কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫ |
ঋতুর খোলা পিঠ
পাতা খসতে খসতে হেমন্তকাল। একটু পরে উঠবে। সালভাদোর দালির এক স্বপ্ন মনে পড়ল। একটা হাত। কিছু চাইছে। পিঁপড়েদের সঙ্গে হামাগুড়ি। দেখতে দেখতে আবার কুত্তার মত সকাল হল। আন চিয়েন আন্দালু। আজ এক নতুন ক্ষমতা হাতে আসবে। ক্ষমতার গন্ধ ভালবাসি। সকালে ভোদকার মত স্বচ্ছ, বিকেলে হুইস্কির মত আর রাতে গভীর রামের মত। আমি বদলে যাই, সময়, জায়গা, আসবাব, টাকার রং, সবাই বদলে যায়, কিন্তু গন্ধের ইচ্ছেটা রয়ে যায়। আমি বিজ্ঞান কিস্সু বুঝি না, পদার্থবিদ্যা-আপেক্ষিকতা জানি না, আইনস্টাইন না, আলোর গতিবেগ না, লোরেঞ্জ ফ্যাক্টর না – শুধু গন্ধ চিনি।
আবার কুত্তার মত সকাল হল। আন চিয়েন আন্দালু।
আমার প্রথম পরিচয়, আমি এক টোটোওয়ালা ও সমাজসেবী নেতা। রোজ রাতে কাউকে ফালাফালা করে এসে আরসি-র একটা পাঁইট মারি। বউ এসে জিজ্ঞেস করে ‘কি গো, খাবে না?’ আমি হেসে উঠি। ‘খাচ্ছি তো’। ‘ওসব ছাইপাঁশ আর না খেয়ে ঘরের খাবার খাও’। ‘এটা খাচ্ছি না, অন্য কিছু খাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছো?’ বউ অবাক হয়। ‘আবার কি খাচ্ছো? আর তো কিছু দেখছি না!’ ‘মূর্খ মেয়েছেলে, চোখ খোল। দেখতে পাবে। এসো, নাভি কই?’
আবার কুত্তার মত সকাল হল। আন চিয়েন আন্দালু।
আমার দ্বিতীয় পরিচয়, আমি এক স্কুলছুট শিক্ষকর্মী ও রাজনৈতিক নেতা। রোজ রাতে কাউকে ফালাফালা করে এসে তিন পেগ স্মার্নফ মারি। পাশের পাড়ার বিধবা বৌদির দোতলার প্ল্যান হচ্ছিল না, দখলি জমি, আমি পৌরসভার পেছনের দরজা দিয়ে পাস করিয়ে দিলাম। এখন সন্ধেবেলা বৌদি আমার গ্লাসে স্মার্নফ ঢালে। আমি সেই গ্লাসের কাচে চোখ রেখে বৌদির বুকের ভাঁজে পোকা খুঁজি।
আবার কুত্তার মত সকাল হল। আন চিয়েন আন্দালু।
আমার তৃতীয় পরিচয়, আমি শহরের এক শপিং মলের মালিক ও অর্থনৈতিক নেতা। রোজ রাতে কাউকে ফালাফালা করে এসে টনিক ওয়াটার দিয়ে বোম্বে স্যাফায়ার মারি, যতটা ইচ্ছে জাগে। মলের সেলসগার্লগুলো একেকজন একেকদিন আসে। রাত ন’টা থেকে বারোটা। ওদের ওভারটাইমের টাকা দিই। কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করি ‘ছোলা খাবি নাকি পাগলি? পোকা খাবি? উচ্ছে খাবি? আরশোলা খাবি? মাকড়সা খাবি? উচ্চিংড়ে খাবি? রামপুরি খাবি? ব্যাং খাবি? সাপ খাবি? কাঁচা বাদাম খাবি?’ ওরা খিলখিল হেসে গ্লাসের নীলজলে বরফ ফেলে দেয়। আর আমি ওদের সাপের পাঁচ নম্বর পা দেখাতে শুরু করি।
আবার কুত্তার মত সকাল হল। আন চিয়েন আন্দালু।
আমার একটা চার নম্বর পরিচয় ছিল। ভুলে
যাচ্ছি। একটু ভেবে নিই।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন