কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

পায়েল চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩০


ঘাতক

-"দুটো স্যান্ডউইচ আর আমার স্পেশাল কফি। কতক্ষণ সময় লাগবে?  কাল যে নতুন মেয়েটাকে দেখলাম একটু ডেকে দেওয়া যাবে?"

কথাগুলো বলার সময় একবারও মুখ তুলে তাকায়নি মেয়েটা। চুলের কুচিগুলো গলার কাছে এসে পড়েছে। একদম ফ্যাকাশে লাগছে। কথা বলার সময় হাঁপাচ্ছে। এমনটাই হওয়ার কথা। দশদিন হল রাজু এই ক্যাফেটায় কাজে আসছে।

-"কাল আমার অফ থাকে, আমি দেখে জানাচ্ছি।"

মেনুকার্ডটা অন্য টেবিলে রেখে চলে আসে রাজু। কিচেনের ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে। কফিটা রেডি। পাঁউরুটিটা গ্রিল থেকে শব্দ করছে। অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা। একটা ছেলে এসে মেয়েটার পাশটায় বসল। ছবিতে একে দেখেছে রাজু। যতটুকু মুখ দেখা যাচ্ছে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না।

-"খাবার তো রেডি। অর্ডারটা নিয়ে যা। যারা অর্ডার দিয়েছে তারা এখানকার রোজকার কাস্টমার। একবার কমপ্লেন ঠুকে দিলে বুঝতে পারবি! দিদি নেই।‌ বাড়ির সব দায়িত্বই তোর। গা-ছাড়া দিয়ে কাজ করলে হবে!"

স্বপনদা কিচেনের সকলকে এভাবেই তাড়া দেয়। শেষের কথাগুলো রাজুর কানে তীরের মত বেঁধে।

অর্ডার রেডি করে কিচেন থেকে বেরোয় রাজু। স্যান্ডউইচ, কফি টেবিলে রাখে। কফির কাপটা রাখার সময় একটু কফি চলকে পড়ে ছেলেটার জামায়। দু'একটা খারাপ শব্দ ব্যবহার করে টেবিল থেকে উঠে যায় ছেলেটা। ঠিক এই সময়েই রাজু চিরকুটটা মেয়েটার হাতে দেয়। মেয়েটা ততক্ষণে কফির কাপ থেকে চুমুক দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। চিরকুটে লেখা রয়েছে 'ঘাতক'।

'ঘাতক'। একটা শব্দ। মেয়েটার চোখমুখের চেহারা বদলে দিয়েছে। একবছর আগে রাজুর দিদি এই ক্যাফেটার মেন সার্ভিসওম্যান ছিল। দিদিকে নিয়ে যেতে আসত রাজু। একদিন এই মেয়েটার কথা বলে। দুঃস্থ মেয়েদের নিয়ে কাজ করে। দিদি ছবি দেখিয়েছিল। রাজুর পড়াশোনা, মায়ের অসুখ, সব সামলে স্বপ্ন দেখা শুরু করছিল। ফাঁদ। দিদি পা দেয়। অঙ্গপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। জেলের ভেতর কেউ সুইসাইড করলে তাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া সহজ। জেলের কুঠুরিতে দিদির সঙ্গে যে মহিলা থাকতেন, একটা ছবি, চিঠি দিয়েছিল রাজুকে। সঙ্গে একটা নাম। একটা ওষুধের নাম। ছবির পেছনে লেখা 'ঘাতক'। মেয়েটা প্রতিদিন ক্যাফেটায় এসে একটা বিশেষ কফি অর্ডার দেয়। ‌ নার্ভের অসুখ আছে মেয়েটার। জেলে দিদি যে তথ্যগুলো পেয়েছিল একটা চিঠিতে সবটা জানিয়েছিল। প্রতিদিন মেয়েটার অর্ডারটা রাজু নিজে হাতে পৌঁছে দিয়ে এসেছে। আজ ওষুধটার লাস্ট ডোজ। রাজু দেখতে পাচ্ছে মেয়েটা একটু একটু করে এলিয়ে পড়ছে। বিকেলে সাধারণত ক্যাফেটা ফাঁকাই থাকে। আর্থিক দিক থেকে দুর্বল মেয়েদের টার্গেট করে তাদের দিয়ে বেআইনি কাজ করায় একটা সংস্থা। মেয়েটা পান্ডা। ছেলেটা সাগরেদ। দিদি জানিয়েছিল। ওষুধটা জোগাড় করতে বেগ পেতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত সফল। দিদির আত্মহত্যার পরের দিনই মা’ও চলে যায়। কাউকে জবাব দেওয়ার নেই।

-"কী ব্যাপার! মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ল কেন?"

স্বপনদা রাজুকে জেরা করে।

রাজু ততক্ষণে মানিব্যাগে রাখা দিদির ছবির উপর মালা এঁকে দেয়।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন