কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯ |
ছায়া
শেষ ট্রেন বেরিয়ে গেলেই মুণ্ডুটা পাটাতনের ওপর গড়াগড়ি খায়। শেষ ট্রেন থেকে আবছা আলোয় কিছু ক্লান্ত কঙ্কাল বেরিয়ে আসে। পুকুরে পানার মধ্যে থেকে মাথা তোলে দু’ একটা মাছ। পৃথিবীতে ওরাই একমাত্র সুখী।
সুপ্রতিম বিকাশকে খুন করতে চায় আজ রাতে। যে বিকাশ বৈপ্লবিক কবিতা লিখত, সাম্যবাদ আওড়াতো, মুটে মজুরের অধিকারের কথা বলত, সে আজ রাজান্যের চাপরাশি। সে আর চিনতে চায় না বন্ধুকে। আরো অনেক খুন করার কথা ভাবে সুপ্রতিম। যারা তাকে ব্যর্থ মনে করে, যারা ওই শয়ে শয়ে কঙ্কাল তৈরি করেছে। সুপ্রতিম মনে মনে অন্তত গোটা ত্রিশ লোককে সরিয়ে দিয়েছে পৃথিবী থেকে। পৃথিবী মানে যেটুকু ওর এই আলো ছায়ার পরিসর। যেমন ওই ধড়-বিহীন মাথা। চাঁদের কি ছায়া পড়ে! পড়ে মনে হয়, তাই পূর্ণিমার রাতে মুণ্ডটা ভ্যানিশ হয়ে যায়।
একটা খুন সম্পর্কে অনেকটাই ভাবনা আছে। খুনের নানা পদ্ধতি আছে। একটা করলে সহজেই আরো দশটা করা যায়, সে নিয়ে সে ভেবেছে। ওই ঠগ আর জোচ্চোরগুলোর ধড় থেকে মাথা নামিয়ে দিলে পিচ-কালো রক্ত পড়বে। হয়তো একটুকরো দড়ি। নিঃশব্দে শেষ। অনেককে হত্যা করতে হবে। সুপ্রতিম অবশ্য হত্যা নয়, পবিত্র কাজ মনে করে। চারদিক নিস্তব্ধ হলে সাপ গিলে ফেলে ব্যাঙ। গভীর রাতে একটা বিরাট ছায়া পড়ে বাড়ির দেওয়ালে। একটা মানুষের ছায়া। আজ ঘোর অমাবস্যা।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন