কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১


দর্শন মাহাতো আর ভটকু সিং


এইট-ক্লাস পাশ দর্শন মাহাতো বছর পনেরো বয়সে ইট-ভাট্টিতে মজুরের কাজে ঢুকেছিল। লিখতে-পড়তে জানে, তার ওপর বুদ্ধিশুদ্ধি আছে – বছর দুয়েকের মধ্যে সে হয়ে গেল হাজরি-বাবু। বছর দশেক পরে দেখা গেল সে আশেপাশের পাঁচটা ভাট্টির মালিক। আরও দশ বছরে সে এখন পি-ডব্লু-ডির রেজির্স্টাড ঠিকেদার। বাড়ি করেছে, টাকা হয়েছে, এমনকি গাড়িও কিনেছে। এসব মোটামুটি নিঃশব্দে ঘটলেও যেই না রটেছে বিধানসভার ভোটে সে দাঁড়াতে পারে, তার পেছনে লোক লেগে গেল।

দর্শন প্রায় প্রতি রবিবার গাড়িটা স্টেশনে রেখে হাঁটাপথে কোথায় যেন যেত। এখানকার এম-এল-এ বীরুনারায়ণ এই রহস্যটার ওপরই জোর দিল। কোথায় যায় ব্যাটা – দুপুরবেলায় যাচ্ছে যখন পরকীয়া গোছের কিছু হতে পারে। একবার ধরতে পারলে লোকাল টিভি চ্যানেলে একটা ফোন, ব্যাস্ বাকিটা ওরাই করবে। খুব উচ্চাশা গজিয়েছে তোর, দ্যাখাচ্ছি…

গুপ্তচরগিরিতে ভটকুর সুবিধে হলো এ তল্লাটে তাকে কেউ তেমন চেনে না। স্টেশন থেকে হাঁটছে ত হাঁটছেই, আর কত দূর যাবে দর্শন? পা ধরে গেল। হাইওয়ের মোড়ও এসে গেল। সাবধানে নজর রাখতে হবে, দর্শন বোধহয় গ্রামের কোনো বাড়ি-টাড়িতে ঢুকবে। বীরুভাই সেই রকমই আন্দাজ দিয়েছে। বাড়িটা চিনে খবরটা দিয়ে দিতে হবে। ব্যাস, এইটুকু কাজ। শ-পাঁচেক আশা করছে ভটকু।

ও বাবা, এ যে ধাবায় ঢুকল! ভটকু আর কী করে, সেও কোণার দিকে একটা বেঞ্চিতে বসে গেল। পেট চুঁই চুঁই, পকেটও তাই। একশ-দিনের কাজ তার শেষ হয়ে গেছে, সঙ্গে যা আছে তাতে দুটো রুটিও হবে না। এই সব ভাবছে, এমন সময় তার পিঠে একটা হাত পড়ল। দর্শন মাহাতো।

-সেই স্টেশন থেকে দেখছি। বীরু লাগিয়েছে বুঝি তোকে? শোন, কারুর পিছু নেওয়াটা ভালো নয়… তা তোর নামটা কী?

-আজ্ঞে ভটকু সিং।

-হেই দু পেলেট দাল-তড়কা, দু পেলেট গোবি-মটর আর রুটি দাও ত এদিকে।

হাতেনাতে ধরা পড়ে ভটকুর মনটা দমে গিয়েছিল কিন্তু ‘দু-পেলেট’ শুনে প্রাণটা যেন পাখির মত হালকা ঠেকল। বলল – এত পয়সা তোমার, এতটা হেঁটে ধাবায় এলে!

-সে তুই বুঝবি না। খিদের মুখে রুটি খাওয়ার মজাটা নিতে হেঁটে আসি…

ছোট স্টীলের বাটিতে লঙ্কা আর পেঁয়াজ দিয়ে গেল। এত খিদে পেয়েছে যে ভটকু একটা পেঁয়াজের টুকরো মুখে পুরল।

-“কালকে আসিস, দু’একটা কাজের খোঁজ দিয়ে দেবখন…

দূরের রাস্তাটা দেখতে দেখতে দর্শন বলল – ধাবাটা ভাল করে দেখেছিস? কত লোক এখানে আসে তারপর চলে যায়, কেউ থাকে না। রেস্ত থাকলে জমিয়ে খাবি, না থাকলে রুটি আর পেয়াঁজ। তাও ভাল লাগাতে শিখবি। চারপাইতে বসে দেখবি চারিদিকটা। দু-চারটে মানুষজনের সঙ্গে ভাব জমাবি। তারপর ... তারপর আর কি, সময় হলে হাইওয়ে ধরে চলে যাবি সবাই যেমন যায়…

ভটকু ভাবছিল – পয়সা হলেই লোকে একটু বাজে বকে। তবে এখন যেটা বলছে তার আবার কোনো মানেটানে আছে নাকি?

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন