গোপন
সভা থেকে ফিরেছি, বক্তব্যের বিষয় ছিল, গোপনীয়তার নেই মালিকানা! ‘পোড়ামুখী ঘন্টি তুই আমার এত ক্ষতি করলি, আমি তোর ক'জন্মের শত্তুর ছিলুম রে...!’ মা চিল চিৎকার করে চলেছেন। বাবার মৃত্যুদিন, ছবিতে মালা দিতে গিয়ে হঠাৎ চিৎকারটা মনে পড়ল, আর ছিটকে সরে এলাম!
বাবার দূর সম্পর্কের বোন! ঘন্টি। ঘন্টি পিসির সাথে আমাদের তেমন যোগ ছিল না। লুকনো তিলের মতই ছিলো ঘন্টি পিসির অবস্থান। আমরা তেমন উৎসুকও ছিলাম না। দু’এক মাস অন্তর আসতো-যেত, একবেলা খেতো কী খেতো না। বাবা বোধহয় লুকিয়ে অল্পটাকা দিতেন। মা গজগজ করতেন! পরে শুনতাম চলে গেছে। মা’কে জিজ্ঞেস করলে মা বলতেন, ‘যাও পড়তে বসো গিয়ে!’ বাবাকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, বনগাঁর ওদিকে কোথাও থাকেন। আগে থাকতেন ওপারে, তারপর '৭১এ বর্ডার পেরিয়ে...
ছেলেমেয়ে কে আছে, স্বামী আছে কি নেই, কিছুই জানতাম না। জানার উপায়ই বা কই! আর আমাদের তো তখন বড় হবার সময়... মা ঠেলছে সারাটাক্ষণ, যেন ভেড়ার পাল... টিভি দেখতে দেয় না, খবরের কাগজ পড়তে দেয় না, গল্পের বই ছুঁতে দেয় না, এ কেমন বড় হওয়া জানতে চাইলে বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলেন, ‘আসলে কেউ বড় হয় না, বড়র মতো দেখায়’। বুঝিনি! আর অত বোঝার সময়ই বা কই! দিদি ইউনিভার্সিটিতে গেল, আমি কলেজ, অভাব নেই, স্বচ্ছলতাও নেই, কেটে যায়, যেমন আর সবার কাটে! শরিকি বাড়ি বিক্রি করে চলে এলাম টালিগঞ্জের কলোনি পাড়ায়! আর তেমন কিছু জানিও না। বাবা অবশ্য সব কিছু থেকেই অনেকটা দূর...
কলোনি পাড়ার সুখ অবশ্য বেশিদিন সহ্য হয়নি। বাবা এম জি রোডে গাড়ি চাপা পড়ে চলে যান
দু’দিনের লড়াইয়ের পর। শোনা কথা, অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিলেন, গাড়ি চালকের তেমন দোষ নেই!
সভায় বলছিলাম, প্রকৃত গোপন বলে আদতে কিছুই হয় না। বাবার ছবিতে মালাটা পরিয়ে দিলাম! মা’র চিৎকার মনে পড়ছে, বাবা মারা যাবার পর, ‘পোড়ামুখী ঘন্টি তুই আমার এত ক্ষতি করলি, আমি তোর ক'জন্মের শত্তুর ছিলুম রে...!’
বাবাকে তেমন চিনিনি কখনও।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন