কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

১৩) উল্কা


দ্য লাফিং ক্লাব


মিচি দৌড়চ্ছে। ওজন মেশিনের কাঁটাটা বিস্তর হেলে পড়ায় গত দুমাস ধরে  নিয়মিত সে পড়িমরি ভঙ্গিতে ছুটে চলেছে ট্রেডমিল দাপিয়ে। কোনোদিকে তার হুঁশ থাকে না এইসময়। বিপ্‌ বিপ্‌ বাটন টিপে টিপে স্পিড কমিয়ে বাড়িয়ে ছুটতে থাকে। জিমের নাম লাফিং ক্লাব। তবে এখানে হাসির থেকে ঘাম ঝরে বেশি। এটাই মোটো। প্রতি রবিবার বিকেলে সে যখন ট্রেডমিল দাপায়, একদল লোক  হাত উঠিয়ে নামিয়ে হো হো করে হাসে তার জিমের সামনের লনে। এদের কারুর মুখ পরিষ্কার ভাবে দেখা যায় না। যদিও এদৃশ্য অদৃশ্য থাকে সপ্তাহের বাকি ছ’দিন। জিমের যে দিকের দেয়ালের কিছুটা অংশ কাচের, সেদিকে সার বেঁধে  রাখা রয়েছে ট্রেডমিলগুলো। আর তার পাশে লাগানো আয়নায় আট’টা ট্রেডমিল ষোল’টা হয়ে ধরা দেয়। কাচের দেয়ালের ওপারে লনের সবুজ ঘাস এই কৃত্রিম  দৌড়কেও কেমন একটা ন্যাচারাল করে তোলে।

লাফিং ক্লাবের বিজ্ঞাপনটা যখন মিচির হাতে এসে পড়েছিল, তখন কিছুটা অবাকই  লেগেছিল তার। আর পাঁচটা লাক্সারি জিমের মতো হলেও একদম নামমাত্র খরচে শরীর ফিট রাখার ব্রহ্মাস্ত্র যেন! ফিনিক্স ড্রাইভের কাছে তাই যাতায়াতেও অসুবিধা  হয়নি। যেন এমনই একটা জিম খুঁজছিল সে। জিম ইন্সট্রাকটর অমায়িক মানুষ। ভর্তি হওয়ার পর বেশ সুফল পেয়েছে সে। ওজন মেশিনের কাঁটা সাড়া দিয়েছে তাতে।

আজ রবিবার। মিচি এই জিমে দুমাস শেষ হয়ে তিনমাসে পড়েছে। জিম  ইন্সট্রাকটরের আজ নতুন ডায়েট আর জিমচার্ট দেওয়ার কথা। শেষ দুপুরের বিকেলে হালকা রোদমাখা লনে হাসির দৃশ্যে খানিক বিরক্তি এনে ট্রেডমিল থেকে নেমে এলো সে। পাশে রাখা তোয়ালেতে আলতো করে ঘাম মুছে নিয়ে তাকাল  ইন্সট্রাকটর ডেস্কের দিকে। এই মুহূর্তে একজন অতিকায় মহিলা অ্যাডমিশন নিলেন জিমে। ওয়েলকাম টু লাফিং ক্লাব... জিম ইন্সট্রাকটর হাত মিলিয়ে স্বাগত জানালেন নতুন ক্যান্ডিডেটকে। মিচি জানে, এবারে এনার দৌড় শুরু হবে ট্রেডমিলে।  ইন্সট্রাকটর তার ডেস্কের ওপর চার্টগুলো মিচিকে ঈঙ্গিত করে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নতুন মিশনে।

এখন ঘড়িতে চারটে দশ। মিচি দাঁড়িয়েছে একদম লাইনের শেষে। এখান থেকে যেটুকু নজরে পড়ে, সেটাই হেসে ফেলবার জন্য বেশ প্রাকৃতিক মনে হয়। সামনে  দাঁড়ানো তিনটি মাথার ফাঁক ফোকর দিয়ে চোখে পড়ছে কাচের ঝকঝকে দেওয়াল, যার ওপারে সারি দিয়ে রাখা গোটা আটেক ট্রেডমিল। তার একটিতে হাঁসফাঁস করতে করতে দৌড়চ্ছেন সেই অতিকায় ভদ্রমহিলা, যিনি একটু আগেই ভর্তি হলেন  জিমে। ইন্সট্রাকটর গম্ভীর মুখে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ট্রেডমিলের প্যাঁচ পয়জার। পাশে  অ্যাব স্লিমারে অদ্ভুতভাবে দুলছেন একজন, আবার খানেক অস্পষ্ট দৃশ্যমান জিম  সাইকেলে সোঁ সাঁ প্যাডেল ঘুড়িয়ে চলেছেন কোনো মেদ দায়গ্রস্ত ক্যান্ডিডেট। এত দৃশ্যের মাঝে মিচির হঠাৎ চোখ চলে যায় এই দারুণ চলচ্চিত্রের কাচ পর্দার ঠিক ওপরে, যেখানে কাঠের পাটাতনে ঝকঝকে হরফে লেখা দ্য লাফিং ক্লাব



1 কমেন্টস্: