কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সুবল দত্ত




ইন্দে ইয়লো সামান গে তন্নো                       

ট্রেন রাউরকেলা ছেড়ে বেরোতেই শীত লহর কমে এল। মিহির সিং লোয়ার বার্থে শুয়েছিলেন, ঢাকা খুলে উঠে পড়লেন। পেটের ভিতরে গোঁজা লাল রস ভরা ক্যাথিটার দুটো নল সমেত ঝুলে পড়ল। এগুলো ক’দিন থাকবে কে জানে। আর নিজেই বা ক’দিন।  যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। হঠাৎ ট্রেন হ্যাঁচকা মেরে  দাঁড়িয়ে পড়তে কোত্থেকে এক ভিখারী এসে হুমড়ি খেয়ে তার কোলে। পেটে টান পড়তে যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলেন তিনি। সংগে অশ্রাব্য খিস্তি। ভিখিরিটা সামলে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে সরে বসল মেঝেতে। হাতজোড় করে তামিল ভাষায় কি যেন বলল। মুখে একগাল হাসি। মিহির সিংএর তুখোড় গালাগালি। প্রায় অর্ধেক কামরা তাঁরই বুকিং। সবগুলোই এসে ভীড় করে লোকটাকে বেধড়ক পেটাতে লাগলো। মিহির সিং হাত উঠিয়ে থামতে বলতে থামল সবাই। বৌ ছেলে খুব বকাবকি করতে লাগল। -ফ্লাইটে আসতে কেন চাইলে না? কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। এক বিশাল ফ্যাক্টরির মালিক। কেন এই জীবনের রিস্ক আর ছিঁচকামো? মিহির সিং কিছুই জবাব না দিয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। গায়ের গেঞ্জি প্যান্ট ছেঁড়া কালো তেলচিটে। প্যান্টের জিপ নেই কিছু চুল উঁকি দিচ্ছে। বিড়বিড় করে বকে যাচ্ছে আর হাসছে। মিহির সিং নিজের জহুরী নজর চয়নের তারিফ করলেন। ব্যাটা বুড়বক পাগল দাঁত বের করে হাসছে। লোকটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে মুখ খুললেন। -এটাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। সবাই হতবাক। মিহির সিং বললেন - তোরা তো জানিস, যার যেমন জীবিকা তার তেমনি নজর তার ফায়দার বস্তুতে পড়ে। মুচির নজর চলতা ফিরতা জুতোয়। তেমনি আমার ট্রেন সফর মানেই নতুন লেবারের খোঁজ। এমনই কি আমার প্লাস্টিকের কারখানায় এতো উন্নতি? ভালো মানুষ সেখানে কাজ করবে কেন। পাঁচ সাত বছরেই টিবি হয়ে ফুটে যাচ্ছে। লেবার ক্রাইসিস। এই তো একটা লেবার পাওয়া গেছে। -তা বলে এই পাগলাটাকে দিয়ে কাজ করাবেন? মেশিন চালাবেন? -এটাকে ধুয়ে মুছে ঠিক করে নিতে পারলেই তো, তাছাড়া আমার যে  আরো অন্য মতলব আছে রে! আমার তো দুটো কিডনিই খতম। তাই তো বিশজনকে হাসপাতালে বয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্ত ভাবছি অযথা নিজের লোকের কিডনি খালাস করে কী লাভ? এইটার পেট থেকে খসানো যায় না? ওটার  কিডনি ম্যাচ না হলে তখন লেবারে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। দে দে ওকে একটু খাবার দে। বৌ জিজ্ঞেস করল, - একই কথা বারবার বকেই যাচ্ছে। কি বলছে কি? -ইন্দে ইয়লো সামান গে তন্নো। -মানে? -কি জানি। মনে হয় পয়সা বা খাবার চাইছে। একজন যাত্রী এগিয়ে এল। ভিখারীটার নাড়া ধরে হ্যাচকা টান মেরে ওঠালো। -ওঠ চল। ভাগ এখান থেকে। এরা খুনি এদের চেয়ে অধম ভিখারী পাপী একটাও দেখিনি। এই লোকটা যা বলছে তার মানে জানেন? তার মানে আমার যা কিছু আছে সব তোমার। নিয়ে নাও। 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন