অলোকপর্ণাঃরাঢ়ের রূপকথা
অনুপম মুখোপাধ্যায়
বাস চলছে। তোমাকে দেখছি। দেখছি ফরসা জানালায় তোমার রোগা কালো কনুই। একটুখানি ছড়ে গেছে কি?
দেখছি কেমন পাশের লোকটির থেকে মিহি দূরত্ব রেখেছ। তোমার সস্তা ব্লাউজের হুক আপাতত কেউ গুনতে পারবে না। শাড়ি পরা পছন্দ করো কি তুমি? শাড়ি তো বড্ডো বিচ্ছিরি পোশাক।
চোখ বাইরের দিকে। অঘ্রাণের ঘষা রং রাঢ় মাইলের পর মাইল বিজন হয়ে আছে। ময়লা বাতাস। হঠাৎ দেখা দিচ্ছে দেওয়ালের আলকাতরা রং। চালের খড়। উঁচু উঁচু বেঢপ আল। যেখানে সেখানে নিয়ম ছাড়াই দাঁড়িয়ে পড়া তালগাছ।
কয়েকটা তালগাছ একজোট হলে তাদের পিছনে কিছু জল হাজির হয়।
ওসব তোমার চেনা। তুমি দেখছ না। ভাঁটশ্যাওড়া জিউলি ময়নাকাঁটা আলোকলতা বনধুঁধুল এইসব জীবনানন্দীয় নাম তুমি জানো না। লক্ষ্য করেছ কি, তোমাদের দেশে বাঁশের সবুজ গোড়া কেমন মাটির থেকে লাল ছোপ তুলে নেয়? গতকাল বিকেলে তো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ ছিল। ফেরার সুযোগ তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
স্বস্তি নার্সিংহোমে কাজ পেয়েছ। আজ জয়েন করতে যাচ্ছ।
আজ বাড়িতে স্বস্তি?
অস্বস্তি?
উল্লাস?
মা কি আজ রান্নাঘর থেকে বেরোননি?
মাঝেমাঝে চোখ ফিরিয়ে সিলিং-এর রডে আঁকড়ে থাকা সারি সারি হাতগুলো দেখছ। হয়তো খুঁজছ এক বিড়িগন্ধী হাত, তামাম আবহাওয়ার ছাপ তার তৈলাক্ত শিরাগুলোতে। তোমার রূঢ় বাবা কি আজ তোমার সঙ্গে যাচ্ছেন? জয়েন করিয়ে ফিরে আসবেন? উনি বোধহয় সিট পাননি। কিংবা তোমার দাদাকে দেখতে পাচ্ছি না।
প্রেমিকটি কি আজ সকালে ফোন করেছে, নাকি তুমিই পায়খানায় লুকিয়ে…
ও মনে হয় মুম্বাই যেতে পারেনি এবারও।
অবিশ্যি তোমার একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যামেরাওলা মোবাইল হয়েছে।
স্কুল কি বাড়ির কাছেই ছিল? সাইকেলে যেতে? তোমাকে তো টিকিট কাটতে দেখলাম না। রোজকার খুচরোর আওয়াজ তোমার এবার শুরু হবে। দুটো আঙুলের ফাঁকে টিকিট রাখতে তুমি এবার শিখে নেবে। শিখে নেবে কন্ডাক্টরের সঙ্গে কেমন ভাব করতে হয়। স্টপেজ ছাড়াই নামিয়ে দেবে সে তোমাকে, হেল্পারের ইয়ার্কি গ্রাহ্য করবে না।
ডান হাতটার ব্যাপারে একটু অন্যমনা হয়ো। বাঁ হাতে রড ধরো।
যখন এই বাস থেকে নামবে, মনে রেখো হেঁটে নয়, সকলের পায়ের উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছ।
বরং
বাস চলছে। তোমাকে দেখছি। দেখছি ফরসা জানালায় তোমার রোগা কালো কনুই। একটুখানি ছড়ে গেছে কি?
দেখছি কেমন পাশের লোকটির থেকে মিহি দূরত্ব রেখেছ। তোমার সস্তা ব্লাউজের হুক আপাতত কেউ গুনতে পারবে না। শাড়ি পরা পছন্দ করো কি তুমি? শাড়ি তো বড্ডো বিচ্ছিরি পোশাক।
চোখ বাইরের দিকে। অঘ্রাণের ঘষা রং রাঢ় মাইলের পর মাইল বিজন হয়ে আছে। ময়লা বাতাস। হঠাৎ দেখা দিচ্ছে দেওয়ালের আলকাতরা রং। চালের খড়। উঁচু উঁচু বেঢপ আল। যেখানে সেখানে নিয়ম ছাড়াই দাঁড়িয়ে পড়া তালগাছ।
কয়েকটা তালগাছ একজোট হলে তাদের পিছনে কিছু জল হাজির হয়।
ওসব তোমার চেনা। তুমি দেখছ না। ভাঁটশ্যাওড়া জিউলি ময়নাকাঁটা আলোকলতা বনধুঁধুল এইসব জীবনানন্দীয় নাম তুমি জানো না। লক্ষ্য করেছ কি, তোমাদের দেশে বাঁশের সবুজ গোড়া কেমন মাটির থেকে লাল ছোপ তুলে নেয়? গতকাল বিকেলে তো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ ছিল। ফেরার সুযোগ তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
স্বস্তি নার্সিংহোমে কাজ পেয়েছ। আজ জয়েন করতে যাচ্ছ।
আজ বাড়িতে স্বস্তি?
অস্বস্তি?
উল্লাস?
মা কি আজ রান্নাঘর থেকে বেরোননি?
মাঝেমাঝে চোখ ফিরিয়ে সিলিং-এর রডে আঁকড়ে থাকা সারি সারি হাতগুলো দেখছ। হয়তো খুঁজছ এক বিড়িগন্ধী হাত, তামাম আবহাওয়ার ছাপ তার তৈলাক্ত শিরাগুলোতে। তোমার রূঢ় বাবা কি আজ তোমার সঙ্গে যাচ্ছেন? জয়েন করিয়ে ফিরে আসবেন? উনি বোধহয় সিট পাননি। কিংবা তোমার দাদাকে দেখতে পাচ্ছি না।
প্রেমিকটি কি আজ সকালে ফোন করেছে, নাকি তুমিই পায়খানায় লুকিয়ে…
ও মনে হয় মুম্বাই যেতে পারেনি এবারও।
অবিশ্যি তোমার একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যামেরাওলা মোবাইল হয়েছে।
স্কুল কি বাড়ির কাছেই ছিল? সাইকেলে যেতে? তোমাকে তো টিকিট কাটতে দেখলাম না। রোজকার খুচরোর আওয়াজ তোমার এবার শুরু হবে। দুটো আঙুলের ফাঁকে টিকিট রাখতে তুমি এবার শিখে নেবে। শিখে নেবে কন্ডাক্টরের সঙ্গে কেমন ভাব করতে হয়। স্টপেজ ছাড়াই নামিয়ে দেবে সে তোমাকে, হেল্পারের ইয়ার্কি গ্রাহ্য করবে না।
ডান হাতটার ব্যাপারে একটু অন্যমনা হয়ো। বাঁ হাতে রড ধরো।
যখন এই বাস থেকে নামবে, মনে রেখো হেঁটে নয়, সকলের পায়ের উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছ।
বরং
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন