|  | 
| কবিতার কালিমাটি ১৪৬ | 
শরণার্থী
পরস্পর নির্ভরশীল হয়েও
                    আমি একা ও পৃথক।
প্রজননের পথটুকু একসাথে মোহনীয় থাকে
তারপর টেলিফোন ছিন্ন হয়ে যায়--
                      নিজের বাড়িতে আমি একা
                      নিজের উঠানে আমি একা
ভয়, বিস্ময় ও যন্ত্রণার মধ্যে আমি একা
শরণার্থী হয়ে যেন কখনো সীমান্ত পার হয়ে চলে
যাই
                                          নতুন
ভূখণ্ডে--
নৌ ও বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর
ঝোপঝাড়ময় সময় কাটাতে হয়।
বিষাদময় ও ধীর সঙ্গীত শুনতে শুনতে 
আমিও ঘুমিয়ে পড়ি বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে--
কখনো কখনো খাদের গভীরে পড়ে যাই
ক্রেন দিয়ে নিজেকে নিজেই তুলি চারণভূমিতে!
নিজের সমস্ত কথা অপরকে জানানো যায় না
নিজের ভেতর নিজেই আত্মগোপন করে থাকতে হয় 
কেউ কাউকে পুরো আবিষ্কার করতে পারে না
সবচেয়ে দুরূহ অংশ থেকে যায় নিজের ভেতর।
          
মানুষ ঊর্মিমুখর হলে নদী হয়ে যায় 
তরঙ্গিনীও তার তরঙ্গ হারিয়ে ফেলেছে
কল্লোলিনীও তার কল্লোল হারিয়ে ফেলেছে!
বড় নদী করতোয়া বহু আগে
                         --নাব্যতা হারিয়ে
পুণ্ডবর্ধনপুরের মতন মৃত্যুগন্ধ নিয়ে
পরিত্যক্ত খাতে পরিণত হয়ে আছে! 
বেগবতী নদীরও মৃত্যু হয়-
কত নদী তো এ-ভূখণ্ডে প্রমত্তা ছিল!
তিমিরাচ্ছন্ন সময়ে
                ধূলিধূসরিত সময়ে 
বেলেপাথরের সময়ে
এই চারণভূমিতে--এই মৃত্তিকায়
নবাঙ্কুরের জন্য
            
চারাগাছের জন্য
                       মূলরোমের জন্য
পুষ্পরেণুর জন্য
             
বীজাধারের জন্য
                        শস্যদানের জন্য
স্বতন্ত্র নদীর উত্থান জরুরি হয়ে কি পড়েনি? 
সেই নদী আপনাআপনি সৃষ্টি হবে না কখনো-  
জোরালো ভূমিকম্পের সাহচর্যে তলদেশ উত্তোলিত
হলে 
সেই নদী সৃষ্টি হবে, 
পাহাড়ের জলের সাথে বন্যাজলের মৈত্রীবন্ধন হলে
সেই নদী সৃষ্টি হবে, 
বৃষ্টিমুখরতায় প্লাবনের চঞ্চলতায় জলস্রোত তৈরি
হলে
সেই নদী সৃষ্টি হবে,
হিমবাহ থেকে--সরোবর থেকে নবজলধারা স্রোতমুখী
হলে
সেই নদী সৃষ্টি হবে।
সে নদীর অপেক্ষায়--বালুকাবেলায় পড়ে আছি
গর্ভমোচনের রূপ নিয়ে গতি-প্রকৃতি বদলে যাবে
না?
মৃতপ্রায় গোঙানি অবস্থা কি সবসময়ে থাকবে?
মানুষ ঊর্মিমুখর হলে নদী হয়ে যায়--
জরাজীর্ণ নদীও  নাব্যতা ফিরে পায়।
অ্যালার্ম শাসন  
এখন আমরা কাঁচামালে পরিণত হচ্ছি,
কলে-কারখানায় শুধু নয়, কর্পোরেট 
অফিসেও! ঘড়ির অ্যালার্মে ঘুম থেকে উঠি,
ঘড়ির অ্যালার্ম শুনে কাজের স্থল থেকে বের 
হই, এরমধ্যে কোনো ফাঁকফুকর নেই! 
দাঁত মাজি সময় ধরে, বাস ও ট্রেন ধরি 
ঘড়ির কাঁটায়, হাঁটিও সময় ধরে, আমরাও 
পণ্য ও কাঁচামাল, পুঁজির মেশিনে! 
আমাদের প্রত্যেকের পিঠে পিঠে সংযুক্ত 
হয়েছে ঘড়ি, আমরা এখন ঘড়িশাসিত, 
যাকে বলে অ্যালার্ম শাসন! 
 
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন