কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

অশোক তাঁতী




আঁধি নেই  


বারান্দায় একটা প্লাস্টিক চেয়ারে তুমি বসে। বিকেলের রোদ পায়ের কাছ থেকে একটু একটু করে মুখে এসে স্থির। চলে যাবার আগে যেন একবার দেখে নিতে চাইছে। এতোটা আলোতে চিবুকের নীচের চামড়া, চোখের নীচের বলিরেখা অস্পষ্ট হয়ে যায়। গনগনে আগুনের মতো মনের ভেতরটা, ঝলসে যায়। তুমি তাও বসে রইলে। দূর আরাবল্লি থেকে যে আঁধি আশার কথা সেটা এখনও এসে পৌঁছায় নি। তাও তোমার চোখ অনুচ্চকিত শুকনো।

সকালে স্নানের পর নিজেকে তুমি সুন্দর করে সাজাতে ভালোবাস। ঠোঁটটাকে গোলাপি, চোখের নীচে একটা সবুজ আইলাইনার। একটা ছোট্ট সবুজটিপ। কেউই বোঝে নি ইদানিং তুমি সবুজ রঙটাকে খুব পছন্দ করছ। রাস্তায় সবুজ গাছ আছে। অনেকটা হেঁটে। অতদূর হাঁটতে ইচ্ছে করে না তোমার। একটা গাছের জন্যে হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে তিনতলা থেকে নেমে পার্ক যেতে হবে। এরপর রোদ্দুরে বিকট চলমান ট্রাফিকের ভেতর হেঁটে হলুদ সোঁদালগাছ।

কয়েকবার তুমি গেছ, ঐ গাছের নীচে। একা। রবি ঠাকুরের গান গেয়েছ। একা চোখ ভিজে গেছে। এখন তুমি শব্দহীন হয়ে আছো। কোলের মোবাইলটা একবার বেজে উঠতে একবার চমকে ম্যাসেজটা দেখলে। ‘রিচার্জ করুন আমাজনের মাধ্যমে  আর পেয়ে যান পুরো ৩৫ টাকা ক্যাশব্যাক। প্রথম গ্রাহক অতিরিক্ত ৩০ টাকা পেয়ে যাবে’রাস্তায় কিছু নিরেট শব্দ বেজে উঠলে তুমি আকাশ দেখতে চাইলে।

মাঝে মাঝে আকাশে হলুদ রঙের চাঁদ ওঠে। তুমি জানো দ্বিতীয়ার চাঁদ আমার বুকের ভেতর ঝড় তোলে। তারপর সমস্ত রাত্রি ধরে তোমাকে পাবার বাসনা। আকাশের দিকে তাই তাকিয়ে থাকলে স্থির চোখে। চাঁদ নেই।    

একটা অন্ধকার নেমে আসছে আকাশ থেকে। আমার মুখের ওপর তোমার চুলের অন্ধকার নেমে এলে যেমন আনন্দ, ভালো লাগা পেয়েছে এতকাল, না দেখার মাঝে  একটা অনুভব জেগে ওঠেছে, তেমন না। কৃষ্ণলাল আকাশ পেরিয়ে জেগে ওঠা অন্ধকারটা নিরেট অন্ধকার। সেই অন্ধকার আকাশ এগিয়ে আসে তোমার চোখের তারার ভেতর। তারা নেই। তার মাঝে আমিও কোথাও নেই। 

আরাবল্লির আঁধিটা কত দূর, বোঝা যাচ্ছে না!   

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন