ঝুরোগল্প |
শেষ চিঠি
আমাদের কোনো পোষা টিয়াপাখি ছিল না। টিয়ার গল্প লিখে সেই
অভাব মিটিয়েছি। আমাদের কোনো পোষা বেড়াল ছিল না। বেড়াল ছিল না তাই বেড়ালের গল্প
লিখেছি। তুমি ন’মাসে ছ’মাসে এলে গল্পটা হাতে নিয়ে তোমার পায়ে পায়ে ঘুরেছি। রান্নাঘর
থেকে বসার ঘর। বসার ঘর থেকে বিছানা।
বিছানার ওপর আধপড়া বই, বাসি খবরের কাগজের টুকরো, পেনের
ঢাকনা, শীষ ভাঙা পেন্সিল, একপাটি মোজা, না লেখা গল্পের খসড়া।
- এতো নোংরা করে
থাকো কী করে?
কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকলাম। - একটু ওঘরে গিয়ে বসো।
এখুনি তো হাঁচি শুরু করবে। পরিষ্কার করে নি। তারপর...
তখন শরৎকাল। জানালা দিয়ে সামনের ফাঁকা জায়গাতে সাদা কাশ।
কয়েক মুহূর্ত পরে ঘরটা চকচকে হয়ে উঠত। শো কেসের মধ্যে তোমার উপহার দেওয়া ফ্রেমে
নিজের ফটো দেখে হেসে উঠলে। - এতোবার বলছি এসো আমাকে বিয়ে করো, তুমি শুনছই না।
আমি থমকালাম। যতই তোমরা আলাদা থাকো, কাগজে কলমে অন্যের বউকে
কীভাবে বিয়ে করা যায় বুঝতে পারি না। তুমি ডিভোর্সে রাজি নও। বললে, যা নেই তা নেই। কিছু
ফালতু কাগজ বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। আর দুজন মানুষের সম্পর্ককে বাজারে হাঁড়ি
পিটিয়ে বলার কোনো মানে হয় না। দুজন জানি সম্পর্ক নেই।
- কাগজগুলো ছাড়া
সভ্যতা কী ভাবে চলবে বুঝতে পারি না।
- কেন করা যাবে
না! বিয়েটা তো তোমার আর আমার নিজেদের ব্যাপার। তখন নিজেকে বোঝাতাম আমরা বিবাহিত।
একটা বাঁধন থাকতো। দুজন জানব সম্পর্ক আছে। গোলোকধাঁধায় ঘুরে বেড়াচ্ছি না। আর যা
নেই তার জন্যে একটা ছেঁড়া কাগজের এতো দাম তোমার কাছে? তোমার আর আমার মধ্যে কোনো
কাগজ থাকবে না। কাগজ ছাড়াই আমাদের সম্পর্ক অসীম ছুঁতে পারে।
এরপর একদিন তুমি মিস্টার চৌধুরীর গল্প করলে। বললে, লোকটা বড়
অসহায়। চাকরীটুকু ছাড়া ওর আর কিছুই নেই। তুমি যেমন পাহাড় না থাকলে আস্ত পাহাড়ের
গল্প লিখে আমাকে পাহাড়ে নিয়ে চলে যাও, তেমনি ও আমাকে পাহাড় কিনে দিতে চায়। আর সেটা
ও পারেও। তবে পাহাড়ের গল্প ও বোঝে না। হাত পা নাক কান চোখ ঠোঁট ছাড়া, শুধুমাত্র মন
দিয়ে ও কিছু অনুভব করতে পারে না।
এসব কথা আর মনে নেই। তবে বুঝলাম যে একটা জ্যান্ত পাহাড় আর একটা
পাহাড়ের গল্প দুটো কখনই এক হতে পারে না। গল্প বুকের ভেতর একটা আবছায়া জাগাতে পারে
মাত্র। অথবা বেদনা। রিসর্ট, ড্রাইভওয়ে, রকিং চেয়ার অথবা সত্যিকারের বসন্তবৌরী কিছুই
সেখানে থাকে না।
শো কেস খুলতে বিশ্রী একটা ড্যাম্প গন্ধ এল।
অনেকদিন হয়ে গেল তুমি আমার বাড়িতে আসো নি। তোমার ফোটোটা
নোংরা হয়ে আছে। সামনে ফেলে রাখা পুরনো টিপের পাতা। একটাই লাল টিপ আছে। সেটা তুলে
কপালে পরাতে গেলে তোমার বিবর্ণ ফটোটা ঝুরঝুর করে গুঁড়ো হয়ে যায়।
ঘরে তোমার কোনো চিহ্নই আর থাকলো না।
আমার নিজের কোনো গল্প নেই । তাই অশোকের গল্পটা পড়ে বুঝবার চেষ্টা করলাম অশোক আর অশোকের গল্পের মধ্যে সম্পর্কটা কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে । সম্পর্কটা চমৎকার !
উত্তরমুছুন