প্রতিবেশী সাহিত্য
কবি দিনকর কুমার-এর কবিতা
(অনুবাদ : মিতা দাশ)
কবি পরিচিতিঃ দিনকর কুমারের জন্ম ৫ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে বিহা্রের দ্বারভাঙ্গায়। তিনি এখনও পর্যন্ত ৬টি কবিতা সংকলন, ২টি উপন্যাস ও ২টি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়া তিনি অনুবাদ করেছেন ৫০টি অসমীয়া গ্রন্থ। বর্তমানে তিনি আসামের গুয়াহাটিতে ‘দৈনিক সেন্টিনল’ পত্রিকার সম্পাদক। সাহিত্য রচনার জন্য তিনি বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন, যেমন সোম দত্ত সম্মান, জাস্টিস শারদাচরণ মিত্র স্মৃতি ভাষাসেতু সম্মান, জয়প্রকাশ ভারতী পত্রকারিতা সম্মান এবং অনুবাদ শ্রী সম্মান।
মধুবনী চিত্রকলা
মেঘেরা তোমার গালে চুমু খেয়ে
নিংড়ে দিল নিজের দেহ
শুকিয়ে যাওয়া নদীরা
আবার বেঁচে উঠল
বৃক্ষ উপহার দিল পৃথিবীকে
পাকা ফল ও সঞ্চিত রাখল তোমার গন্ধ
আশি মাইল দূরে
কেউ জ্বালিয়ে দিল প্রদীপ
সোহর ও সমদাউনের সুর
শুনে দেবতারাও মুগ্ধ
কিষান লাঙল ফেলল
বীজ বপন করল
ক্ষেতে জল দিল
মাটিতে তোমার
অঙ্কুরণ হল বৈদেহী
কাঁচা মাটির দেয়ালে
তোমার বিষাদ
চোখের জল ও হাসি
কথা বলে
চুপি... চুপি...
মধুবনী চিত্রকলা মাধ্যমে।
ক্ষুধা আমার প্রতীক্ষায়
ক্ষুধা আমার প্রতীক্ষায়
পেটের নাড়িভুঁড়ি প্রায় গুঁটিয়ে
ঠোঁট দুটো শুকনো শুকনো
খালি বাসনগুলি আপোসে
বিষাদ ভাগ করে নিচ্ছে
স্টোভটির কাছে উপেক্ষিত পড়ে থাকা
কেরোসিনের খালি ডিবে
অন্ধকারে কোনো একটি আকৃতি নড়চড় করলে
ক্ষিদের চোখে চমক, জ্বলজ্বল করে উঠে
আমি জানি
ও কি ভাবে শিথিল হয়ে পড়েছে
আশা নিরাশার মাঝে
আমার চিন্তায়
ফিরে আসলেই
ও জড়িয়ে নেবে আমায়
জন্ম জন্মান্তরের প্রেমিকার মত
তারপর শুরু হয়
শেষ উৎসব।
জীবিত থেকে যায় স্বপ্ন
বিদ্রোহকে থেঁতলে দেয়া হয়
কিন্তু জীবিত থেকে যায় স্বপ্ন
স্বপ্নের কোনো হেড অফিস হয় না
বাঙ্কারও হয় না লুকিয়ে থাকাও হয় না
হয় না কোনো গুপ্ত পথ পালাবার
যখন অন্যায় নিজের জিতের পতাকা উত্তোলিত করে
বঞ্চিতদের বুকে বীজের মত অঙ্কুরিত হয় জ্বলন্ত স্বপ্ন
যখন অন্যদের বিদ্রোহের বুকে
পা রেখে ঘোষণা করে
কি এখন সব শেষ হয়ে গেছে
চুপ মেরে গেছে প্রতিবাদী স্বর
সে সময় কোনো বাচ্চার মুঠো টানটান হয়ে উঠে দাঁড়ায়
আর ওদের চোখে থাকে বিদ্রোহ
বিদ্রোহকে থেঁতলে দেয়া হয়
লাশ ফেলা হয় ক্ষেতে, খামারে
নদী আর সাগরে আর লাল হয়ে উঠে
বিদ্রোহীদের রক্তে
নতুন করে জন্ম নেয় বিদ্রোহী
প্রাচীন স্বপ্নকে বুকে ধরে রেখে
আদেশ বা অধ্যাদেশকে ওরা
প্রত্যাখ্যান করে।
আমরা সামুহিকভাবে উদাস হয়ে পড়েছি
আমরা সামুহিকভাবে উদাস হয়ে পড়েছি
আমরা মৌন চোখে বর্বর দৃশ্যগুলি দেখছি
আমাদের শব্দেরা ব্যথাকে সঠিক ভাবে ব্যক্ত করতে অসমর্থ
তাই
মৌনতা দুঃখের ভাষা হয়ে গেছে
আমাদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে
কিন্তু রাত দিন
উথলে পড়ছে বেদনার সমুদ্র
আমাদের জন্য দৃশ্যের শোভা
এখন অপ্রাসঙ্গিক
কিন্তু সব দৃশ্য আমরা দেখি
সংকটে ভেজা
আমরা এখন পৃথকভাবে বাস করায় অভ্যস্ত
আর আমাদের জগত
সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে অপ্রত্যাশিত গতিতে
আমাদের ঘুমে জাগরণে শুধু
আত্মরক্ষার চিন্তা তাড়া করে
যেন আমাদের উপর আক্রমণকারীরা
চারিদিক ঘিরে
আমরা নিরস্ত্র হলেও অদৃশ্য শত্রুদের
ফাঁকি দিয়ে বেরতে হবে
আমরা সামুহিকভাবে উদাস হয়ে পড়েছি
আমরা মৌন চোখে বর্বর দৃশ্যগুলি দেখছি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন