী ছিল?

-হ্যালো সোমা, এটাকে মারামারি বলে না মাই ডিয়ার! এটা একটা গেম। বক্সিং। সারা বিশ্ব জুড়ে বক্সিং কম্পিটিশন হয়। এর জন্য শরীরে শক্তি আর মনে সাহস থাকতে হয়। আর শিখতে হয় বিভিন্ন কৌশল। আমাদের খেলাটা ছিল ইউনিভার্সিটির ইন্টার কলেজ বক্সিং কম্পিটিশন। মারামারির কোনো সিনই নেই। বুঝলি কিছু?

-আমার বুঝে কাজ নেই। কিন্তু রাজাকে তুই যেভাবে মেরে রক্তাক্ত করে শুইয়ে দিলি, আমি তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না সম্রাট। তুই আসলে রাজাকে শেষ করে দিতে চাইছিস, তাই না?

-নট এট অল! রাজাকে নকআউট করেছি, দ্যাটস অল। হতে পারে, একসময় তুই রাজার প্রেমিকা ছিলিস। রাজার প্রতি তোর দুর্বলতা ছিল। ভালোবাসা ছিল। কিন্তু সে সব তো এখন পাস্ট। আমি পাস্ট নিয়ে ভাবি না। আর তোর সঙ্গে রাজার ব্রেকআপের পর, রাজা তো এমনিতেই হেরে বসে আছে আমার কাছে। পরাজিত রাজাকে অহেতুক মেরে আমি কেন শক্তিক্ষয় করব? বরং রাজার একটা সুযোগ ছিল আমাকে নকআউট করে প্রতিশোধ নেবার। হি লস্ট দ্যাট অপরচুনেটি।

সোমাশ্রী ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, রাজার রক্তাক্ত মুখ তাকে এত বিচলিত করে তুলছে কেন! হ্যাঁ, এটা ঠিক, সে রাজাকে একসময় খুবই ভালোবাসত। রাজার ভালোবাসাতে সে নিজেও আচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু সম্রাট আচমকা এন্ট্রি নেওয়ায় সোমাশ্রীর সব কেমন যেন গন্ডগোল হয়ে গেছিল। কী যে অদ্ভুত আকর্ষণ আছে দুই বক্সার রাজা ও সম্রাটের দোহরা গড়ন আর পেটানো পেশিবহুল শরীরে! সৌম্য মুখশ্রীর সোমাশ্রী একদিকে আঁকড়ে ধরেছিল সম্রাটকে, অন্যদিকে কিছুতেই ছাড়তে চায়নি রাজাকে। রাজা ও সম্রাটের প্রতি ভালোবাসার টানাপড়েনে মনে মনে রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত হতে হতে কোনো এক সময়ে তাকে বেছে নিতে হয়েছিল সম্রাটকেই। অথচ ব্রেকআপের আগে অথবা পরে রাজা যেমন সম্রাটের বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেনি, ঠিক তেমনি সম্রাটও কখনও রাজার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কথা বলেনি।

সোমাশ্রীর খুব আজব লাগে বক্সিংরিং। মারামারি আর গেম বড়ই কনফিউজিং!

 


2 কমেন্টস্: