পুরনো অ্যালবাম
(৬১)
রাস্তা ছিল সটান। পাশে ছিল গাছ। সময়টা ছিল
কালবৈশাখীর। ঝড় ছিল সঙ্গত। ঝড়ের আঘাত
থাকে গাছেদের গায়ে। সে রকমই ছিল। গাছ উপড়ে
ছিল। উপড়ে পড়েছিল রাস্তায়। রাস্তা জুড়ে
পড়েছিল। ঝড়ের আঘাতে গাছ উপড়ে পড়েছিল রাস্তায়।
শহর
থেমে গেল দুদিকে। ঘুমিয়ে পড়ল গতি।
গতি ঘুমালে দুর্গতি বাড়ে।
বেড়েছিল। তাতে
পড়ে
রইল মানুষ। ঝড় পালিয়ে গেল
বেমালুম। কেউ তাকে ধরতে পারে না।
আবার সে আসবে একদিন। বারবার। সময়ে সময়ে।
গাছ ভাঙবার প্রয়োজন হলে। বা কেউ
যদি গাছ হতে চায়।
(৬২)
রক্ত ছিল।
রস ছিল। হাড় মাস ছিল। দেহ মন ছিল।
ছিল শ্রী ও সৌন্দর্য ।
হর্ষ-বিষাদ, লোভ-লালসা, মান-অভিমান
যথেষ্টই ছিল। রাগ ছিল প্রতি লোমকূপে।
অনু যুক্ত রাগও ছিল গোপনে গোপনে। হৃদযন্ত্রের গায়ে
ছিল দগদগে ঘা। ক্ষতের শরীরে ছিল আকন্দের আঠা। ভ্যারেন্ডার
দুধ ছিল ক্ষীর হয়ে স্মৃতির সিন্দুকে। ছানি পড়া চোখে।
সব চলে গেছে। অবশিষ্ট বলে কিছু
অবশিষ্ট নেই।
যা রয়েছে তাকে বলে নেই। ধুলো আছে। ঝুল আছে। মাকড়সা
আছে। শুধু কোনো সম্পর্ক নেই। নেইটুকু
প্রতীক রূপে ফুটে
আছে ছবির শরীরে।
একা। নিটোল একা। ছবিতে একা। শূন্যহীন একা। অস্তিত্বে
নেই। অনস্তিত্বে নেই। কল্পনায়
নেই। অকল্পনাতেও। এতখানি একাকীত্ব একাকীত্বেরও নেই নিশ্চিত।
পুরনো অ্যালবাম দেখো। খোঁজো
মানুষের ছবি। দেখবে মানুষ নেই। তুমি নেই। আমি নেই।
সব ছবি ক্রুশবিদ্ধ যীশু।
(৬৩)
শেষটা কেউই জানে না। শুরুটাও অনেকেই। কিন্তু
ঘটমান বর্তমানটি বিছের দংশন। মলম হয়ে প্রলেপও
দেয়। চারপাশে তাকিয়ে
নিয়ে কেউ চুরি করে। নিজের
বাম পকেট থেকে চুরি করে। চুরি করা সম্পদ বাঁ
পকেটে ঢোকায়। ভাবে কেউ
দেখতে পায়নি। তবে
ভুল ভাবে। নিজেই সে
প্রত্যক্ষদর্শী কিনা। চৌর্যবৃত্তির
জন্য প্রথম চড় নিজের হাতেই খেতে
হয়।
শুরুটা খানিকটা অস্পষ্ট হয়ে
গেছে। শেষটা
নিয়ে আঁকা ছবির ভবিষ্যৎ থাকতেও পারে। তবে আগুন আর বৃষ্টিপাত সচল সিঁড়ির মত।
ফটোগ্রাফিই একমাত্র তাকে চেনে।
(৬৪)
আকাশকে বৈশাখে ফেলে শুকানো
হচ্ছে। আনুষঙ্গিক
আরো অনেক কিছু। আমি
কিছু জল বাঁচিয়ে রাখার
জন্য ঘরের ভেতরে চোখ লুকিয়ে
রেখেছি। এইখানে
সূর্য ঢোকে না। ঢুকতে পারে না।
তোমার চৌহদ্দিতে জল নেই। ছিল না
কখনো। পৃথিবীর মরুগণ অনুরক্ত তোমার। তুমি কিন্তু মরূদ্যানও নও।
আগুন তোমার ক্লাসে আসে। নির্বাপিত না হওয়া
শিখতে চায়। প্রসঙ্গকে
ভুল রাস্তা কীভাবে সহজে।
তবুও কিছুদিন পর আকাশ শুকনো
থাকে না। বিফল হয়। কিছুদিন
পরেই অহরহ ঝরঝর। ব্রহ্মাণ্ড
ভিজিয়ে ফেলবে কেঁদে। কেবল নির্জলা থাকবে তুমি।
(৬৫)
মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে কিছু
শব্দ। কিছু
শব্দ
শুকিয়ে গেছে রোদে। নোনাজলে হেজে গেছে
কিছু।
অবশিষ্ট আর কিছু নেই।
উচ্চারিত হতে চায় কথারা। প্রতিমুহূর্তেই
তারা সংখ্যায় আয়তনে ও ভারে বাড়তে থাকে।
শব্দের অভাবে তারা মূক থেকে যায়।
স্বপ্নের তলায় কিছু ছবি পড়ে
থাকে। সেইসব
ছবিদের
শব্দ নেই। কথা নেই। উচ্চারণ নেই।
মাটির শরীরে কিছু মাটি লেগে আছে। সেইটুকু ভরসা
নিয়ে গান বেজে ওঠে। গানগুলি মগ্ন হয়ে
আরো গান
শোনে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন