স্পর্শসুখ
এহ... আজ বড্ড রাত্তির হই গেল গো! ঘরে যেয়ে আবার
গুচ্ছের কাজ... গু-মুত সাফ করে শালা শেষ
হয়ে গেলুম... কোত্থাও যেতে পারি নে... একবেলা শান্তি করে খেতে পারি নে... পোড়াকপাল
আমার! জন্মে ইস্তক জীবনডা নরক করে দিলে -- আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে
রতন তাড়াতাড়ি পা চালায়।
বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে শিমুল, রতনের বউয়ের পেটে এসেছিল। জন্মের ক’মাস পর বুঝলো, এ মেয়ের দোষ আছে। ঘাড় সোজা হয় না, মুখ দিয়ে নাল গড়ায়, বসতে পারে না, দাঁড়াতে পারে না,
কথার বদলে শুধু গোঙানি... সবাই বললো, এ মেয়ে তোর বেশিদিন বাঁচবে না রে রতন! কিন্তু সে আর হলো কই! বরং সাধাসিধে বউটা পরের বছর তিন দিনের জ্বরে মারা
পড়ল। সেই থেকে রতন একা সংসার টানে। হাবাগোবা মেয়েটার সামনে জল, মুড়ি, চিড়ে-বাতাসা,
ডাল-ভাত যেমন পারে একথালা ফেলে রেখে
ঝুপড়ি তালা বন্ধ করে ভোর ভোর রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত।
এসে সারা মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ভাত,
মুড়ি, হিসি পরিষ্কার
করতে আর শরীরে দেয় না। ঘরে বসে বসে মেয়েটা চ্যাঁচ্যায়, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, দেওয়ালে মাথা ঠোকে,
হাত পা কামড়ায়, কপাল চাপড়ে কাঁদে। বয়স বাড়ছে, ভরন্ত
শরীর, থেকে থেকে আয়নায় নিজের বুক পেট দ্যাখে। রতন কষ্ট পায়, বড্ড অসহায় লাগে তখন।
স্কাইলাইন হাউসিং-এর দাদাবাবু বহুবার বলেছে, বিয়ে-থা
করে আবার সংসার করতে পারতিস রে রতন! ওই সোমত্ত মেয়ে নিয়ে তুই ক’দ্দিন এমনি করে
চালাবি? রতন শার্টের
খুঁটে চোখের জল মুছে বলেছিল, তা হয়নি গো দাদা, নতুন যে
আসবে সে কি আমার ওই মা মরা মেয়েডারে নিজের
মেয়ে ভেবি যত্ন আত্তি করবে? তার’চে
বরং যা চলছে চলুক...
স্টেশন রোড ছাড়িয়ে মিনিট দু’একের হাঁটাপথ পেরোলেই
শাহপুরের বস্তি। বুড়ো বটতলা থেকে এগিয়ে লাইনের শেষ ঘরখানা রতনের। ঘরে ঢুকতে গিয়ে
রতন চমকে উঠল। আজ কি ঘরে তালা দিতি ভুল হই গেছে! দোরখান ভেজানো কেনে! কী সব্বনাশ... ভিতর
থেকে আসা ফিসফিসে আওয়াজ,
গোঙানির শব্দ... তড়িঘড়ি দরজা ঠেলে
ঘরে ঢুকতেই... শালা হারামি... ফটিক!
মাদুরে পড়ে থাকা শিমুলের উলঙ্গ ঘামেভেজা
শরীরটা ছেড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কোনোরকমে প্যান্টখানা তুলে পালাতে যেতেই ফটিককে রতন জাপটে ধরে ফেলল।
রোদেপোড়া রিক্সাটানা পেটানো চেহারার রতনের গায়ে তখন বনমানুষের মত বল... খানকী
মাগীর ব্যাটা, আজ তোর লাশ
ফেলি দোব... শালা... জানোয়ার!
চুলের মুঠি ধরে এলোপাথাড়ি কিল চড়
মেরে হাতের কাছে পড়ে থাকা কলাইয়ের থালাখানা ঘুরিয়ে সোজা মাথায়... আচমকা সামলাতে না
পেরে ফটিক মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। হতভম্ব রতনের তারপর আর কোনো হুঁশ নেই।
ঘোর কাটল যখন তখন প্রায় শেষরাত। অন্ধকারে
চোখ সয়ে যেতে রতন অবাক হয়ে দেখল,
চাপ চাপ রক্ত আর আঁশটে গন্ধমাখা
সাড়হীন ফটিকের শরীরটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে মেয়েটা
কুঁকড়ে শুয়ে রয়েছে। বাড়ন্ত গড়ন, কাঁথা জড়ানো শুকনো চেহারা, উস্কোখুস্কো জটওয়ালা চুল। পুরুষমানুষের নোনাস্বাদ মাখানো শিমুলের
সদ্য জেগে ওঠা শরীরখানা ঠেলে,
কেমন যেন এক সব হারানোর কান্না, বুকফাটা গোঙানির আওয়াজ, রাতের অন্ধকার চিরে স্পষ্ট
শোনা যাচ্ছিল।
ছুঁয়ে যায়...
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ নেবেন
উত্তরমুছুন