নির্দোষ মিথ্যে
গীতশ্রী
সকালে ঘুম থেকে উঠে পায়ের দিকে থাকা আয়নায় হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন। কোথাও তার স্বপ্নে দেখা যৌবন খুঁজে পেলেন
না। ঝোলা স্তন এলোমেলো
হয়ে আছে নাইটির ভিতরে। ডাক
বিভাগের কর্মী গীতশ্রী অবসর নেবার পর রোজ ভোরে উঠে স্নিকার্স পরে হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন। চন্ডী ঘোষ রোডের ধারে অন্য পাড়ায় মূর
এভিনিউ থেকে আসেন অমিতাভ মিত্র আর সমীরণ দাশ। অমিতাভ ডব্লু বিসিএস অফিসার ছিলেন আর
সমীরণ আই টি বিভাগের পিওন। দুজনেরি
বয়স সত্তরের আশেপাশে। হাঁটতে
হাঁটতে বন্ধুত্ব। আরো অনেকে থাকেন। শেষে চা-ও খাওয়া হয়। এইসব যোগাযোগের ফলে কে কোন নার্সিংহোমে হাঁটুর অপারেশন করালেন আর মিউচুয়াল
ফান্ডে বিনিয়োগ করলেন এসব উপকারী আলোচনা প্রচুর হয়। কেউ কোনোদিন কারো বাড়িতেই যান নি। আসল ব্যাপার হল গীতশ্রীর দেখা স্বপ্নটা। বন্ধু দুজনেই রোগা ফর্সা। শুধু অমিতাভ বেশ কিছুটা লম্বা।
কী
একটা উৎসব উপলক্ষ্যে অমিতাভ নিমন্ত্রণ করেছেন গীতশ্রীকে। গীতশ্রীর কপালে ছবি আঁকা টিপ। পোড়ামাটির গয়না পরা। বাংলার তন্তুজ শাড়ি। তার এলানো আঁচল। সেই কমবয়সী চলাফেরা। অমিতাভের বাড়িভরা বই আর বই। কী কঠিন কঠিন নাম আর ধ্রুপদী পরিবেশ। যেন বৃটিশ লাইব্রেরির একটা টুকরো এখানে উঠে এসেছে। অমিতাভ তাকে বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। আর দেয়ালে বাঁধানো বই পাঠরত অমিতাভের
ছবি। গীতশ্রী ছাত্রীসুলভ
প্রণাম করতে যান। হঠাৎ গীতশ্রীর মনে পড়ে যায়
সমীরণের মেয়েকে পড়াতে যেতে হবে। পথে
পড়ল বালি আর বরফ। বালি
আর বরফ হাঙরের মতো দ্রুতগতিতে ভেঙে ফেলছেন। মনে
হচ্ছে যেন চতুর্দশপদী ছন্দের গতি তাকে পেয়ে বসেছে। মাত্র পাঁচ বছর বয়স মেয়েটার। আর সে গীতশ্রীরই নাতনি। কিন্তু কেউ কাউকে চিনতে পারছে না। গীতশ্রী সমীরণকে খুঁজছেন। কিন্তু এলেন যুবক অমিতাভ। চোখে গগলস। কালো গোঁফদাড়িময় মুখ। পরনে সমীরণের সমুদ্র সৈকত প্রিন্টের
পাঞ্জাবি। এমন কী সমীরণের
নীল রোটোম্যাক পেনটা যথাস্থানে আছে। ওরা
একে অন্যের দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে হেসেই
চলেছেন। বাচ্চা মেয়েটা
এসে দুজনের হাত ধরে। হঠাৎ
ওরা দুজনে দৌড়াতে শুরু করেন। গন্তব্য
সরোবরের পার্ক গীতশ্রী ভাবছেন। আবার
বুঝতে পারছেন, অমিতাভ ভাবছেন গীতশ্রীকে তার বাড়িতেই নিয়ে যেতে হবে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন