কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

১০) ঝর্না বিশ্বাস


অন্য মা

(১)

সেদিন একটা খবরে চোখ আটকায়। একসাথে এতগুলো টাকা! আব্বার পুরনো অসুখ, ভাইয়ের ইস্কুলেও মাইনে বাকি।
তসনিম এ সুযোগ হারাতে চায় না। কাগজে দেওয়া বিজ্ঞাপনটা ওর বয়সের সাথে মিল খায়।  
পাড়ার নঈম বেশ ক-বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি। তাই এক বিকেলে খানচাচা  রিস্তা নিয়ে আসে। তিন তালাকের বর... ছেলেমেয়েও কজন... তসনিম এ বিয়েতে  রাজি হয়ে যায়।
এরপর একদিন নঈমদের শান বাঁধানো পুকুরঘাটের পাশ ধরে ওর পালকি ছুটে চলে হেঁইয়া-হেঁইয়া...

(২)

তখন ঈদের ছুটি। তসনিমদের চায়ের দোকানে অফিসপাড়ার বাবুদের ভিড়।   সারোগেসির খবরটা নিয়ে শোরগোল চলছে। এলেক্স নাকি মা হতে পারবে না, তাই কমবয়সী কেউ...
তসনিমের টাকা চাই আর এলেক্স চায় বাচ্চা, এ সুযোগ কিছুতেই হারানো যায় না।  কিন্তু কোনো হোটেলে ওরা খোঁজ নিতে ফকির সাহেবকে একবার ফোনে পাওয়া  দরকার।

(৩)

ঘরে ছেলেটার দুদিন ধরে জ্বর। সারাদিন কিছু মুখে দেয়নি। রাতে তাই দুধে চিনি  গোলায় তসনিম আর তখনই পাশের ঘরে মিঞার ডাক
– আইসো...
তসনিম ইশারা বুঝলেও গতি হারায়। মিঞার রাগ হয়, পাশবালিশখানা ছুঁড়ে ফেলে   মাটিতে। ছেলেটা তা দেখে কেঁদে ওঠে... আম্মি!
তসনিম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমপাড়ানি গায়।

(৪)

মিঞাসাবের মাস্টারিতে পয়সা আর তসনিমের কিছু সেলাই ফোঁড়াই। এছাড়া কারো   বাড়িতে বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে ফিরনি পুলাও রেঁধেও ওর দু’এক পয়সা আসে। ভাই এসে থাকে মাঝে মাঝে। আব্বা যদিও বারণ করে, আপার শ্বশুরভিটা, অত ঘন ঘন যাস ক্যান? ভাই শোনে না। এলেক্সের অতগুলো টাকা তাই কিছুতেই ছাড়ান দেওয়া যায় না।

(৫)

রাতে উনুন জ্বলে। গলগলিয়ে আঁচ ওঠে ওপরে। মাপা চালের ভাত ফোটে ওতে  টগবগ টগবগ।  
দাওয়ায় ছেলেকে ইংরাজি পড়ায় তসনিম... এ তে এরোপ্লেন / বি তে বল... চার ক্লাসের পড়াশোনায় এর বেশি আর এগোনো হয়নি তসনিমের। কিন্তু ছেলেটাকে তো  মানুষ করতে হবে!
তাই কাল যে করেই হোক ফকিরসাবের সাথে একবার কথা বলতে হবে।

(৬)

স্কুল পেরিয়েই ময়নাবাজার। খালার বাড়ি যাব বলে তসনিম বেরিয়ে পরে। মিঞাতে সাবধান করে,
বেশি রাত কোরো না... দিনকাল ভালো না...
তসনিম দেখে এক দোকানে লেখা, ফোন মিনিট প্রতি তিনটাকা। রুমালের গিঁট খুলে  কাগজের নম্বর মেলাতেই আওজায় আসে, হ্যালো...
-         ফকির সাব আছেন?
-         হ কইতাসি...
-         এলেক্সের যে খবরটা ছিল, ওইতে আমি রাজি।
-         তুমি বারো তারিখ আইস... ওদেরও ওইদিন কইসি...
তসনিম এক বুক শান্তিতে ফোন কাটে। আর ফিরতি পথে ছেলেটার জন্য কালোজাম  কিনে বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।

(৭)

তসনিম জানে না বাচ্চা পেটে পালার কষ্ট।
ফকিরসাবের বারান্দায় খালি বাচ্চাদের ছবি। কেউ হাসছে, কেউ আধা জিভের খুনসুটি। তসনিমের মুখ এতে লাল হয় শরমে।
তখনই ডাক্তারের লোকে ডাকে...
-         আসেন, স্যার ডাকতাসে...
কাপড়টাকে শরীরে আরো অনেকটা জড়িয়ে নিয়ে ভেতরে যায় তসনিম।

(৮)
 
ছিপছিপে সুন্দরী যে এলেক্স বোঝাই গেল। আর ওইটুকুই তো পেট, সত্যিই ওতে  কেমন করে বাচ্চা পালবে এলেক্স! ভেবে আশ্চর্য হয় তসনিম।
ফকিরসাব আলাপ করিয়ে দেয়। আর এলেক্স ওর মাথার ওপর থেকে পায়ের পাতা  পর্যন্ত কী জানি কী সব দেখে।  

(৯)

তসনিমের শরীরে কোনো রোগ নেই। কাগজে সই করে তসনিম। ফকিরসাব হিসেব  করে দেয়।
শর্ত অনুযায়ী এলেক্স বাচ্চা নেবে ঠিক নয় মাস পর, আর বিনিময়ে দেবে তিন লক্ষ টাকা। কিছুক্ষণের জন্য তসনিমের গোল চোখ জলে ভরে আসে। এইবার মেডিকেলে আব্বার পুরো চেকআপ আর ভাইয়েরও ইস্কুলে যা বাকি পরে আছে।  এলেক্স ওষুধ ফল ও ভিটামিনগুলি এ সবের দায়িত্ব নেয়। তসনিম কাগজে লেখে মিঞাসাবের ঠিকানা।

(১০)

একটা নতুন গন্ধমাখা সবুজ টাকার নোট হাতে গুঁজে দেয় এলেক্স। ফকিরসাব বলে,
-         রিক্সায় যাইও, নইলে ফিরতে রাত হবো...
ডাক্তারপাড়া থেকে তসনিম সোজা আসে বাজারে। ইলিশমাছের মাথা দিয়ে দু’আঁটি কচুশাক। মিঞায় একবার খাওয়ার কথা কইসিল।

(১১)

মাঝের মাসগুলো তরতরিয়ে যায়। ভেতরেও এখন অন্য মানুষের নড়াচড়া। তসনিমের পেট বাড়ে। ও এখন আর আগের মতো ছেলেটার পিছনে দৌঁড়তে পারেনা। বসতেও চৌকি লাগে তসনিমের।
ফোনেও ফকিরসাব সাবধান বাণী দেয়।
এদিকে দুইদিন অন্তর এলেক্স ঝুড়িভর্তি লেবু পাঠায়। ছেলেটা তা পেয়ে কী খুশি!  
মিঞাসাবেরও দেখভাল বেড়েছে। নিয়মিত ভিটামিনগুলি না খেলে চোখ রাঙায়।

(১২)

দিন আসলে ফকিরসাবও আসে। ছোটছেলেতে জিদ ধরে, আম্মি, আমিও জামু! মিঞার ধমকে আবার কান্না জুড়ে দেয়।
এর সপ্তাহ খানিক পর বাড়ি ফেরে তসনিম। পেটের মাঝ বরাবর শুধু কয়াটা চির। বাচ্চাটা কেমন ছিল তসনিম জানে না। জানতেও চায় না। একবার শুধু জ্ঞানহারা অবস্থায় শোনে... ইটস আ বয়/ইটস আ বয়... তারপর কিচ্ছু না...
উঠানে রিক্সা থেকে নামতেই ছেলে জড়িয়ে ধরে। সেই ছোট্ট মানুষটাই ওকে ঘরে নিয়ে  যায়। মিঞা আসে পরে। তসনিমের কপালে তখন তাঁর শক্ত হাতের ছোঁয়া।  
তুমি ফিরা আসছ, এই অনেক... আমি আর কিচ্ছুটি চাই না। 





1 কমেন্টস্:

  1. চাম্পা ভাবি

    ভাবি ভাবি চাম্পা
    ভাবির চুল লম্বা।
    চাম্পা ভাবির লম্বা চুল
    ভাবির নাকে নাক ফুল।
    চাম্পা ভাবির নিতম্ব দোলে
    দেবররা সব ঢোক গেলে।
    চাম্পা ভাবি নামল নাইতে
    বুকের আঁচল গেল খসে।
    ওরে তোরা দেখে যায়
    চাম্পা ভাবি গোসল করছে একা।
    চাম্পা ভাবির ভিজা শাড়ি
    তোরা সব কোথায় গেলি।
    চাম্পা ভাবি যাচ্ছে একা
    পথের ধূলা সব কাঁদায় মাখা।
    চাম্পা ভারি গেল কোথায়
    আমরা সব পথ ভূলা।

    উত্তরমুছুন