কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়

হিজল গাছের শরীর থেকে
জ্যোৎস্নার রূপোলী জলের বিন্দুরা নেমে গেলে
সেই বাঁশিওয়ালা কালো ছেলেটি আসে,
তার বাঁশিতে পিলু রাগের সদৃশ এক রাগ
নিশ্চিন্তে খেলা করে জঙ্গলের পাতায় পাতায়,
সাম্বা নাচের তালে তালে
দুলে দুলে নাচে একদল কিশোর কিশোরী
আস্তে আস্তে জড়ো করে
ব্যথার নিরেট দাম
ছেঁড়া জামার উপরে দোলে রঙীন ফুলের  মালা,
মায়েদের পিঠে উঁকি মারে
শিশুর জোনাকি জ্বলা আর্দ্র মুখ
যদিও বুকের খুব কাছে পুঁতে রাখা
ক্ষুধার হাহাকার
পোয়াতি মায়ের প্রাণ জুড়ে ফুটে ওঠে
অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল
কৃষ্ণকায় মানুষগুলো বাদামের মতো চিবোতে থাকে
এক হাহাকার দুঃখের রাত্রি
বংশীবাদক ছেলেটির ঘরে শূন্য হাঁড়ি
শুধু শুকোয় আর শুকোয়,
তার বাঁশির সুরের মতোই,
সাম্বা নাচের ছন্দপতনে জেগে ওঠে
অনাহারের আরো এক জ্যোৎস্না রাত


এক কৃষকের গল্প

হরিৎ আভার মতো জন্মান্তরের
ইতিহাস জমে আছে তার বাদামি চোখে
শরীরের ছায়া জুড়ে আপেল-রঙা স্নেহ লেগে আছে
অস্হি মজ্জ্বায় এখনও গতজন্মের বিষণ্ণ দহন
পৃথিবীর এক পরিশ্রমী চাষীর ফেলে রাখা অতীত
লেখা রয়ে গেলো হিন্দুকোশের সবুজ ঢালে ঢালে
এখন সে পরিবারহীন পরিযায়ী উদাসী পাখি
সোনালী পালকে রক্তের খয়েরি দাগ লেগে
কতদিন মায়ের কোলের ওম্ ওম্ উষ্ণতা পায়নি
এই আর্য বালক ছেলেটির কোমল শরীরখানা
এখন তার পিঠে কালো বুটের একশ আটখানা নীল দাগ
স্বদেশ তাকে বানিয়েছে উগ্রবাদী নাগরিক
চীৎকার করে গলা ফাটিয়ে তার বলতে ইচ্ছে হয়,
‘আমি উগ্রবাদী নই, আমি সাধারণ এক কৃষক’
কারাগারের অন্ধকারে বসে ভাবতে চায়
পহলগাঁওয়ের রাস্তার কথা, উনুনে সেঁকা রুটির গন্ধ
আর শাপলার তরকারির প্রায় ভুলে যাওয়া স্বাদ
এখন আর তার সবকথা ভালো করে মনেই পড়েনা
শুধু তার মগজে 'কথা ভালো করে গ্রথিত হয়েছে
সে কয়েদী নম্বর কত, আর পরিচয় সে দেশদ্রোহী
বাইরে নাকি যুদ্ধ চলছে, দেশকে রক্ষা করার যুদ্ধ
সে ভাবে, একদিন সেও হতে পারতো সেনাপ্রধান
কিন্তু সে'তো রক্ত দেখে সহ্যই করতে পারতো না,
শীত চলে গেলে ক্ষেতে লাগাতো কেশরের চারা
আহাবাতাসে দুলতো নীলকণ্ঠী কেশরের ফুল
চিনার, ম্যাপেলের ছায়ারাও মধুময় স্বপ্ন বুনতো
পোষা হাঁসেরা বুনন করতো অলীক কমলা ডিম
আজ সবকথা হারিয়ে গেছে অন্য জন্মের মতো
এখন তার রক্ত মাংসে সারা বছর শীতের বসত
মস্তিষ্কের হলুদ ঘিলু জমে গেছে বরফের মতো
সে এখন কয়েদী নম্বর একশ চার, আর নাম নেই
আর সে কেশর চাষী নয়, একজন দেশদ্রোহী মাত্র



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন