কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

মহাদেবী বর্মা

 

প্রতিবেশী সাহিত্য     

 

মহাদেবী বর্মার কবিতা      

     

(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)  



 

 

পরিচিতি : মহাদেবী বর্মা হিন্দি সাহিত্যের একজন দিকপাল বলা যায়। তিনি এক নতুন ধারা ছায়াবাদী সাহিত্যের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। ২৬ মার্চ তাঁর জন্মদিবস  এবং ১৯৮৭ সালের  ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি সাহিত্য আকাদেমি, পদ্মভূষণ এবং  জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার ছাড়াও আরও বহু সম্মান লাভ করেছিলেন।

 

আমি অবাক হয়ে ভাবি (ম্যায় হয়রাণ হুঁ)

 

আমি অবাক হয়ে ভাবি…  

কোনো নারী কেন আঙুল ওঠায়নি

সে মহান তুলসীদাসের দিকে

যিনি লিখেছিলেন -- ঢোল, মূর্খ,শুদ্র, পশু

ও নারী তাড়ণ-যোগ্য!

আমি অবাক হয়ে ভাবি...

কোনো নারী কেন জ্বালিয়ে দেয়নি মনুসংহিতা

যা তাদের পায়ে পরিয়েছে গোলামির শেকল!

 

আমি অবাক হয়ে ভাবি…  

কোনো নারী কেন ধিক্কার দেয়নি সেই রামকে

যিনি অগ্নিপরীক্ষার পরেও গর্ভবতী স্ত্রীকে

বনবাসে পাঠিয়েছেন!

 

আমি অবাক হয়ে ভাবি…

কোনো নারী কেন নগ্ন করেনি সে কৃষ্ণকে

যিনি স্নানরতা গোপিনীদের বস্ত্র হরণ করতেন!

যিনি  নিজেকে যোগেশ্বর অভিহিত করেও

প্রকাশ্যে ব্রজবালাদের সাথে লীলা রচাতেন।

কোনো নারী কেন তিরস্কার করেনি

সেই সব পুরুষদের -- যারা স্ত্রীকে বস্তু ভেবে

জুয়ার দানে চড়িয়ে দেয়…

যেখানে নপুংসক যোদ্ধাদের মাঝে

চলতে থাকে রজঃস্বলা রমণীর চির-হরণ!

আমি অবাক হয়ে ভাবি --

কোনো নারী কেন আজ পর্যন্ত

বিরোধিতা করেনি সংযুক্তা অথবা

অম্বা-অম্বালিকা হরণের?

 

আমি ভেবে অবাক হই... এতকিছুর পরেও

ওঁদের শ্রদ্ধার সাথে ভগবান মেনে

পুজো করে আমাদেরই মা, বোন, মেয়েরা!

কিন্তু কেন?

আমি অবাক তাদের নীরবতায়।

একে কী বলা যায়? সহ্যশক্তি, অন্ধভক্তি

অথবা মানসিক নির্ভরতার গোলামী!

 

(এই কবিতাটি তাঁর জীবনকালে কোনো  প্রকাশক প্রকাশ করার সাহস  পাননি)

 

যদি তুমি আসতে  একটিবার (যো তুম আতে একবার)

 

...যদি তুমি আসতে একটিবার

কত প্রেম কত কথা হত

পথে পথে  ছড়িয়ে থাকত বন-পরাগ!

মনোবীণার তারে তারে

বেজে উঠতো অনুরাগের পাগল করা রাগ!

 

যদি তুমি  আসতে একটিবার

চোখের জলে ধুয়ে  দিতাম পথ তোমার,

মুহূর্তে  উঠতো হেসে সিক্ত দুটি  চোখ

মুছে যেত ঠোঁট থেকে বিষাদের রেখা,

এতদিনের  অভিমান  ভুলে

ফুটে যেত বসন্তের লাল পলাশ,

যদি তুমি আসতে একটিবার

আমার দুচোখ বলে দিত

দিয়েছি সব করে উজাড়!

 

অধিকার (আধিকার)

 

যে প্রস্ফুটিত ফুল

কখনো ঝরে যায় না--

যে তারার প্রদীপ সদা জাজ্বল্যমান,

সেই  নীল আকাশের ভাসমান মেঘ

যে কখনো ধুয়ে যায় না।

যে অনন্ত বসন্ত সেখানে চিরস্থায়ী!

সে শূন্য চোখ যেখানে ঝরে না

অশ্রুর মুক্তবিন্দু।

যে  প্রাণের সম্ভারে নেই 

বেদনার গভীরতা!

তোমার জগৎ এমনই

যেখানে দুঃখ নেই, নেই অবসাদ

যেখানে জ্বলে যাওয়ার স্বাদ জানা নেই...

জানা নেই চলে যাওয়ার শূন্যতা!

 

এই অমরলোক তোমার করুণায়

পাওয়া যাবে হে ঈশ্বর?  

থাক হে ভগবান থাক...

এখানে যে আমার চলে যাওয়ার

অধিকার আছে!

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন