কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯

মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ




সহজ যে অংক

তিসি ক্ষেতের সীমানায় মিশে আছে
বিবশ এক মেয়ে, কালো মেঘের মতো।
তার চোখের পলকে জমা হয়ে যাচ্ছে 
জন্ম মৃত্যুর অমোঘ বৃষ্টিদিন। 
সূর্যাস্ত বলছে অনেকক্ষণ আগেই মৃত্যু হয়েছে তার।
রাইগরমর্টিসে কেঁপে উঠছে শরীর শেষবারের মতো। 
তবু এখনো নক্ষত্র চমকায় তার নীলাভ গ্রীবার হারে। 
শুয়ে আছে নিঝুম রাতটি মেখে সারা শরীরে। 
যেন এই আকাশ, বাতাস, মাটি আর তার নয়। 
শুধু নদীটুকুর অশ্রুই যাপিত হয়েছে এই মেয়ের। 
এখানে আসার আগে হলুদ খাতায় লিখেছিলো সে
একটি আশ্চর্য টিয়াবনের জ্যামিতির কথা ও আলোর ইতিহাস। 
একটি সহজ অংক কষতে দিয়েছিলো সে
ধ্রুব নামের ছাত্রটিকে, হিসেব মেলেনি।
ধ্রুব নামের নবম শ্রেণীর ধর্ষক ছেলেটি কি আদৌ তার 
ছাত্র ছিলো? 
মৃত্যু তাকে আর কিছুই ভাবতে দেয়না।
স্বর্গীয় এক নদীর জলে স্নান করছে ধ্রুব। 
কি অলৌকিক ভাবে তিল গণ্ডুষে ধুয়ে যাচ্ছে তার পুরুষত্ব।


প্রাণের খোঁজে


এই শহর ছেড়ে পালাবে বলে 
দুটি ছেলেমেয়ে বসে আছে দুরন্ত এক্সপ্রেসে। 
শহরটির সব রাস্তায় ঝলমলে আলো বসবে। 
কাল তাই সব পৌরাণিক সবুজ সাফ করা হয়েছে। 
ট্রেনটির রঙ ঘন সবুজ। 
যেন একটুকরো অরণ্য উঠে এসেছে কম্পার্টমেন্টে। অথবা এমনি করেও বলা যেতে পারে
দুরন্ত গতিতে সবুজেরা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
তবে কি খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছে ছেলেমেয়ে দুটো?
যে শহরে তাদের বাস, তার কাঁধ ছুঁয়ে বয়ে যায়না কোনও নদী আর। 
এ দুটি ছেলেমেয়ের শরীরে জল ছাড়া আর কোনও
আকাঙ্ক্ষা এখন বেঁচে নেই। 
অথচ একদিন বিবাহ ছিলো। 
কতোদিন ওরা শরীরে মাখেনি গোধূলির পরাগ 
রাত আসার আগে।
নীচু স্বরে জলের রূপকথা বলছে ছেলেটি, 
অচিনপুরে মিনারেল ওয়াটারের বোতলে আটকে আছে চিল্কা হ্রদের প্রাণ।


প্রিয় শরীর

এক ঝুটো বর্ষার রাতে
শরীর ছেড়ে চলে গেলো জলপরী। 
পাখনা দু'টো গুছিয়ে রাখা ছিলো আকাশের কাছে। 
কথা ছিলো আদিম ট্রেনে করে যাবে নক্ষত্র সাজাতে। 
জম্বুদ্বীপে রত্নসাগরের জলে টগবগ করে ফোটাবে ভাত।
গরম বাষ্পে মুছবে মেডুসার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি,সর্পিল কেশ।
হাতের মুঠোয় বেজে উঠবে মশলায় ম্যারিনেট করা শম্বুক মাংস,
মরুভূমিতে ছড়িয়ে দেবে অবাক জলপানের গাছ।
এসব কিছুই তার মেঘ স্বপ্ন ছিলো, লিবিডোয় মাখো মাখো। 
কিন্তু যে রাতে এলাচের বনে উঠলো ঝড়, 
নাভিমূল থেকে নেকড়েরা তুলে নিলো পদ্মের ভ্রুণ। 
হাজার হাজার ফোঁটা অন্ধকার গিলে খেলো তাকে। 
এমনি বৃষ্টিমুখর রাতে কেঁপে উঠলো ঘোড়ার কেশর। 
ফুলের ছায়া পিছনে ফেলে ছুটলো সে, 
মায়াঘরে পড়ে রইলো সবুজের অভিমান, প্রিয় শরীর।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন