কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪

মৌ চক্রবর্তী

 

‘রাত ভরে বৃষ্টি : অনন্যার নির্দেশনায় : লিপিকরণে




প্রতি,

এই শ্রাবণ মাসে থিয়েটারের কথা লিখতে বললেন সম্পাদক কাজল সেন। যথারীতি দেরি চলছি। তক্ষুনি মনে পড়ল, আরে, একটা লেখা তো বৃষ্টি নাম জুড়ে দিতেই পারি। থিয়েটারের অনেক ধারা। সেই ধারায় অনন্যা কাজ করছে। প্রথমে ওঁর অভিনয় দিয়েই শুরু। পরে একসময় ভেবে ফেলল, নির্দেশনা দেবে। না, নিছক খামখেয়ালিপনা নয়। রীতিমতো রাত জাগা প্রোডাকশন ভাবনা। তড়ি এবং ঘড়ি।

একদিন দেখা হল একাডেমিতে। তাপর যা হয় থিয়েটারি আড্ডা। চা-পান, চপ, টেবিলে ঠেস দিয়ে  দাঁড়ানো। গাছে গাছে হাসি রাশি রাশি। সঙ্গে সঙ্গে নামল বৃষ্টি। সে বৃষ্টিতে আড্ডায় চলে এল অনন্যার নির্দেশনার গল্প। কেমন করে অঙ্কুরজির স্ক্রিপ্ট এল ওঁর হাতে। অনন্যার কথায় সেই গল্প শোনার গল্প—

এক) ‘রাত ভরে বৃষ্টি’র ভাবনা যার হাত ধরে আসে তিনি হলেন দেবেন্দ্ররাজ অংকুর এন এস ডি দিল্লি তিনি এই নাটকটি হিন্দিতে অনুবাদ করেছিলেন। উনি এই নাটকটি হিন্দিতে অনুবাদ করার পর গল্প নাটকের আঙ্গিকে মঞ্চস্থ করেছিলেন। গল্প-নাটক এর আগেও দলগতভাবে মঞ্চস্থ হয়েছে। এবং এটা একটা ধরনের ভাবনা। অভিনেতা, নির্দেশক কল্যাণী কলামণ্ডলম, শান্তনু দাস এরকম কাজ করিয়েছিলেন দলে।

কিন্তু অঙ্কুরজির কাজ ছিল অন্যরকম। তিনি চেয়েছিলেন যে ওনার স্ক্রিপ্ট যেটা উনি অনুবাদ করেছিলেন সেটা নিয়ে অনন্যা কাজ করুক দলে।

দুই) এর সূত্রপাত এরকম হয়েছিলসম্ভবত ২০১৬ এর জুন বা জুলাই হবেএখানে একটি কথা  বলবার যে এই সময় পর্যন্ত অর্থাৎ যখন থেকে এই নাটক নিয়ে ভাবনা চলছে, তার আগে অনন্যা কেবলই অভিনয়-শিল্পী হয়ে কাজ করেছে। অনন্যা ভেবে ফেলে, ও নির্দেশনা দেবে। অব্যশই স্ক্রিপ্ট পড়ার পর।

অনন্যার কাছে থ্রিলিং এটা। ও চূড়ান্ত উৎসাহে হাতের কাছে বই না থাকায় অত্যন্ত উৎসাহে ইন্টারনেট থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করেই পড়ে

এরপর, অনন্যার কথায়, কোন বিষয়ে অত্যন্ত উৎসাহ থাকলে রাতদিনের জ্ঞান থাকে না। তখন তো সেটাই মাথার মধ্যে চলতে থাকে। সেভাবেই আর কী রাত ভরে বৃষ্টি দিনরাত তখন ভাবাচ্ছিল এবং একটা বিষয়ে কাজ করতে গেলে পরে যতটা একাগ্রতা দরকার হয় সেটা অবশ্যই একজন শিল্পী হিসেবে নাট্যকর্মী হিসেবে রাখার চেষ্টায় ছিল অনন্যা। অর্থাৎ, ওর মধ্যে শুরু হয়েছে এক ক্রিয়া। এসময় অঙ্কুরজি কুরিয়ারে ওঁর হিন্দি স্ক্রিপটাও পাঠিয়ে দেন।

তিন) উপন্যাস আগেই পড়া ছিল অনন্যার। তাই অনন্যা বুঝতে পারে যে, অঙ্কুরস্যার যে অনুবাদ  করেছেন সেখানে তিনি পুরো উপন্যাসটা রাখেননি হুবহু রাখেননি তিনি শেষের দিকে বেশ খানিকটা অংশ বাদ দিয়েছিলেন। এভাবেই নাট্যরূপ দিয়েছিলেন।

সেটাই তো স্বাভাবিক, কোন উপন্যাস যখন নাট্যরূপ দেয়া হয় তার মধ্যে কিছু পার্থক্য ঘটে যায় কারণ মঞ্চ। আর পাঠকের একক পাঠে – পার্থক্য তো থাকেই। সেইভাবে মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য চলে আসে। এক্ষেত্রে সেই পার্থক্যগুলি ছিল স্ক্রিপ্ট করার কারণে।

অনন্যা অঙ্কুরজির স্ক্রিপ্ট পড়ার পর, আরেকটা অন্যরকম উপস্থাপনা করার দিক থেকে ভাবে। ওঁর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। যেভাবে অঙ্কুরজির স্ক্রিপ্ট, সেভাবে ও নাটকটা করবে না। পুরো উপন্যাসটাই রাখবে। এবং পুরো উপন্যাসের মধ্যে হয়তো কিছু অংশ নাটকের কারণে বাদ দিতে হতে পারে। কারণ, নাটকের সময়সীমার কারণে বা মঞ্চায়নের কারণেকিন্তু উপন্যাসের যে গড়ন  বা উপন্যাস যেভাবে শেষ হয়েছে নাটকীয় সেভাবেই হচ্ছে ও সেভাবেই শেষ করার কথা ভেবে ফেলে।

প্রশ্ন, কেন এরকম ভাবা?

অনন্যা কারণ বিশ্লেষণ করে দেয়। কারণ, উপন্যাস মূল উপন্যাসের কাঠামোকে বুঝতে গেলে বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে উপন্যাসটি। এবং উপন্যাস পড়তে পড়তে এটা মনে হয়েছে যে উপন্যাসের যে দীর্ঘ যে অবয়ব সেটা থেকে নাটককে বের করে আনতে গেলে অনেকটাই এডিট করতে হবে বিষয়টা যখন আরগভীরভাবে ভেবে ফেলল, তখন একসময় গল্প থেকে স্ক্রিপ্ট করে ফেলে। মধ্যে কিছু কিছু বাদ অবশ্যই দেওয়া হয়। কিন্তু তিনটি চরিত্র মানে যেটা প্লটের যে প্লটের যে কাঠামো, যে চরিত্র তিনটি, তাদেরকে রেখে দেওয়া গেল।

উপন্যাসের মূলত তিন চরিত্র মালতী জয়ন্ত এবং নয়নাংশু। মালতির বর নয়নাংশু।  তার জয়ন্তর সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করে, এমনটা উপন্যাসে পাই। আমরা জানি এই উপন্যাসের একটি বিশেষ দিক তৈরি হয়েছিলএকটা সময় যে উপন্যাসের প্লটের কারণে এটা আদালত থেকে ব্যান করে দেয়া হয়েছিল।  পরে অবশ্য আবার এটি আমরা পাই। কিন্তু বিষয় হচ্ছে উপন্যাসের এই তিন চরিত্রের মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা অনন্যার কাছে মঞ্চে দেখাতে গেলে চ্যালেঞ্জ। ওঁর কথায়, অন্যভাবে দেখাতে হবে কিন্তু সেটা কিভাবে এবং এর সঙ্গে বলা যে এই বিষয়গুলো শুধু দেখানোর জন্য নয় এই বিষয়গুলো দেখানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয়। ঙ্কুরজি যখন রাত ভরে বৃষ্টি হিন্দিতে করেছিলেন, তখন তিনি মাত্র তিনটি চরিত্র নিয়ে করেছিলেন। জয়ন্ত, মালতী এবং নয়নাংশুএবং উনি জয়ন্তকে প্রায় আনেননি এবং উনি সেটার ব্যাখ্যায় বলেওছিলেন যে জয়ন্তকে এখানে না আনলেও চলে। এবং উনি এটাও জানিয়েছিলেন কাজ করতে করতে যে আমি উনি চাইছেন যে আমি যেন দুটো ক্যারেক্টার নিয়ে করি যেভাবে উনি ভেবেছেন। কিন্তু ওই যে বললাম যে উপন্যাস পড়ার ফলে সারাক্ষণই মাথার মধ্যে সেটা পাক খাচ্ছিল এবং স্ক্রিপ্ট করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল যে এখানে যে যে চরিত্র যেভাবে স্যার দেখেছেন সেভাবে আমি কেন দেখব। আমি একটা বিশেষ ভেবে ফেললাম সেটা হচ্ছে যে মালতী বলে যে চরিত্রটি রয়েছে এখানে মালতী একজন কেন হবে? মালতী তো অনেকে হতে  পারে।

এখানে উল্লেখের প্রয়োজন যে, অনন্যা নিজের স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী চরিত্র রাখে ছ’জন। ওঁর মনে হতে  থাকল যে, মালতী কেন একজন হবে? নয়নাংশু কেন একজন হবে? মালতী তো দু-তিনজন হতে পারে এবং নয়নাংশ দু-তিনজন হতে পারে এবং সেটা কিভাবে করেছিল ও …

অনন্যার কথায়, এই ছ’জনের মধ্যে মালতীকে ভাগ করেছি বয়স অনুযায়ী। মালতী হচ্ছে কৈশোরের   এক মালতী যৌবনের এবং উপন্যাসে মালতীকে যে বয়সে দেখানো হচ্ছে সেই মালতী। ঠিক সেভাবে নয়নাংশুর কথাও বলি, নয়নাংশুকে দেখানো হল তার ছেলেবেলা এবং উপন্যাসে যে সময় এসে চরিত্র হিসেবে উপস্থিত সেই ভাবেই নাটকেও তাকে রাখা হল।

অংকুরজির গল্প-নাটকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আমরা দেখেছি তা হল উনি খুব প্রপস ব্যবহার করেন না। মানে সেট তেমন বেশি কিছু ব্যবহার করেন না। সেট ছিমছাম। আবহ উনি উনি লাইভ পছন্দ করেন। বলেন যে না হলেও চলে যাবে। ওনার পদ্ধতিটা হল যে যে চরিত্রটা অভিনয় করছে তারা নিজেরা মুখে বা অন্য কোন ভাবে তারা সাউন্ড তৈরি করতে পারে এবং তারা গান গাইতে পারে এইভাবে একটা আবহ তৈরি  এবং সঙ্গীত তৈরি হতে পারেএরকম ভাবনায় কাজ করেন অঙ্কুরজি। খুব মজার একটা অন্যরকম ভাবনা অন্যরকম কাজ যেভাবে নাটকের মধ্যে গভীরতা আরও বেড়ে যায়।

এবারে জানতে ইচ্ছে, আচ্ছা মালতী কে করল? অনন্যা নিজে। মানে, মালতীর যেটা যে সময় উপন্যাস  বা নাটক, যে সময় দেখানো হচ্ছে সেই চরিত্রায়ন নিজে করেছিলঅভিনয় ও নির্দেশনা দুইই।  হ্যাটস অফ অনন্যা।

অনেক আগে এরকমই তো করতে চেয়েছিলেন নাটুকে শিল্পী-কন্যেরা।

আর অনন্যা এবং অনন্যাদের হাতে তার ব্যাটন।

_ ইতি

একুশ শতকের ফ্ল্যাশব্যাক সত্তাধিকারী

 

(আলোকচিত্র : শান্তনু দাস ও অনন্যা দাস, দল কল্যাণী কলামণ্ডলম)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন