কোণ
কথা হচ্ছিল একটা পার্ক নিয়ে। না, একটা পার্কের একটা নির্দিষ্ট কোণ নিয়ে। যে কোণাটা’য় তেরছা করে পাতা বেঞ্চটাতে
ওরা দুজন গিয়ে প্রায়ই বসত। এখন বেঞ্চটা খালি। ঠিক খালি না, একফালি আলো এসে পড়েছে। কোন্ সে আলো? নিভন্ত বিকেলের, না উঠতি সকালের, তাও বোঝা মুশকিল একজনের।
এই একজন পার্কের আরেক কোণা থেকে এই কোণাটাকে লক্ষ্য করত। এই কোণায় ওদের আসা যাওয়া, একে অপরের জন্য অপেক্ষা
করা, সবটাই লক্ষ্য করত। কথোপকথন শুনতে না পেলেও ওদের ঠোঁট নাড়ানো দেখে নিজের মতো সংলাপ আন্দাজ করে নিতে
পারত। শেষ যখন রঙ বলে গেল তুলিকে চিত্রকরের ব্যাপারটা, তখন এই একজন
খুব বাঁকা হাসি হেসেছিল, বেশ একটা যেন আত্মতৃপ্তির হাসি। কিন্তু এখন একজনের মুখে হাসি নেই। কপালে ভাঁজ। মুখ একটু হাঁ
করে ঝুলে পড়েছে। নিজেকে বৃদ্ধ বলে বোধ হচ্ছে যেন। অস্থির হয়ে উঠেছে একজন। আলোটার দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। এ আলো যদি উঠতি আলো হয়, তাহলে ওরা পড়ন্ত বেলাতে
আসতেও বা পারে। আর এ আলো যদি শেষ বিকেলের আলো হয়, তাহলে কোনো চান্স নেই আর।
ওরা গেল কোথায়? চিত্রকর বিনে ছবি হবে কেমনে? তা হলে কি তুলি আর রঙ
নিজেরাই ছবি এঁকে নিচ্ছে! চিত্রকরের পরোয়া না করেই! তা কি করে হয়? নাহ! এই একজন বড় অস্থির
হয়ে পড়ছে। আলোটার সঙ্গে কি কথা বলবে সে? জেনে নেবে আলো কোথা থেকে এসেছে? সকাল না
বিকেল থেকে? ওদিকে আলোও যে এই একজনের ছটফটানি টের পাচ্ছে না, তা নয়। ‘উঁহু বাছা, আমি মুখ খুলছি না, যেই জিজ্ঞেস করতে আসবে
ওমনি টুক করে মিলিয়ে যাব’, মনে মনে বলছে আলো। আলোর মনের কথা একজন ঠিক যেন শুনতে পেল। মনে মনে বিশ্রী একটা গালাগাল দিয়ে বলল, ‘তোর বড় মুরোদ!’ দিন রাত
নিভিয়ে দিলে মিটিয়ে দিলে মিলিয়ে দিলে আলো আর কালো কারো অস্তিত্বই থাকবে না। যেন ঐ একজনই পারে বিশ্বব্রহ্মান্ড
চালাতে! সব যেন তার কব্জায়। তবে রঙ তুলি গেল কই? এ তো বড় বিপজ্জনক ব্যাপার! চিত্রকরের পরোয়া না করে নিজেরাই রাঙিয়ে নেবে দশদিক! নিজেরাই
এঁকে নেবে যে কোনো ছবি! বিশ্বাস নেই ওদের, কোনো বিশ্বাস নেই। জ্ঞান-বৃদ্ধ একজন, দিন রাতের ভেদ নেই যার কাছে এমন
একজন, পার্কের ঐ তেরছা আলো এসে পড়া কোণটা’র দিকে তাকিয়ে থাকা একজন, বড় চিন্তিত একজনের মুখে ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে
লাগল একচিলতে হাসি। আলো মিলিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে ঐ এক চিলতেকে দেখে খুব
অবাক। সঙ্গে সঙ্গে এ কোণ ছেড়ে ওই একজনের ঠোঁটের ডগা তাক করে আলো গিয়ে পড়ল। আহ, বেঞ্চে গা এলিয়ে দিচ্ছে একজন। একটা যেন রিল্যাক্স ভাব।
চোখ বুজে আসছে। যেন দেখতে পাচ্ছে রঙ আর তুলি আপন খেয়ালে দশ দিক
রাঙিয়ে এঁকে চলেছে একের পর এক নতুন ছবি। একটা ছবি যেন এইমাত্র ওরা আঁকতে শুরু করল। আহা ধীরে ধীরে একটা যেন রূপ ফুটে উঠছে। আহা ও তো চিত্রকরের ছবি! এই একজন নিমগ্ন চিত্তে যেন দেখতে পাচ্ছে, তারই আদলে রঙ আর তুলি
নিজেরাই এঁকে ফেলছে ওদের চিত্রকরের ছবিখানি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন