রঙ
জয়শী
ঊনবিংশ শতাব্দীর ঝাঁ চকচকে প্রাসাদোপম বাড়িগুলো সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত ভূতুড়ে বাড়ির মতো, কিয়েভের ভজিহেনকায়। ইউক্রেনের ধনীদের কথা ভেবে তৈরি হয়েছে রাজধানী কিয়েভেতে এই আবাসনগুলো, যা মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। বৈভবের এতটুকু অভাব নেই, রূপকথার মতো সাজা্নো এই আবাসনে। কিন্তু বিশেষ ক্রেতা জোটেনি ফ্ল্যাটগুলো কেনার জন্য। উচ্চাশী অরি অনেক ভেবে চিন্তে এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটখানা বিয়ের যৌতুক হিসেবে নিয়েছিলো মণিকার বিত্তশালী বাবার কাছ থেকে। ২০০৮ থেকে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা শুরু হবার পর কেউ আর এই বাড়িগুলো কিনতে সাহস করেনি। অরির মতো দু’চারজন যারা এখানে বাড়ি কিনে ফেলেছে মন্দার আগে, তারাও এখন সরে পড়ছে ধীরে ধীরে। প্রায় জনমানবহীন এই আবাসনে মণিকা বড্ড নিঃসঙ্গ। বাড়ি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তাকে পড়ে থাকতে হবে এখানে -- এই তার শাস্তি। মন্দা বাজার, ক্রেতা না জোটা, ফ্ল্যাটগুলো খালি পড়ে থাকা -- সব দোষ যেন মণিকার! অরির তাকে সঙ্গ দেবার সময় নেই, ব্যাবসার কাজে সদাই ব্যস্ত।
কিয়েভেতে দীর্ঘ শীতের দিনগুলো বড্ড ঘোলাটে। সূর্যের দেখা পাওয়া ভার। কদাচিৎ কখনও রোদের মুখ দেখলেই সবার মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। তখন কোনো না কো্নো কারণে সবাই পথে নেমে পড়ে আর পারস্পরিক প্রাত্যহিক অভিবাদনের সাথে সাথে হঠাৎ পাওয়া রোদ ঝলমলে দিনটার জন্য খুশির সুর বেজে ওঠে। না হলে শীতের মেঘলা দিনগুলোয়, যে যার মতো কোটরবন্দী। বৈচিত্র্যহীনতার অবসাদ কাটাতে তখন মণিকার প্রায় সারাদিন কাটে ইজেলের সামনে। তার আকুল হৃদয় সাতরঙা পাখা মেলে উড়তে চায় ক্যানভাসে। কিন্তু গোমড়া প্রকৃতি যেন শুষে নেয় তার অনুরাগের বর্ণগুলো। দিনের শেষে কিছু ধূসর আঁচড় ছাড়া ছবিতে আর কো্নো বর্ণবৈচিত্র্য খুঁজে পায় না সে। দৈনন্দিনের দুঃসহ একাকীত্বের মাঝে অসহ্য লাগে এই বিবর্ণতা। চিত্রের লাল নীল সবুজ হলুদ -- ফুল পাতা আকাশ প্রবল তুষার ঝঞ্ঝায় পথ হারিয়ে ধীরে ধীরে ডুবে যায় বিষণ্ণতার কুয়াশায়। ধূসর বিষাদগুলো উজ্জ্বল রঙে ঢেকে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে সে, কিন্তু প্রকৃতির মলিনতা থাকে তার চিত্ত জুড়ে।
অন্তরদ্বন্দ্বে বিক্ষত মন একবার বলে, যথেষ্ট হয়েছে আর নয়...
পরক্ষণেই বলে, না না, হেরে যেও না...!
ক্লান্ত মন আবার ফিরে চলে লাল নীল সবুজ হলুদের ব্যর্থ খোঁজে। বিবর্ণ হতে থাকে অরির এবং তার বিবাহিত জীবন। একঘেয়ে বরফ শৈত্য আছন্ন করে রাখে তাদের দাম্পত্যের দিন মাস বছর।
আজ মণিকার ক্যানভাস খালি; শুকনো খটখটে। ইতঃস্তত ছড়ানো ছেটানো রঙ তুলি সব বাক্সবন্দী। অসমাপ্ত ব্যর্থ চিত্রের বিষণ্ণ রঙগুলোর ওপর মোটা করে লেপে দেওয়া উজ্জ্বল সাদা রঙ শেষ বিকেলের মেঘ ভাঙা রোদে নিজেই রঙিন। কালো ছায়ার জটিল রেখা উধাও... যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এক নতুন প্রচেষ্টাকে। মণিকার আবেদনের উত্তরে চিঠি এসেছে তার পুরনো কলেজ থেকে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর। বিয়ের আগের অসমাপ্ত পড়াশোনা শেষ করার অনুমতি পত্র। ইজেলের সামনে তখন মণিকা বিভোর, কল্পনায় এক রামধনু রঙ আঁকতে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর ঝাঁ চকচকে প্রাসাদোপম বাড়িগুলো সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত ভূতুড়ে বাড়ির মতো, কিয়েভের ভজিহেনকায়। ইউক্রেনের ধনীদের কথা ভেবে তৈরি হয়েছে রাজধানী কিয়েভেতে এই আবাসনগুলো, যা মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। বৈভবের এতটুকু অভাব নেই, রূপকথার মতো সাজা্নো এই আবাসনে। কিন্তু বিশেষ ক্রেতা জোটেনি ফ্ল্যাটগুলো কেনার জন্য। উচ্চাশী অরি অনেক ভেবে চিন্তে এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটখানা বিয়ের যৌতুক হিসেবে নিয়েছিলো মণিকার বিত্তশালী বাবার কাছ থেকে। ২০০৮ থেকে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা শুরু হবার পর কেউ আর এই বাড়িগুলো কিনতে সাহস করেনি। অরির মতো দু’চারজন যারা এখানে বাড়ি কিনে ফেলেছে মন্দার আগে, তারাও এখন সরে পড়ছে ধীরে ধীরে। প্রায় জনমানবহীন এই আবাসনে মণিকা বড্ড নিঃসঙ্গ। বাড়ি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তাকে পড়ে থাকতে হবে এখানে -- এই তার শাস্তি। মন্দা বাজার, ক্রেতা না জোটা, ফ্ল্যাটগুলো খালি পড়ে থাকা -- সব দোষ যেন মণিকার! অরির তাকে সঙ্গ দেবার সময় নেই, ব্যাবসার কাজে সদাই ব্যস্ত।
কিয়েভেতে দীর্ঘ শীতের দিনগুলো বড্ড ঘোলাটে। সূর্যের দেখা পাওয়া ভার। কদাচিৎ কখনও রোদের মুখ দেখলেই সবার মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। তখন কোনো না কো্নো কারণে সবাই পথে নেমে পড়ে আর পারস্পরিক প্রাত্যহিক অভিবাদনের সাথে সাথে হঠাৎ পাওয়া রোদ ঝলমলে দিনটার জন্য খুশির সুর বেজে ওঠে। না হলে শীতের মেঘলা দিনগুলোয়, যে যার মতো কোটরবন্দী। বৈচিত্র্যহীনতার অবসাদ কাটাতে তখন মণিকার প্রায় সারাদিন কাটে ইজেলের সামনে। তার আকুল হৃদয় সাতরঙা পাখা মেলে উড়তে চায় ক্যানভাসে। কিন্তু গোমড়া প্রকৃতি যেন শুষে নেয় তার অনুরাগের বর্ণগুলো। দিনের শেষে কিছু ধূসর আঁচড় ছাড়া ছবিতে আর কো্নো বর্ণবৈচিত্র্য খুঁজে পায় না সে। দৈনন্দিনের দুঃসহ একাকীত্বের মাঝে অসহ্য লাগে এই বিবর্ণতা। চিত্রের লাল নীল সবুজ হলুদ -- ফুল পাতা আকাশ প্রবল তুষার ঝঞ্ঝায় পথ হারিয়ে ধীরে ধীরে ডুবে যায় বিষণ্ণতার কুয়াশায়। ধূসর বিষাদগুলো উজ্জ্বল রঙে ঢেকে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে সে, কিন্তু প্রকৃতির মলিনতা থাকে তার চিত্ত জুড়ে।
অন্তরদ্বন্দ্বে বিক্ষত মন একবার বলে, যথেষ্ট হয়েছে আর নয়...
পরক্ষণেই বলে, না না, হেরে যেও না...!
ক্লান্ত মন আবার ফিরে চলে লাল নীল সবুজ হলুদের ব্যর্থ খোঁজে। বিবর্ণ হতে থাকে অরির এবং তার বিবাহিত জীবন। একঘেয়ে বরফ শৈত্য আছন্ন করে রাখে তাদের দাম্পত্যের দিন মাস বছর।
আজ মণিকার ক্যানভাস খালি; শুকনো খটখটে। ইতঃস্তত ছড়ানো ছেটানো রঙ তুলি সব বাক্সবন্দী। অসমাপ্ত ব্যর্থ চিত্রের বিষণ্ণ রঙগুলোর ওপর মোটা করে লেপে দেওয়া উজ্জ্বল সাদা রঙ শেষ বিকেলের মেঘ ভাঙা রোদে নিজেই রঙিন। কালো ছায়ার জটিল রেখা উধাও... যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এক নতুন প্রচেষ্টাকে। মণিকার আবেদনের উত্তরে চিঠি এসেছে তার পুরনো কলেজ থেকে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর। বিয়ের আগের অসমাপ্ত পড়াশোনা শেষ করার অনুমতি পত্র। ইজেলের সামনে তখন মণিকা বিভোর, কল্পনায় এক রামধনু রঙ আঁকতে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন