“আমরা প্রতিবাদ করতে জানি” : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে
এপার-বাংলার শিল্পীরা
আমাদের চেহারায়, ভাবে, ভাবনায় বাংলার মাটি-জল-বাতাস এমন ছাপ মেরে দিয়েছে, যে লুঙ্গি-টুপি-টিকি-দাড়ি-পৈতে কোনকিছু দিয়েই তা ঢাকবার উপায় নেই-- অনেকটা এ ধরনের কথাই বলেছিলেন মহম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষা আন্দোলনের সময়। আর এ কথা যে কতখানি সত্যি, তা বারবার প্রমাণ করেছেন দুই বাংলার মানুষ, বিশেষ করে সংকটের আবহে-- হাত মিলিয়েছেন কাঁটাতার পেরিয়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে সব সেনা মাঠে নেমে লড়াই করেছেন, তাঁদের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মননকে হাতিয়ার করে বিপ্লব চালিয়ে গেছেন দুই বাংলার শিল্পী-সাহিত্যিকরা। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে নতুন করে মনে পড়ে ‘'শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি”, যা সংক্ষিপ্ত আকারে বেতারে বাজানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচারের মাঝে—১৯৭১-এর ৭ মার্চ। ওইদিন সকালেই চায়ের আড্ডায় বসে এই গানটির জন্ম দিয়েছিলেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, আর সুরকার-শিল্পী অংশুমান রায়। মুহূর্তে অসামান্য জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় গানটি—একটু বড় আকারে সাজিয়ে নিয়ে রেকর্ডও বেরিয়ে যায় দ্রুত—২২ এপ্রিল ।
১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ
চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় বিমান হামলায়। এই কেন্দ্রের পরিচালকরা কয়েকটি অক্ষত বেতার যন্ত্র সম্বল করে সীমানা পেরিয়ে আগরতলা ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায়
ছড়িয়ে পড়েন। ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর, বেতার
কর্মীদের আবেদনে সাড়া দিলেন
ভারত সরকার। ওপার বাংলার
বেতার কর্মীরা এসে আশ্রয় নিলেন
কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি দোতলা বাড়িতে, সেখান থেকে পুনরায় নতুন করে বেতার সম্প্রচার শুরু
হয়, যার নাম ছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’। এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের বেতার-শিল্পীদের গান, সংবাদ প্রচার, আর আকাশবাণী
থেকে প্রণবেশ সেন আর দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সংবাদ পরিক্রমা’ যে আলোড়ন
তুলেছিল—তা একরকম সাংস্কৃতিক যুদ্ধ-ই।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সফলতম গেরিলা অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর সঙ্গেও পরোক্ষে জড়িয়ে ছিলেন এপার বাংলার সঙ্গীতশিল্পীরা। অপারেশন শুরুর সঙ্কেত হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল দুটি গান-- যা সম্প্রচার করা হয়েছিল আকাশবাণী কলকাতা খ-এর বিশেষ অনুষ্ঠানে। প্রথম গানটি ছিল পঙ্কজকুমার মল্লিকের কণ্ঠে ‘আমি তোমায় যত’—এই সঙ্কেতের অর্থ হল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন শুরু করতে হবে। এটি সম্প্রচারিত হয় ১৩ আগস্ট (১৯৭১)। দ্বিতীয় সঙ্কেত ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি’—যা সম্প্রচারিত হয় ১৪ আগস্ট। এর অর্থ—আক্রমণের সময় কাছাকাছি এসে গেছে, এবার ঘাঁটি ছেড়ে বেরোতে হবে। এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের নৌসেনার পক্ষ থেকে পরিচালিত হয় সেই দুঃসাহসী অভিযান, যা মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব পশ্চিম’ উপন্যাসেও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয় ‘বাংলা! আমার বাংলা!’ নামের একটি ইপি রেকর্ড, যার এক দিকে ছিল ‘ধন্য আমি জন্মেছি মা তোমার ধূলিতে’ এবং ‘মানবো না এ বন্ধনে’ আর উল্টো দিকে ছিল ‘ও আলোর পথযাত্রী’ ও ‘আহ্বান শোন আহ্বান’। ‘ধন্য আমি জন্মেছি মা’ আর ‘ও আলোর পথ যাত্রী’ কিন্তু অনেক আগেই লেখা হয়েছিল গণনাট্য আন্দোলনের গান হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সময় এগুলি নতুন করে জনপ্রিয় হয়। সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে এই গানগুলিতে মান্না দে-র সঙ্গে ছিলেন সবিতা চৌধুরী ও অন্যান্য সহশিল্পী। একই ভাবে, ১৯৬১ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় আকাশবাণীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, নিজের সুরে ‘মাগো ভাবনা কেন’ আর ‘এ দেশের মাটির পরে’। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ১৯৭১-এ এই গান দুটি আবার নতুন করে রেকর্ড করেন তিনি, এবং সেই থেকে বাংলাদেশ-আবেগের সঙ্গে বিশেষ ভাবে জড়িয়ে গেছে গান দুটি। আবিদুর রহমানের কথায়, নিজের সুরে ‘হরিণের মত তার সুমধুর’ আর ‘বাংলার দুর্জয় জনতা’ গানদুটিও রেকর্ড করেন হেমন্ত ১৯৭১-এই; প্রথম গানটি যেন ‘গাঁয়ের বধূ’র এক নবরূপায়ন— শোষকের প্রতিনিধি ‘পশু’দের অত্যাচারে বাংলার এক পল্লীবালার জীবনের সুখস্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার মরমিয়া সুরগাথা। বাংলাদেশের মানুষ আজও এ গান দুটিকে বুকের মাঝে রেখেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ সফরে গিয়ে বিপুল সংবর্ধনা পেয়েছিলেন এপার বাংলার শিল্পীরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই
এই নবগঠিত রাষ্ট্রের সংগ্রামকে সম্মান জানাতে এপার বাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল 'বাংলাদেশের হৃদয়
হতে' নামে এল পি রেকর্ডটি -- এতে ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র,
আরতি মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় , নির্মলেন্দু চৌধুরী, বনশ্রী সেনগুপ্ত প্রমুখ
শিল্পীর গাওয়া ১২টি গান, সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন সমর দাস। রেকর্ড কভারের পেছনে 'বাংলাদেশ'-স্মরণে এক সুন্দর
প্রস্তাবনা লিখে দিয়েছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। গানগুলির রচয়িতা ছিলেন দুই বাংলার খ্যাতনামা
গীতিকাররা-- আব্দুল গফফর চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান, আবিদুর রহমান, গোবিন্দ হালদার, মহম্মদ মোসাদ আলি, সলিল চৌধুরী এবং গৌরীপ্রসন্ন নিজে।
আর একজনের কথা না বললেই নয়।
“বাংলা ভাগটাকে আমি কিছুতেই গ্রহণ করতে পারি নি-- আজও
পারি না। ইতিহাসে যা ঘটে গেছে তাকে পাল্টানো ভীষণ মুশকিল, সেটা আমার কাজও না। সাংস্কৃতিক মিলনের পথে যে বাধা, যে
ছেদ, যার মধ্যে রাজনীতি-অর্থনীতি সবই এসে পড়ে, সেটাই আমায় প্রচণ্ড ব্যথা দিয়েছিল।”
বলেছিলেন ঋত্বিককুমার ঘটক, যাঁর সৃষ্টিকর্মে ও-পার বাংলার ছিন্নমূল মানুষজনের বেদনা আর
অস্তিত্বের সংকট বারবার ধরা দিয়েছে। বিশেষ করে ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’ আর
‘কোমল গান্ধার’ আজও দেশভাগ এবং ওপার-বাংলা নিয়ে বাঙালির আবেগের সঙ্গে সমার্থক।
কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে, ‘নিষ্পেষিত মানবতার’ প্রতি উৎসর্গীকৃত
‘দুর্বার গতি পদ্মা’ নামে যে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি, তার কথা আজ
অনেকেই মনে রাখেন নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল, এই অমূল্য
তথ্যচিত্রটিরও তা-ই।
তথ্যচিত্রটি শুরু হয় ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি
গরীয়সী’ স্তোত্রগান দিয়ে—কণ্ঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কুশীলবদের নাম পর্দায় এক এক করে ভেসে
ওঠে, মিলিয়ে যায়। তারপর দেখা যায় গাছগাছালির মধ্য দিয়ে উঁচু নিচু পাথুরে পথ বেয়ে
ক্লান্ত পায়ে হেঁটে আসছে এক মুক্তিযোদ্ধা। একটু এগোতেই চোখে পড়ে কাঁটাতারের বেড়া,
লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ সীমান্ত’। টিলার ওপর
পা রাখতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সৈনিকের হাত স্যালুটের
ভঙ্গিতে উঠে আসে কপালে। তারপর শুরু হয় তার জবানিতে পূর্ববঙ্গের পল্লীজীবনের গাথা।
এই বাংলার চিরাচরিত, স্নিগ্ধ প্রকৃতির বুকে সহজ-সরল জীবন কাটাত গ্রামের মানুষজন,
গাছের ছায়ায় খেলত শিশুরা, মা পদ্মা বইত আপন ছন্দে। পরিচালকের কণ্ঠে শোনা যায়
জীবনানন্দের ‘আবার আসিব ফিরে’ আবৃত্তি। কিন্তু সেই গ্রামবাংলার সুখের নীড় ভাঙল— বোমা পড়ার
শব্দ আর আকাশ জুড়ে চিল শকুনের আনাগোনার ছবি বুঝিয়ে দিল দুঃসময়ের হাহাকার। বরাবরের শান্তিপ্রিয় এই গ্রামবাংলার
মানুষগুলির উপর দেশভাগের ফলে কী ধরনের যন্ত্রণা নেমে এল, আর তারপর— বিজাতীয়
ভাষা-সংস্কৃতিবাহী রাষ্ট্রের আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদে কীভাবে সংগঠিত হল
মুক্তিযুদ্ধ— সেই কাহিনি বোনা হতে থাকল ভাষ্যে আর আবহে। টুকরো টুকরো ভাবনা, শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য, চিত্ত প্রসাদের হাতে আঁকা প্রতীকী সাদা-কালো
ছবি, দাঁড়িপাল্লার রূপক-ব্যবহার থেকে দৃশ্যান্তর-- শোষণ ও সংগ্রামের নানা ঘটনা,
খবরের কাগজের কাটিং-এর কোলাজ, আর তারই মাঝে মাঝে আবহে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে “আমার সোনার বাংলা” (আংশিক) বা
নির্মলেন্দু চৌধুরীর গলায় ভাটিয়ালির সুর শোনা যায়-- বৃহত্তর ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে
যেতে থাকে খণ্ড ইতিহাস।
এই তথ্যচিত্র নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন এ-পার বাংলা
তথা ভারতের বেশ কয়েকজন নামী সঙ্গীতব্যক্তিত্ব-- পাশে ছিলেন সর্বভারতীয় স্তরের চলচ্চিত্র
তারকারাও। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন বিশ্বজিৎ, কথক-সৈনিকের ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন
তিনি। বাংলাদেশের সংগ্রামী মানবতার সমর্থনে সাহায্যের আবেদন-সহ বক্তব্য রাখতে দেখা
গেছে রাজেশ খান্না, শর্মিলা ঠাকুর, ধর্মেন্দ্র প্রমুখ চিত্রতারকাকে। গান গেয়েছেন দিলীপকুমার।
আরও দেখতে পাই, মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে “আমি টাকডুম
টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল” গাইছেন শচীন দেববর্মণ, বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে
স্লোগান দিচ্ছেন; সলিল চৌধুরীর পরিচালনায় ‘শুনো শুনো ভাই হিন্দু মুসলমান’ গাইছেন
মান্না দে, সবিতা চৌধুরী এবং সহশিল্পীরা, “বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে” গাইছেন
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ত্রাণ সংগ্রহে দেখা যাচ্ছে শ্যামল মিত্র, মৌসুমী চ্যাটার্জি,
অনিতা গুহকে। আবার হাসপাতালে আহত, অসুস্থ শরণার্থীদের দেখতে ছুটে যাচ্ছেন শিল্পী,
সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এই তথ্যচিত্র নির্মাণে বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন নার্গিস দত্ত।
আটপৌরে শাড়িতে বাংলাদেশের এক ‘মা’-এর প্রতীকী চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। বাংলায় তিনি আবেদন রাখেন— “তোমরা
কিছু করো। এমনি করে মুখ বুজে চোখ বন্ধ করে থাকবে? এ আর সয় না।” তাঁর কথা ছাপিয়ে
ভেসে আসে কান্নার শব্দ। তারপর দেখা যায় পদ্মা বয়ে চলেছে। মুক্তিযোদ্ধা-কথক বলে
ওঠেন “গেরুয়া জলের দুর্বার স্রোত আর নেই।
লাল হয়ে গেছে, রক্তে রক্তে লাল।... এইখানেই কি আমরা থামব মশাই?” এ প্রশ্ন এত বছর
পরেও ভাবিয়ে তোলে। অপশাসনের বিরুদ্ধে, রাজনীতির কুনাট্যের বিরুদ্ধে সংস্কৃতিবান
বাঙালির মননের যুদ্ধ আজও চলছে নানাভাবে, নানা স্তরে।
(চিত্রসৌজন্য : জয়দীপ চক্রবর্তী)
কিন্তু আজকের বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ তথা 'ইন্ডিয়া'-র চেয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেই অনেক বেশী একাত্মতা বোধ করে কি? গণমাধ্যমে সেইরকমই নাকি দেখা ও শোনা যায়!
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন"....মনে পড়ে 'শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি', যা সংক্ষিপ্ত আকারে বেতারে বাজানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচারের মাঝে—১৯৭১-এর ৭ মার্চ। ওইদিন সকালেই চায়ের আড্ডায় বসে এই গানটির জন্ম দিয়েছিলেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, আর সুরকার-শিল্পী অংশুমান রায়। মুহূর্তে অসামান্য জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় গানটি—একটু বড় আকারে সাজিয়ে নিয়ে রেকর্ডও বেরিয়ে যায় দ্রুত—২২ এপ্রিল।...."
উত্তরমুছুনলেখাটির এই অংশটিতে কিছু গন্ডগোল আছে। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। সেটি শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে সেদিনই গৌরীপ্রসন্ন গান লিখলেন, যা রেকর্ড হয়ে প্রকাশিত হল ২২শে এপ্রিল - লেখাটিতেই এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আবার সেখানেই বলা হচ্ছে, ওই গানটি নাকি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের মাঝখানে সম্প্রচারিত হয়েছিল ওই ৭ই মার্চ তারিখে!!!!!
ভাষণটি শুনে তারপর গানটি লেখা হল ও তার একমাস পরে সেটি রেকর্ড হয়ে প্রকাশিত হল, অর্থাৎ ভাষণটির পরে যে গানটির জন্ম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ এই লেখাটিতে বলা হচ্ছে, বক্তৃতার মাঝখানে (৭ই মার্চ) নাকি গানটি শোনানো হয় অর্থাৎ তখন যে গানটির জন্মই হয়নি, সেটিই শোনানো হচ্ছে!
এবার প্রকৃত তথ্যগুলো দেখা যাক। ঢাকার রমনা ময়দানে ৭ই মার্চ দুপুরের দিকে মুজিব এই ঐতিহাসিক ভাষণ যখন দেন, তখনও সেখানে চলছে পাকিস্তানি শাসন, ঢাকা বেতার কেন্দ্রও সেই শাসকদেরই নিয়ন্ত্রণে, মুক্তিযুদ্ধ তখন শুরুই হয়নি। ভাষণটি সেদিনই ঢাকা বেতার থেকে সম্প্রচারের কথা ছিল, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কর্তারা তা প্রচারের অনুমতি না দেওয়াতে বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা ধর্মঘট করে। তার ফলে ভাষণটি শেষ পর্যন্ত পরদিন অর্থাৎ ৮ই মার্চ প্রচারিত হয়। কাজেই কলকাতায় বসে ৭ই মার্চ সকালে গৌরীপ্রসন্নের পক্ষে গানটি রচনা করে ফেলা কোনোভাবেই সম্ভব ছিলনা।
বাস্তবে যা ঘটেছিল, তা লেখাটিতে যা বলা হয়েছে, তার উল্টো। অর্থাৎ গানটি রেকর্ড করার সময় শুরুতে অংশুমান রায়ের গানটির ঠিক আগেই যুক্ত হয়েছিল মুজিবের কণ্ঠে ওই মূল ভাষণটির বিখ্যাত কয়েকটি ছত্র। রেকর্ডটি জনপ্রিয় হবার পেছনে এটি ছিল অন্যতম কারণ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৬শে মার্চের পরে। পরবর্তীকালে এই গানটি আকাশবাণী কলকাতা ও স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র থেকে বহুবার প্রচারিত হয়েছে।