বছরের কয়েকটা দিনের রঙ
- রঙ দি! শিগগির
এসো! আর এক দল এসেছে। কী সুন্দর দেখতে গো! ঠাকুর ঠাকুর মতো। ভদ্দরঘরের ছেলেপুলে
মনে হয়!
মুখ বাড়িয়ে কথা কটা বলেই চলে
গেল নিম। আলু কাটছিল সে, বটি কাত করে শাড়ির আঁচলে ভালো করে বুক পেট ঢেকে নিল। আয়নায় দেখল সব ঠিক আছে কিনা। বুকের ভিতর টাকা-আধুলির মতো গড়িয়ে পড়ছে উত্তেজনা।
বছরের এই কটা দিন রঙের মনে অদ্ভুত
খ্যাপা টান, ছিপি খোলা সোডার বোতলের মত ভুসভুসে। বছরভোর গালাগাল, থুতু,
পানের পিক, টাকা ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারে সবাই। মন
গোত্তা মেরে পড়ে থাকে। এই কটা দিনের নরম পালিশ হাহাকারের মতো বাজে। জেগে ওঠে মন, আত্মপরিচয় মাখতে চায়।
প্রতিবছরই রঙ নতুন কোনো মুখ দেখে পাগল হয়। সারাদিন
সেই মুখ মাথায় বুড়বুড়ি কাটে। রঙ তার সঙ্গে
সংসারের গল্প করে, ভালোবেসে খাবার বানায়, তার জন্য
সাজগোজ করে। রাতে মাতাল গ্রাহকের হাত মরা শরীর পেয়ে ক্ষেপে গেলে রঙ হাসে, চোখে ঘোর। তার দোতারায় দিনকতক নতুন সুখ বিনবিন সুরে বাজে। ধীরে ধীরে
বুড়বুড়ি কমে আসে। তারপর একেবারে স্থির। আবার প্রতিরাতে কাঁটাছেঁড়া সঙ্গম।
এও এক নেশা। জীবনের নেশা। এবছর সেরকম কাউকে পায়নি
এখনো। মহালয়ার কটা দিন মাত্র বাকি। তাই আজ উত্তেজনাটা বেশি। সপুর কাঁধের ওপর থেকে উঁকি দিয়ে মুখগুলো ভালো করে দেখে নিল। নিম ঠিকই বলেছে
দেবদূতের মতো মুখ। জড়িয়ে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। ভাইটা ওদের মতোই হয়েছে এতদিনে।
দেখতে কী মিষ্টি ছিল! ওদের মতোই হয়তো দেবদূত হয়েছে! ওই যাহ! পুজোর টাকার সঙ্গে প্রসাদী ফুলটা তো দেয়
নি!
অন্যমনস্ক হয়ে পরেছিল। রিনির খিলখিল হাসিতে ফিরে এল।
প্রেমবর্জিত মেয়েমানুষগুলোর হাহাকার অশালীন রঙঢঙ হয়ে ভাসছে। কচি মুখগুলোয় লজ্জা, অজানা
কৌতূহল আর বিপন্নতা। অন্যদলের মতো স্বাভাবিক লোলুপতা একেবারেই নেই। রঙ কখনই সামনে
যায় না। দূর থেকে সভ্য মুখগুলো গেলে আর মনে মনে স্বপ্নের সুতো কাটে। ঘুরতে ঘুরতে তার চোখ
যেখানে আটকে গেল তার মুখ জুড়ে প্রবল ঘৃণা। এতদূর থেকেও তীরের মতো বিঁধছে রঙকে।
তবুও অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতায় ভরে যাচ্ছে মন। ভাইটাও ওকে দেখলে এভাবেই ঘৃণার বিষ
ছড়াবে। অন্ধাকার গর্তে পরে থাকা রঙ সেখানে কিছুতেই ভালোবাসা লিখতে পারবে না।
ঘরে ফিরে এল সে। এবছরের খোরাক পেয়ে গেছে। আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে নিজেকে আরো একবার দেখে নিল। তারপর চোখ বুজে ঘৃণাভরা মুখটাকে জড়িয়ে অজস্র
চুমু খেল। এখন ওই মুখটাই রঙের কয়েকটা দিন ভরিয়ে রাখবে।
ভাইয়ের জন্য আলু ভাজতে বসে গেল রঙ। খেয়ে উঠেছে সবে
নিম আবার দৌড়ে এল।
- শিগগির এসো! আবার
একদল এসেছে। দেখবে চলো বুড়োগুলোর হাসি আর থামছে না।
বুকের কাপড়টা বেশ করে নামিয়ে নিল। শাড়ির আঁচল সরু করে
কাঁধে তুলে চলল। চোখে উজ্জ্বল ঘৃণামাখা মুখ, - কা করু ভাইয়া! আয়ে
হ্যাঁয় বালম...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন