কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১ |
মাঝনদীর বটবিক্ষ-লতা
রাস্তার ওপাশে ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি
হচ্ছে। আর রাস্তার উল্টোদিকে মজুরদের অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা। দরজা বলতে ময়লা
কাপড়ের পর্দা ঝুলছে আর ইঁট সাজিয়ে তিনটে দেয়াল উপরে উঠে গেছে। কিন্তু পলিথিন চাদর
শুকনো গাছের ডালপালা বিছিয়ে ঘরের চাল তৈরি হয়েছে।
মাঝরাতের অন্ধকারে কুকুরের ঘেউ ঘেউ একটানা আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দরজার পর্দা
সরিয়ে দেখতেই একজন লোক ছুটে পালাচ্ছে নজরে এল। লোকটি চোর নাকি ভালোমানুষ! ভালো করে
চারপাশটা দেখলাম। একপাল কুকুর ঐ লোকটির পেছনে শুধু ছুটছে। দরজাটা মানে পর্দাটা
সরিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। অমাবস্যা রাত। শুধু স্ট্রিট লাইটের আলোয় পা রাখলাম
রাস্তায়।
লোকটা সামনে আসতেই দেখি, এ তো এ পাড়ার মদন মজদুর। সারাদিন বালি
সিমেন্ট ইঁট নিয়ে ব্যস্ত
থাকে সে। আমাকেও মাথায় ইঁট তুলতে
সাহায্য করে। আর এখন রাতের অন্ধকারে বেশ ভালোই দেশি বোতল সেবন করেছে। টলমল পায়ে
কাছে এগিয়ে এল মদন, বলল, ‘চল্, তোর ঘরে নিয়ে চল্, বুলটি’।
আচমকা মদন আমার ঘরে আসার বায়না শুরু করে দিল। কী আপদ!
‘তোমাকে কীসে ভর করল আবার?’
‘বুলটি, তোর জন্য ভেবে ভেবে’
এক প্রকার জোর করে আমার হাত ধরে রাস্তায় ছুটতে থাকল মদন। মাঝ রাতের শুনশান পথে
শ্মশান পৌঁছে গেলাম আমরা। সামনে বয়ে যাচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদী। শ্মশানঘাটে কতক্ষণ আমরা
বসে থাকলাম।
‘জানিস বুলটি, আর কটা দিনই বা বাঁচবো! আমার টিবি হয়েছে রে’
‘মালিকের কাছে দুদিন ছুটি নিয়ে হাসপাতাল যাও। ডাক্তার-বদ্যি করো’
‘চল্, নৌকায় মাঝনদীতে যাই। যাবি?
বুলটি গান গাইতে থাকে সেই গানটা, ‘তুমি হইব বট বিক্ষ আমি হইব লতা/ দু-জনেতে
জইড়ে রইব/ কইব পেমের কথা...’
ময়ূরাক্ষী নদীর ধার ঘেঁসে চলতে চলতে সেই অমাবস্যার অন্ধকারে কিছু স্বপ্ন
ভাঙাগড়ার
মাতাল-আচ্ছন্নতা জড়িয়ে ধরল আমাদের।
মদন আক্ষেপ করল, ‘আর মজদুরি করবো না আমরা। তোকে বিয়ে করবো। একটা মুদির দোকান
দেবো। তুই হিসেব ভালো পারিস। চলে যাবে সংসার...’
সন্ধ্যের পর কাচা জামাকাপড় পড়লে মদনকে বেশ হিরো-হিরো লাগে আমার। যেমনটা হিন্দি
সিনেমায় দেখি।
মদন হিপ পকেট থেকে মোবাইল বের করল। আমাদের দুজনের ক্লোজ সেলফি তুলে ফেসবুকে
পোস্ট করে দিল। বেশ জোরে জোরে খানিক হাসলো সে। ‘আমি থাকতে কোনো গুন্ডা বদমাইশ তোকে
ছুঁতে পারবে না, বুলটি।’
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন