কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়




চোখের পড়াশোনা


(১)

মাছের গভীর পড়ছি
সাঁতার আসছে ভিতরে
জল থেকে ক্রমশ আঁশগন্ধ
মুছে গেলে ভেসে ওঠে
বহুদিন আগে দেখা ভাললাগা
সেই মীন চোখ

(২)

গাছটির গায়ে ছায়া করাতের
পাতায় গতকালের জল
কোথাও দৈব মহিমা নেই
অথচ মেঘের পাথরে লেপা সিঁদুর
ধুয়ে যাচ্ছে না কিছুতেই
গভীরে শিকড়ের কান্না

(৩)

মেঘে মেঘে রামপ্রসাদী পড়ি
ফসলে আবাদের স্বর
জমিনে লিপি তুলছে
তার লিপে জলরঙের স্টিক
প্রতিবিম্ব আঁকছে
এমন যে বেড়া বাঁধছে বালিকা আকাশ
মুক্তকেশীর দিকে অপলক হই
সাদা বলাকার ডানায়
উড়ান সচ্চিদানন্দময়ীর

(৪)

নদীর কাছে মেঘের সিঁড়িঘর 
ঘরোয়া নীল সাদা শাড়িতে
ছাপ পড়েছে পাখিডানার
এক পা তালগাছ 
বেতাল হতে দিচ্ছে না চোখকে
তার মাথা খেয়ে নিলে 
পড়ে থাকে মা লক্ষী 
বীজতলায় 
গান বাজছে ব্যোম ব্যোম 
শিব কামনায় শান্ত অপর্ণা 
সংসার ছড়াচ্ছে বাঁকে বাঁকে

(৫)

অন্ধকারকে পড়ে অন্ধকার
অবাক দেখে এক ফালি চাঁদ
সাঁতার দিচ্ছে রাত্রির পুকুরে
তার পায়ের ডিমের দিকে চেয়ে
নির্লজ্জ মেঘ যতিচিহ্নহীন
খিদে পায় খুব খিদে পায় 
পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে 
বাহির কুকুর
শিকার উল্লাসে সাক্ষী তালগাছ
মাদকতা ছড়াচ্ছে পাড়া
অন্ধ কোরো না বলে বসে আছে
অযুত প্রহর

(৬)

চোখকে বলি নীল বাড়িকে তুলো
সে মেঘলা বিকেলের নদী পাশে
বসিয়ে দেয় 
পোড়ো বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসে
সবুজ শাড়ি 
তার বুকের খবরে পুরো একটা ওয়েব
সিরিজ চরিত্রহীন
শরৎ ফোটায় আগস্ট আকাশে
আর একটা হলুদ রাস্তায়
বৃষ্টির প্রতীক্ষা করি
প্রতীক্ষা আলোয় আসে শেষে
আপেলের দাম কমে যায় কামড়ের পরে

(৭)

এই পথে চটের পর্দা। দামাল বৃষ্টি সহ্য
করে টিনের চাললতা উঠেছে মই বেয়ে 
মেঘের কাছ বরাবর 

রঙচটা ঘররক্তশূন্যতা নিয়ে জ্বলে যাচ্ছে কাঠের চুলা। লাখ টাকার স্বপ্ন
ধুয়ে ধূসর ঘেস

সম্মোহন করা এক বড় মানুষ চলে গেছেন আজ। জমিয়ে কান্না নামছে
শিকড়ে ও মাটিতে
তেমন কিছু না হলেও বুলডোজার আসছে বুঝে নিয়েছে সন্ত্রস্ত পাড়া

(৮)

জল হয়ে গেলে জ্বর আসে রাস্তার
ছাতার গভীরে চলে গেলে মেয়েটি
আওয়াজের ভিতর চটি বাজে
আর ভেসে ওঠে ছবি বন্ধ জানালার
 তার উপর বিষন্ন ঝরে যায় পাতার
 শ্রাবণের ছোঁয়া লাগে একলা চোখে
 আড় চোখে হেসে ওঠে মেফিস্টোফেলিস

(৯)

একা ব্যালকনি তোমায় মাখছে অন্ধকারে। রেশমি শাড়ি আর নেই। ইদানীং বর্ষাকাল অনুপস্থিত। তমার
ভিতর শুশ্রূষা চাইছ তুমি

মিশ্র মেঘটি ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে
চাঁদের চিবুক ছুঁয়ে যায়। যাওয়া একটি
বিষাদের ডাকনাম। মন্দের বাইরে 
তোমার খোলাচুল সুবাসে 

সে কথা রাখে নি তোমার ভাবনার। নারী
পুরনো হলে তুমি ভেঙে পড়ো। পড়তে
পারে না চোখ 

খসে যাচ্ছে তারার অক্ষর অবেলায় আর
মেগা পিক্সেলের সেলফি 


(১০)

অপেক্ষা একটা স্টেশন হয়ে পড়লে চোখ
গাছ পাখি গুনতে গুনতে গুনগুন করে

বেঞ্চির নীচে কুকুরটা ঘুমিয়ে পড়লে 
খোঁড়া ভিখারির খুব চা তেষ্টা পায়

ওভার ব্রিজের কাছাকাছি কদম গাছ
চোখকে ভাবাচ্ছে বর্ষা এসে পড়ল বলে

দুটো রেললাইনের  দূরত্ব মাপছে একটা কাক
ট্রেনের গর্জন ছাপিয়ে প্রাণী মাংস খুঁটছে
দু ডানা

নাপাক একটা চিন্তা ভবঘুরের সঙ্গে শুয়ে
পড়েছে কখন
খোলা বোতামে বাতাসের অশ্লীল শিস


1 কমেন্টস্: