নষ্টছবি - ৩
কবিতা নিয়ে আমার ভাবনা খুব সংযত একটা মুহূর্ত। এটা সংহত শব্দ থেকে বললাম কিনা, তা জানি না। লিখতে এসে তখন সংহত, শ্রুতি এসবের কিছুই জানতাম না। এক সময়ে ছবি আঁকতাম। সেটা বন্ধ হয়ে যেতেই হয়তো কবিতা খুলেছিল আমার মধ্যে। যা ছবি হয়ে ওঠেনি, তাই কবিতা হয়ে খাতার পাতায় কাটাকুটি করেছি অনবরত, এখনো করে যাচ্ছি। আমার একলা থাকার জায়গা। সংক্ষিপ্ত কিংবা ছোট কবিতা লেখার মধ্যেই শ্রুতির সাথে পরিচয়। তারপর সংহত। একটা মাত্রা পেয়ে গেলাম। তখন টুকরো টুকরো ছবিগুলোকে জড়ো করেছি কবিতার রং-এ। ‘পেন্সিলস্কেচে গোটা একটা বিকেল...’ এভাবে পরপর কবিতা হয়ে গিয়ে বেরোলো আমার প্রথম কবিতার বই ‘নষ্টছবি’, ২০০৬এর ডিসেম্বরে জলপাইগুড়ি বইমেলায়।
আসলে জলপাইগুড়ি ছিল আমার কাছে এক বিশাল ক্যানভাস। যেখানে ছড়িয়েছি আমার রং। বানিয়েছি প্রোট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ, শরীর, প্রেম, বিকেল, নদী, আরও কত কত। আর সেইসব নাম না জানা প্রেমিকাদের ভিড়ে নিজেকে হারিয়েছি বারবার। যা লিখছি এখন, এসবই আমার ব্যাক্তিগত ভাবনা চিন্তা। এর সাথে কবিতা চিন্তা ভাবনার কোনো তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নেই। সবটাই ভালো লাগার কথা। রং গুলতে গুলতে শুধু রং-এর খেলায় মেতে আছি... ‘স্থানীয় রং আঁকছে আমাদের’
আমি মনে করি, কবিতা আমাদের ভেতরের ব্যাপার, প্রত্যেকের ভেতরেই আছে। শুধু দেখার জায়গাটা দরকার। দেখতে গেলেও প্রাথমিক একটা শিক্ষার প্রয়োজন। ধীরে ধীরে শিক্ষিত হতে হতে দেখার জায়গাগুলো পাল্টে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই আমি দেখছি, কিন্তু, সেই দেখা কোনো না কো্নো সময়ে আমার ভেতরে রয়ে যায়। শব্দের আঘাতে তা লাফিয়ে নামে খাতার পাতায়। আমি লিখছি, সেটাই আমার কাছে বড় কথা। যা আমি ভাবছি, সেটা পাঠকের কাছে ভালো লাগার জায়গা তৈরি করে। এটা একটা ক্রাইসিস, আমার মনে হয়। যা বোঝাতে পারি না, যা বলতে পারি না, যা ভাবতে ভালো লাগে, তাকে রং দিই। বস্তুগত ভাবে কবিতার কোনো সংজ্ঞা হয় না বলে আমার মনে হয়। এই ক্রাইসিস যতদিন থাকবে, ততদিন লিখে যাব।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন