কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

অপরাহ্ণ সুসমিতো




স্বপ্না ম্যাডাম


আমি তখন ক্লাস সেভেন পড়াশুনায় খুবই খারাপ অবশ্য আমি সারাজীবন সব কিছুতেই খারাপ

ক্লাস সেভেনে ৩ খণ্ডের সিরিজ থ্রিলার দু:স্বপ্নের আগে, দু:স্বপ্নের মাঝে ও দু:স্বপ্নের শেষে নামক প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বই হাতে এসে পড়ে

স্বপ্না ম্যাডাম আমাদের ইতিহাস পড়াতেন কিছুই আমার মনে থাকে না তার উপর ক্লাসটা হতো দুপুরে টিফিনের পর চোখ জুড়ে ঢল নামা ঘুম

এর মাঝে একদিন সাহস করে ম্যাডামের উদ্দেশ্যে একটা বিশাল প্রেমপত্র লিখে ফেলেছি মোদ্দাকথা হলো ম্যাডামকে না পেলে আমি বাঁচব না

তো বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া এই  প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১ম ও ২য় খণ্ড পড়া শেষ ৩য় খণ্ড মানে দু:স্বপ্নের শেষেজোগাড় করেছি বইটার কাভার যাতে বাইরে থেকে বোঝা না যায় সেজন্য মলাট লাগিয়ে সাথে করে স্কুলে নিয়ে গিয়েছি মলাটের ভিতরে স্বপ্না ম্যাডামকে লেখা সেই অমর প্রেমপত্র

**

আজ বিকেলে যখন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলাম মেট্রোতে (পাতাল রেল) করে, হঠাৎ খেয়াল করি আমার সামনের সিটে মুখোমুখি বসা সানগ্লাস পরা একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা। তার পাশে একজন তরুণ বয়সের স্মার্ট মেয়ে বসে আছে। বয়স্কা ভদ্রমহিলার মুখটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। সাহস করে নিজের সিট থেকে উঠে এসে ভদ্রমহিলার সামনে এসে বললাম;
: আপনি কি বাংলাদেশের?
 তরুণী খানিকটা বিরক্ত হলো। ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকানোর ভঙ্গি করে মাথা নাড়লেন। সানগ্লাস পরা বলে চোখটা ঠাহর করতে পারছিলাম না। বলেই ফেললাম;
: আপনি কি স্বপ্না ম্যাডাম? এন জি এফ এফ স্কুল?
ভদ্রমহিলা দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন। পারলেন না। আমি ভদ্রমহিলার শীর্ণ হাতখানি ধরে পরম যত্নে আবার সিটে বসিয়ে দিলাম।

মেট্রো চলছে বুলেটের গতিতে। দুজনের সিটে ওনারা বসে। আমি ভদ্রমহিলার সামনে হাঁটু মুড়ে বসলাম। বাইরের দেশে এই এক সুবিধা ভীষণ রকম অস্বাভাবিক দৃশ্য না হলে কেউ ফিরে তাকায় না।

আমি শিশুর মতো ম্যাডামের হাঁটু ধরে হাঁটু মুড়ে বসে থাকলাম। আস্তে আস্তে ম্যাডামাকে আমার নাম ধাম সব বললাম। উনি চিনতে পারলেন না।
আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। একসময় খেয়াল করি নিজে নিজে বিড়বিড় করছি।
ম্যাডামের চোখ ঢাকা চশমায় বলে বুঝতে পারছিলাম না। এটা বুঝতে পেরেছি যে কালো চশমার ফাঁক গলে মৃদু আর্দ্র আভা।

পাশের তরুণীটি এবার কথা বলে ওঠে।
: আমার দিদু। চোখে দেখতে পান না। আমার বাবা মা এই শহরেই...
আমি চলন্ত মেট্রোতে বসেও যেন চলে যাই সেই দুরন্ত সেভেন। সেই ঘুম ঘুম ক্লাশরুম। ফিস ফিস করে বলতে থাকি;
: ম্যাডাম আমি সেই দু:স্বপ্নের শেষে, একটা প্রেমপত্র লিখেছিলাম...
ম্যাডাম কেন যেন ডুকরে ওঠেন। পরম মমতায় আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকেন,  যেন কোন মা-পাখি তার শাবককে ছুঁয়ে দিচ্ছে!

ফরাসি সুরভিত এই শহরে ঐ শীর্ণ হাতদুখানি আমার কাছে চাল ধোয়া হাতের মতো স্নিগ্ধ মনে হলো।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন