প্রাচীন যুগে রূপকথা
সৌন্দর্যের
সংজ্ঞা যুগে যুগে বদলাচ্ছে তা আমরা আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারি। আজকের দিনে সবাই যেখানে ‘স্লিম ফিগার’-এর দিকে ঝুঁকছে, সেখানে
অতীত হাতড়ালে আমরা দেখতে পাই চীনে ট্যাং বা তাং রাজবংশের শাসনকালে ব্যাপারটা ছিল ঠিক
উল্টো। তখন স্থূলকায়, গোলগাল মুখ, লম্বা গাল এবং প্রশস্ত কপালের মেয়েদেরই সুন্দর
বলে বিবেচনা করা হত। সুন্দর
বা সুন্দরী কাকে বলব, মানে সৌন্দর্যের ভিত্তিটা কী?
বাহ্যিক সৌন্দর্য বলতে আমরা বুঝি ত্বক, চুল,
দাঁত, নখ ইত্যাদি ইত্যাদি। অতীতে সুন্দর মানে আমাদের ধারণা ছিল
লম্বা একঢাল কালো কেশ আর গোল মুখ। লম্বা
কেশে নানা গন্ধের সুগন্ধী তেল দিয়ে পরিচর্যা করা হত অতীতে। অতীতে পুরুষরাও লম্বা কেশ রাখা পছন্দ
করতেন।
বিভিন্ন যুগে রাজারা
নানা অলংকার দিয়ে সুসজ্জিত করত তাদের কেশ।
চুল
সৌন্দর্যের বড় একটি বিষয়। মধ্যযুগের
বিভিন্ন চিত্রকর্মে মহিলাদের যেসব ছবি আমরা দেখি, তার সঙ্গে আমাদের
বর্তমান সমাজের মেয়েদের সাজসজ্জার বেশ বড় একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রকৃতপক্ষে তখনকার সময়ে নিজের কপালকে
স্বাভাবিকের চেয়ে আরো বড় এবং কিছুটা বাঁকানো রূপে দেখানোই ছিল সৌন্দর্যের পরিচায়ক। সেজন্য তাদের অনেকেই সামনের দিকের কিছু
কেশ কাটা কিংবা তুলে ফেলার মতো কাজটি করত। পরবর্তীকালে
কেশ বাঁধাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানা কলাকৌশল। পুরনো এক প্রবাদবাক্য আছে ‘মেয়েদের
কেশেতেই বেশ’। বিভিন্ন ধরনের
খোপা তাতে ফুলের ব্যবহার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে বারবার। চুলকে ফাঁপিয়ে বিভিন্ন ধরনের খোপা যেমন - হাতখোপা, বলখোপা ইত্যাদি প্রচলন ছিল। খোপার মধ্যে ছিল নানা রকমের কাঁটার ব্যবহার। এই কাঁটা সোনা, রূপা, বিভিন্ন ধাতুর হয়ে থাকে। কাঁটার উপর প্রান্তে নানা রকমের নকসা
করা থাকত। কেশে ব্রোচ লাগানোটাও ছিল ফ্যাশান
তখনকার দিনে। ব্রোচের মধ্যে
উঠে আসত প্রাচীন ভাস্কর্য, যা কিনা পুরাতন শিল্পকলাকে মনে করায়।
সে
সময় যে সমস্ত নারীদের কেশের দৈর্ঘ্য তুলনায় ছোট ছিল, তাদের নকল কেশ দিয়ে গুছি ব্যবহার করতে দেখা যেত। সে সময় মেয়েরা উঠে যাওয়া কেশ জমাত। আর জমিয়ে জমিয়ে সেগুলো দিয়ে নানা
রকম খোপা বানানো হত। কম বয়েসি মেয়েরা
লম্বা বেণী বাঁধত নানা রঙের ফিতে দিয়ে। এই
ফিতের ব্যবহারে তারতম্য দেখা যায়। বয়সের
ভিত্তিতে ফিতের রঙ স্থির হত। সেই
সময়ের মেয়েরা উৎসব মরসুমে মাথায় ফুল লাগাতো। সেই ফুল নির্ভর করত মূলত ঋতুর ভিত্তিতে। যে ঋতুতে যে ফুল পাওয়া যেত সেই ফুল
তারা ব্যবহার করত। রবিঠাকুরের
কিছু লাইন মনে পড়ল-
“লজ্জা
দিয়ে,
সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ, তোমারে দুর্লভ করি করেছে গোপন। পড়েছে তমার 'পরে প্রদীপ্ত... পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ! আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা”
কেশসজ্জা
ছিল সে কালের নারীর মূল অলংকার। আবার
যদি আরো প্রাচীন যুগের কথা চিন্তা করি তাহলে
দেখা যায় করালবদনা কালী মূর্তির প্রধান আকর্ষণ কিন্তু খোলা কেশ। যুগ যুগান্তর ধরে সেই মূর্তি আমরা দেখে
আসছি। বিভিন্ন দেবীমূর্তিতে
সুসজ্জিত কেশ দেখা যায়।
(ক্রমশঃ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন