নরক
বাতাসে তীব্র তাত, তাতে তপ্ত খোলার বালু। কারখানার
মাথার ওপর আকাশ বিদঘুটে ধন্দ্-লাগানো।
ওয়াগান থেকে কুঁচো লোহা খালাস করছে একঝাঁক মানুষ।
মাত্র নেংটি পরা, উদোম শরীর, নাংগা পা। তপ্ত ওয়াগানের ওপর দাঁড়াতে পারছে না।
এক্কা-দোক্কা খেলার মতো নেচে নেচে কাজ করছে। পাশেই স্ল্যাগ-বাকেটে সেঁধানো ক্রেনের
হুক। পাত্রে টগবগ করে ফুটছে ধাতুমল। রেলইঞ্জিন এসে টেনে নিয়ে যাবে
স্ল্যাগ-ইয়ার্ডে। সুবিমল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর ভাবে, দৃশ্যটা যেন বা ছবিতে দেখা
নরক বুঝি! পাপী-তাপীদের এই তপ্ত লোহার পাত্রে চুবানো হবে। জল্লাদ শুধোবে – ‘তুই
কৌন ছে?’ ভীত ত্রস্ত কন্ঠের আওয়াজ শোনা যাবে – ‘আ-জী রামশরণ-‘। আবার প্রশ্ন আসবে –
‘কৌন রামশরণ? ঝাঁঝাঁ লখনপুরা কা? শাদি কী? রাখেল ভি রাখে থী? বাচ্চা হুয়া থা?
রাখেল কা বাচ্চা? অঁয়, বড্ডা চুনা লাগায়া তু নে। তেরে কো জ্বলতা ধাতুমলমে চুবানা পড়েগা’-
ধা ধা রোদ্দুরে ঠিকাদার আসে। দমের চোখ লাল। অবিকল
জল্লাদের মতো। এসেই হুংকার দেয় – ‘ইয়্যে হারামখোর – জলদি করনা!’ হিক্কা তুলতে
তুলতে একজন বলে – ‘মালিক! পানি পিয়েঙ্গা’-
-‘কাজ হলো না, জল খাবি? শ্লা, মস্তি করতে এসেছিস?
ফকরামি করিস না! হাত চালা – এক্ষুনি দুসরা
গাড়ি এসে যাবে’।
লোকগুলো তপ্ত ওয়াগানের ওপর দাঁড়াতে পারে না। নটরাজের
মতো নেত্য করে। তৃষ্ণায় জিভ চাটে। জলটাংকির দিকে তাকায়। ‘উস্স্ উস্স্’ শব্দ
করে। ‘ভুঁউউ’ বাজে। কুঁচো লোহা নিয়ে আর একঝাঁক ওয়াগান এসে দাঁড়ায় স্ক্র্যাপ
ইয়ার্ডে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন