কবিতার কালিমাটি ১১১ |
দাগ
অনেকসময় এটি
অনেক কষ্টের
যে দাগগুলি
দেখা যায় না। তবে
আবার ভাবি এটি
একদিক দিয়ে
ভালোই। তা না
হলে কষ্টগুলি যে
লজ্জা হয়ে জ্বলজ্বল
করতো, আর
আমি বোঝাতে
বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে
যেতাম! কথাগুলি
চাবুকের মতো
আঘাত করে কর্ণকুহরে,
হৃদয়ের
গভীরে, কিন্তু
কোথাও কোনো দাগ
ফেলে না, অথবা
আমরা দেখতে
পাই না; কেবল
হৃদয়টাই একেবারে
প্রান্তে চলে
যায়; খানিক থমকে
দাঁড়ায়, এরপর,
নীরবে ডুবে যায়।
ভালোবাসায় বাঁচি
সবকিছুরই শেষ
আছে, এরকমটি ভেবে শান্ত
ছিলাম সেইদিন।
এরপর অনেক সহস্র
বছর কেটে গেছে;
তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা
তা জানার প্রয়োজন
হয়নি আর।
এক নক্ষত্রের
নিচে, একই সময়ে, একই জল
হাওয়া মাটিতে
বসবাস করেছি, যদিও
দু’প্রান্তে
দু’জন। বেশীরভাগ সময় আমার কাছে
মৃতের মতই ছিলে;
হয়তো তোমার কাছে
আমিও তেমন।
অল্প কিছু সময় শুধু আমাদের
একান্ত নিজের
ছিল; মহাকালের
বিচারে তা কিছুই
নয়, আর তোমার আমার
জীবনের প্রসঙ্গেও
নিতান্তই অল্প,
কিন্তু দুরন্ত,
উদ্দাম, প্রাণে ভরপুর। পাঁজরে আজ
প্রাচীনতার
বাসা আর স্তরীভূত
শিলা। নিটোল
ত্বকের গভীরে খাঁজ কাটে বলিরেখা।
আঁধার হয়ে এলো,
বাকি পথ হয়েছে
ধুসর। কোথাও
যাওয়ার নেই যেন আর, অবধারিত
কিছুর জন্য
অপেক্ষা ছাড়া। পুরনো
রাস্তায় পুরনো
বাড়িটির দরোজা খুলে দাঁড়ায় কেউ।
চেনা হাসি দিয়ে
ডাক দিয়ে বলে, ‘চিনতে
কি পারো?’ ঝলসে
উঠে আলো, কেঁপে ওঠে আমূল
সত্তা। অবকাশ
নেই আর অলস জীবন
কাটাবার, সময়
একটুই বাকি। হিসেব নিকেশ জলে
যাক, দিনান্তে
দু’জনের হাত শূন্য এখন।
ফেলে আসা তীর
ডাক দেয়, বাতাসে কিসের যেন
আমন্ত্রণ! ভেসে
আসে চেনা সুর, বুকে
এক অবাধ্য নড়াচড়া।
চলো যাই আবার মত্ত হই
আনন্দনগরে;
জীবনকে আকন্ঠ করি
পান; চোখে চোখ
রেখে বলি, চলো, স্বপ্ন দেখি আবার!
সবার অগোচরে
ডুবে যাই ন্যায় অন্যায়ের
সীমার বাইরের
ধুসর পটভূমিতে। উড়ে যাক সব বাধার
দরোজা কপাট।
মিলে যাই নিঃসীম শূন্যে,
তুলে ধরি দু’হাত
দিয়ে অসীম ব্রহ্মান্ড। চলো ভালোবাসায়
বাঁচি, হাতে
হাত রেখে দেখি অসম্ভব সব স্বপ্ন।
বিরহ
হাওয়ায় তোমার
কপালে পড়া
চুল যেন একটু
নড়লো। তুমি এখন সহস্র
যোজন দূরে।
তোমার অশরীরি স্বর ভেসে আসে
বাতাসে, চোখ
মুদে ভাবি এই তো
পাশে, হাত বাড়ালেই
ছোঁয়া যাবে হয়তো! তোমার
সেই গলার স্বর,
হাসির সেই চেনা
শব্দ, সেই কথা
বলার সুরে সময় আজো অচঞ্চল।
চোখ মুদি, দেখি
সেই ঘর, ঘরের
কোণে বইগুলি,
সেই টেবিল ল্যাম্প, সেই জানালা,
জানালায় একটুকরো
আকাশ,
তোমার আমার
সেই পৃথিবী; কাকের অলস ডাক,
বাতাসে মাতাল
ঘ্রাণ, আলগোছে
সন্ধে নামা,
মাথার ভিতর নাম না জানা সুর; এখানে
ভালোবাসা নদীর
মতো বয়, আর
সেখানে বাধাহীন
ডুবে যাওয়া। এরপর দু’চোখ মেলে
তাকাই আর বিমুঢ়
হয়ে ভাবি, বদলে
গেছে চারপাশ।
নিরাপত্তা প্রহরীর হুইসেল বেজে উঠে।
এখানে এখন অন্য
আকাশ, তোমার
স্বর ভেসে আসে,
আমায় ছোঁয়, তুমি সবুজ নক্ষত্র হয়ে
মিটমিট ক’রে
জ্বলতে থাকো আর
আমায় হাতছানি
দাও আর ব্যাকুল করো। দিশেহারা
মন ফেরার জন্য
পদচিহ্ন খুঁজে বেড়ায়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন