কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

সম্রাট সেনগুপ্ত




সত্য – অসত্য



আসলে সত্যটা একটা পেন্ডুলামের মতো দুলছে। সকলেই ধরে ফেলার তালে আছে। টক করে কেউ ধরে ফেললে দোলাটা বন্ধ হয়ে গেলো। তখন আর সেটা পেন্ডুলাম রইল না। আর তাই সেটা আর সত্য রইল না।

আচ্ছা ভাবুন তো, সত্যকে আপনি ধরতে পারলে কী করবেন? তখন তো আর  মিথ্যা থাকবে না! মিথ্যে না থাকলে সত্যও কি আর থাকবে?

ধরুন সত্যকে আপনি ধরতে পারলেন আর পকেটে রেখে দিলেন সাবধানে। কিন্তু পকেটে রাখলে সেটা যে সত্য তা জানবে কী করে সকলে? আর সকলে না  জানলে সত্য হবে কী করে সেটা? অর্থাৎ আপনার পকেটে যা আছে তা আর  সত্য নয়। তা আসলে কিছুই নয়। অর্থাৎ সত্য আসলে কিছুই নয়। অথবা ধরা যাক সত্যকে আপনি বার করে ফেলেছেন। সকলে নেড়েচেড়ে দেখছে। তখন কি আর সত্য আপনার থাকলো? সত্য তখন যার হাতে তার। আপনি বার বার সত্যকে ফেরত পেতে চাইবেন তখন।
অথবা ধরুন আপনি সত্যকে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন যদুবাবুর বাজারে। উপযুক্ত দামে বিক্রি হয়ে গেলো সত্য। কী বিক্রি করলেন আপনি? সত্য? কিন্তু  আপনি তো তাকে বেচে দিয়েছেন। আপনি জানবেন কি করে সেটা সত্য ছিল? তাহলে আপনি কী বেচলেন? সংশয় থেকে যায় আর সংশয় থাকলে সত্য থাকে  না। সত্যটা পুনরায় দুলতে থাকে পেন্ডুলামের মতো।


তার থেকে আসুন আমরা অসত্যকে খুঁজি। অনেক অনেক অসত্য। অসত্য কি আর একটা? আসলে সকলের কাছেই একটা করে অসত্য থাকতে পারে। একই অসত্য অনেককে বিক্রিও করা যেতে পারে। আর বিক্রি করার পরেও অসত্য থেকেই যায় আপনার কাছে। আর সব থেকে বড় কথা অসত্যকে পেলে হয়ত সত্যকেও আমরা বুঝতে পারবো, খুঁজতে পারবো অনেক অসত্যর মধ্যে থেকে।

একটা গল্প বলা যাক। একবার একটা লোক শিবের তপস্যা শুরু করেছে। সে তপস্যার এমনই জোর শিব নেমে এলেন কৈলাস থেকে। লোকটি চেয়ে বসলো সত্যকে। সত্যকে নিয়ে ঘরে ফিরে লোকটা গভীর আশ্লেষে সত্যর গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করছিল। হঠাত মধ্যরাত্রে দরজায় কড়া নাড়ে নন্দী ভৃঙ্গি। লোকটা  দরজা খুলে দেখে ট্রাকের পর ট্রাক করে মাল আসছে। নন্দী ভৃঙ্গিরা বলে – “সত্য তো নিয়ে এলে বাপু। এবারে অসত্যগুলি কে সামলাবে?” লোকটার জীবনে তারপর থেকে ট্রাকের পর ট্রাক বিরামহীন অসত্য এসে চলেছে।


এই গল্পের পরেও একটা গল্প আছে। লোকটা এত এত অসত্য পেয়ে কী করবে  বুঝতে না পেরে অসত্য বিক্রি করার জন্য একটা দোকান খুলল। অসত্য ঠিক ভালো শোনায় না তাই ভালবেসে প্রোডাক্টের নাম রাখল সাহিত্য। তারপর থেকে সাহিত্যের ব্যাপক বিক্রি। কেউ কেউ অবশ্য অসত্য কিনে কিনে একঘেয়ে হয়ে সত্য খুঁজতে আসে। লোকটা তাও বিক্রি করে। কিন্তু হাতে দেয় না কিছুই। বলে বাড়িতে ফিরে যান, মাল আগেই পৌঁছে গেছে। তারা অসংখ্য অসত্য ঘেঁটে খুঁজতে থাকে। প্রোডাক্টের নাম দর্শন।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন