ধারাবাহিক উপন্যাস
হে নেপথ্যচারিণী
(১১)
প্রশ্বাস
পাঁচদিন ছুটির আয়োজন
ঘটল বটে। তবে তা শর্তসাপেক্ষে। আসলে 'জরুরি' তকমাবিশিষ্ট পেশার একটি অন্ধকারময় দিক,
সমাজের উৎসব আনন্দর দিন এই পেশাধারী মানুষদের কাছে বিভীষিকার মতো। তথাগত অধিকারীর কাছে
শুনছিলাম। উৎসবের পাঁচদিন তার দায়িত্ব লেকটাউনের ভীড় সামলানো। আমি আর অত্রি, যেহেতু
দুজনেই এতোদিন থাকছি না, ময়নাতদন্তর ভার দেওয়া হল জয়ন্তকে। জয়ন্ত নতুন যোগ দিয়েছে আমাদের
কলেজে। সদ্য পাশ করা চনমনে তরুণ। অত্রির থেকে বছর দুএকের বড়ো। অত্রির ছুটি পাশ আগেই
করেছিলাম। আমারটা করতে দেরি হয়ে গেল। এই গড়িমসি দেখে আশুদাই ওদের বলল ট্রেনের টিকিট
কেটে নিতে। আমাদেরটা বাদ রাখতে বলল। আমাকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আশুদা বলল, "কী
এতো তোদের জরুরি পরিষেবা বুঝি না। একটা ছুটি পেতে এতো?" মনে মনে হাসি। একসময় তুমি
যখন দোর্দণ্ডপ্রতাপে ডাক্তারি করছ আশুদা, তখন তো তোমার ছেলে ঋকের জন্মদিনের পার্টিতে
আসবারও সুযোগ পেতে না। সেসব কথা শুনেছি। ভালো যে সেসব ভুলে এখন আমাকেই পেশার দোহাই
দিয়ে দুষছো।
এক্ষেত্রে আরও একটা
কথা বলা দরকার। সুচন্দ্রার জন্মদিনের রাতের পর মনসুর গাজীকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে
না। আরও আশ্চর্যের কথা, শরতের হঠাৎ বর্ষণের পর ফিকে নীল হয়ে আসা আকাশের মতোই অত্রি
আর সুচন্দ্রার কথোপকথনে সেই অদ্ভুত প্ল্যানচেটের কোনও উচ্চবাচ্চা নেই। এটা একাংশে হতে
পারে পরিণত ভাবনার প্রকাশ, আবার হয়তো অন্যদিক দিয়ে ভাবলে এক চরম অনিশ্চয়তা। সে যাইহোক।
ছুটি মিলতেই প্লেনের টিকিট জোগাড় করতে হলো। কলকাতা থেকে রায়পুর। রায়পুরের বিমানবন্দর
মানাতে। সেখান থেকেই আমরা অত্রিদের গাড়িতে যোগ দিয়ে সড়কপথে যাব জগদলপুর।
প্লেন আকাশে বহমান হলেই
নিজের এতো চেনা শহরটা কেমন অচেনা লাগতে থাকে। ছোট ছোট শিরা উপশিরার মতোই কতো মানুষের
জীবন আর জীবিকা জুড়ে আছে এর সঙ্গে। ধীরে ধীরে সেই সব সত্যিকাহিনীগুলো এক এক করে আকাশে
মেঘের ধোঁয়াশায় কেমন অলীক হয়ে যায়। আশুদা এই সফরে আসার সময় একটি কাজ করে বসেছে যা টের
পেলাম এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেকিংএ। লাগেজ স্ক্যানারে আসতেই নিরাপত্তারক্ষী আমাদের
আলাদা করে ডেকে হ্যাণ্ডলাগেজ দেখাতে বললেন। আশুদার লাগেজ থেকে অগত্যা বের হল আমাদের
শম্ভুবাবু লেন থেকে সংগ্রহ করা শিকল পরা মোমের হাতিটি। রক্ষীটি বলল, এটা দাহ্য বলে
আলাদা করে ডাকা হল। আর এর ভিতরটা ফাঁপা। তাই আমাদের আটকানো হলো। হঠাৎ এই ছত্তিশগড় সফরের
পিছনে আশুদার কী পরিকল্পনা লুকিয়ে আছে জানি না, তবে এই মোমের হাতি সঙ্গে করে আনার যুক্তি
আশুদার কাছে জানবার কৌতূহল প্রশমিত করতে পারলাম না। আমার প্রশ্ন শুনে আশুদা শান্ত সুরে
বলল, "মন বলছে এই সফর আমাদের অনেকগুলো প্রশ্নর উত্তর এনে দেবে। তার একটি উত্তর
এই হাতির পেটে আছে, আমি নিশ্চিত। যথাসময়ে তার হদিশ পাবি।"
বাকি সফরে আর তেমন কথা
হলো না আমাদের। মানা বিমানবন্দরটি কলকাতার তুলনায় বেশ ছোট। সেখানে একটা ফরচুনার নিয়ে অপেক্ষা করছিল অত্রিরা। আমরা উঠে
পড়তেই আবার দক্ষিণদিকে জগদলপুরের উদ্দেশ্যে আমাদের সফর চালু হল। পথে যেতে যেতে বদলে
যাওয়া বনপ্রান্তর দেখতে লাগলাম। একে একে পার হলাম দামতারি, চারামা, কেশকাল ঘাট। পাহাড়
কেটে কেটে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পথগুলির নাম 'ঘাট'। কেশকালের ঘাটটি বেশ দুর্গম। একদিকে
খাড়া পাথরের খাদ, অন্যদিকে ঘন শাল সেগুন বিস্তৃত অরণ্য। মাঝে কালীমাতার মন্দির। কোণ্ডাগাঁও
পেরিয়ে অবশেষে জগদলপুর পৌঁছোতে ঘন্টা পাঁচেক সময় লেগে গেল। জগদলপুরের একটি গেস্টহাউসে
আমাদের থাকবার ব্যবস্থা হয়েছে। সব ব্যবস্থা অত্রিই করেছে। গেস্টহাউসের মালিক অত্রির
বাবা ডাক্তার মুরারী পালচৌধুরীর পূর্বপরিচিত। নাম রামেশ্বর ওঁড়াও। আমাদের খুব খাতির
করে ঘর দেখিয়ে দিলেন। বাংলার বাইরে এলে বোঝার
উপায় নেই এখন দুর্গাপুজো। কিছু জায়গায় মাইক বাজছে বটে, কিন্তু সেখানে দশভুজা শেরাওয়ালির
আদল নিয়ে রয়েছেন। সঙ্গে কার্ত্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী নেই। সপরিবারে মর্তে আগমণের
কনসেপ্টটা বাংলা ছাড়া আর কোথাও নেই। অথচ আজ সেই বাঙালিই পরিবার ভেঙে তস্য ভাঙন ধরা
পরিবারে অণুপরমাণুর মতো জীবনযাপনে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে!
যাত্রার পর ক্লান্তি
ছিল। আমরা ঠিক করলাম, রাতে রুটি মাংস সহযোগে নৈশাহারের পর বিশ্রাম নেব। কাল সকালে বের
হবো অভিযানে। বেশ বড়সড় একটা স্যুট দেওয়া হয়েছিল আমাদের দুজনকে। তার এককোণে একটা আরামকেদারা।
আশুদাকে দেখলাম বেশ চিন্তিত হয়ে ঘরের নাইটল্যাম্পের দিকে তাকিয়ে আছে।
-কী হলো আশুদা? কী ভাবছ?
আশুদা নাইটল্যাম্প থেকে
নজর না সরিয়েই বলল, "মনোরঞ্জন শিকদারের মেয়ে আলোকপর্ণা খানিকক্ষণ আগে ফোন করেছিল
জানিস। একটা খারাপ খবর দিল।"
-কী সেটা?
-বিশিষ্ট টপ্পাবিশারদ
মনোরঞ্জন শিকদার আজ দুপুর তিনটেয় পরলোকগমণ করেছেন। ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
-সে কী! যাহ।
-আরো একটি খবর দিল আলোকপর্ণা।
ভদ্রলোক মৃত্যুর আগে আমাকে ফোন করে কিছু বলতে চেয়েছিল।
-কী সেটা?
-পুরোটা জানা যায়নি।
আলোকপর্ণা যা জানাল, তাতে এটুকু জানা গেছে, মনোরঞ্জন শিকদার আমার উদ্দেশ্যে দুটিমাত্র
শব্দ রেখে গেছেন। 'মুখোশ' এবং 'রত্তিমিত্তি'।
মনে মনে হতাশ হলাম।
শকুন্তলাদেবীর হন্তারকদের সম্ভাব্য তালিকায় মনোরঞ্জনবাবুর নামটি তাহলে অপ্রাসঙ্গিক
হয়ে পড়ল। অতো মধুর কণ্ঠ চিরকাল স্তব্ধ হয়ে গেল ভেবে মনটা সাময়িক ভারি হয়ে উঠল বটে।
রামেশ্বর ওঁড়াওর বয়স
পঁচাত্তর ছুঁইছুঁই। তবু তার দৃপ্ত চলন আর বডিফিটনেস দেখে কেউ তাকে বৃদ্ধ বলবার মূর্খতা
করবে না। নৈশাহারের জন্য সকলেই জড়ো হলাম নীচের ঘরে খাবার টেবিলে। আবলুশ কাঠের বড় ডাইনিং
টেবিল। দেওয়ালে বড় বড় রাজা রাজরার ছবি। তারই মাঝে একটি ছবিতে এক আদিবাসী রাজা তীরধনুক
নিয়ে খাঁকি পোশাকধারী পুলিশকে আক্রমণ করছেন। পুলিশের পিঠে তীর গেঁথে রয়েছে। ওঁড়াও স্পষ্ট
বাংলা বলেন। জিজ্ঞেস করলে বললেন-
-আমাদের রাজা প্রবীরচন্দ্র
ভঞ্জদেও স্বাধীন ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। এরপর যুদ্ধ বেঁধে যায়। রাজা বনাম রাষ্ট্র, আদিবাসী বনাম সভ্যতা। শেষে রাজাকে
স্বাধীন ভারতের পুলিশবাহিনী গুলি করে হত্যা করে। এই ছবি সেই আদিবাসী বিদ্রোহের ছবি।
-আপনি তো স্পষ্ট বাংলা
বলেন রামেশ্বরবাবু!
রামেশ্বরবাবু হেসে বললেন,
"তা বলব না কেন! এই জগদলপুর তো আধা আদিবাসী, আধা বাঙালি। এখনও আশেপাশে এমন বহু
বাঙালি আছেন যাঁরা শুধু হাল আমলে হিন্দি বলছেন। আমি ছোট থেকেই বাঙালিপাড়ায় মানুষ। মুরারী
আর আমি এক স্কুলে পড়তাম। পরে ও চলে গেল কলকাতা। তারপর পুলিশ ডাক্তার হয়ে ফিরে এল। কাজেই
বাঙালিয়ানা তনিক আমার রক্তে ভি আছে।"
পুলিশের পিঠে তীর। দৌড়চ্ছে।
অত্রির ঘুমের ভিতর বিড়বিড় করে বলে ওঠা শব্দগুলোর ভিতর এমন দৃশ্যকল্পও তো ছিল! ঘরে ফিরতেই
আশুদা বলল,"একটা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম বুঝলি। প্রশ্ন আসছিল মনে, এতো জায়গা
থাকতে হঠাৎ ছত্তিশগড় কেন চলে এলেন মুরারী? এখন বুঝলাম, তার শৈশব কৈশোরের অনেকটা জুড়ে
আছে ছত্তিশগড়।"
রাতে ঘুম এলো না। থিয়েটারের
ব্যাকস্টেজ থেকে কে যেন চোরা টর্চ ফেলছিল মনের ভিতর। তবে কি অত্রির স্বপ্নের নেপথ্যচারিনী
এই জগদলপুরেই লুকিয়ে আছে?
পরদিন সকালেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম অত্রি আর সুচন্দ্রার কৈশোর ও প্রথম যৌবন অন্বেষণে। জগদলপুর শহর থেকে খানিকটা দূরে এক বিরাট দীঘি। সে দীঘির এপার ওপার দেখা যায় না।স্থানীয় মানুষেরা ওই জলাশয়ের নাম দিয়েছে সাগর। সেই সাগরের তীর ঘেঁষে এক ছোট্ট বাঙালীপাড়া ধরমপুরা। ভাবতে অবাক লাগে একটা কাঁটাতার কীভাবে একটা গোটা জনজাতীর জীবন এক লহমায় পালটে দিল! ওপারবাংলার ভিটেমাটি ছেড়ে রাধাগোবিন্দ বুকে আগলে মাইলের পর মাইল হেঁটে এপারে এলেন অনুসূয়া, রক্তিম, অলোককৃষ্ণ, আর মুরারীমোহনের পূর্বপুরুষ। এপারে এসে বিনিদ্র রাত কেটে গেল স্টেশনচত্বরে প্ল্যাটফর্মে বসে। তারপর সরকারি নির্দেশে তাদের কারো কারোকে দ্বীপান্তরের মতো পাঠিয়ে দেওয়া হল এই আদিবাসী বঞ্জরভূমিতে। সেখানে তাঁরা অচেনা অজানা সংস্কৃতি, ভাষা, পরিবেশ ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে তীব্র পরিশ্রমের ফসল হিসেবে গড়ে তুললেন এই বাঙালিপাড়া। নাম হয়ে উঠল রামকৃষ্ণপল্লী। অত্রি আর সুচন্দ্রা অনুসূয়ামাসি আর মুরারীমোহনের সঙ্গে যখন এদেশে আসে, তখন অত্রির মাতৃবিয়োগ ঘটে গেছে। যে পাশাপাশি বাড়িতে সহযাত্রী ভাইবোনের মতো বেড়ে উঠেছিল অত্রি আর সুচন্দ্রা, সেই বাড়ি এখন এক বিহারী দম্পতি দেখভাল করছে। মুরারীমোহনের মৃত্যুর পর থেকে এরাই এখানে থাকেন। বিলাসরাও ও মমতাবহিন। আমাদের তাঁরা বেশ সাদরে আপ্যায়ন করলেন। লক্ষ্য করলাম অত্রি অন্যমনস্কভাবে সাগরের দিকে চেয়ে আছে। আর সুচন্দ্রা বেশ স্বাভাবিকভাবেই বাগান ঘুরতে ঘুরতে আলাপচারিতায় ডুবে যাচ্ছে।কথোপকথনে অত্রির স্কুল জীবন কলেজজীবনের বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। মন বলছিল অত্রির দুঃস্বপ্নের ভিতর আত্মগোপন করে থাকা সেই নেপথ্যচারিনীর সন্ধান এই ধরমপুরাতেই লুকিয়ে রয়েছে। রোশনি আগরওয়াল আর তার যমজ ভাই সুদর্শন আগরওয়াল এই জগদলপুরেই থাকে। রাস্তার মোড়ে ওদের পারিবারিক পিভিসি পাইপের ব্যবসা। রোশনি আর সুদর্শন, দুজনেই অত্রি আর সুচন্দ্রার স্কুলজীবনের বন্ধু। সুচন্দ্রা পরম উৎসাহে দেখালো তাদের বাড়ি। কথায় কথায় অনুসূয়া বলল, সেই মেয়েটির কী হলো বিলাসরাওজি। যো লারকি হামকো আগ সে বাঁচায় থে? একবার গ্যাস লিক করে সুচন্দ্রাদের বাড়ি আগুন লেগে যায়। অত্রি তখন এই বাড়িতেই বেড়ে উঠছে। সেই সময় এক ছোট্ট আদিবাসী মেয়ে তার আশপাশের লোকজন ডেকে এনে আগুন নেভায়। মেয়েটির পঠনপাঠনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মুরারী। বিলাসরাওজি ভেবে বলেন,'কৌন? লছমি বহিন?' অনুসূয়া ঘাড় নেড়ে বলে,"ঠিক ঠিক। লক্ষ্মী সিং"।
-আরে, উও তো আভি বহুত
বড়া লিডার বন গয়া। ইঁয়াহাকা ট্রাইবাল কোঅরডিনেশন কমিটিকা হেড হ্যায় উও।
এক ঝলক যেন প্রমিতী
উঁকি দিয়ে গেল মনের ভিতর। কথায় কথায় বেলা বাড়ল। দুপুরের খাবার বিলাসরাওজি আর তার স্ত্রী
তাঁদের ঘরেই বন্দোবস্ত করেছেন। খাওয়াদাওয়ার পর ঠিক হলো পাশেই একটি ডোকরাপল্লীর বাজারে
যাওয়া হবে। ডাল, চাউল আর আণ্ডাকারি খাবার পর আশুদা বলল,"চল। একটু আশপাশটা ঘুরে
দেখা যাক।"
অত্রি সুচন্দ্রাদের
বাড়িটা একই বাউণ্ডারিতে ঘেরা। সেখান থেকে বের হলেই 'সাগর' এর কোল ছুঁয়ে চওড়া রাস্তা
চলে গেছে উত্তর দিকে। তার একপাশে সাগর, অন্যদিকে সারবদ্ধ বাঙালিবাড়ি। এখন অবশ্য এদের
অনেকেই আর এখানে থাকেন না। অত্রি সুচন্দ্রাদের মতো তারা ঘর থুইয়ে বম্বে, বাঙ্গালোর,
চেন্নাই চলে গেছে কর্মসূত্রে। শুধু নামের ফলকটাই পড়ে আছে। সেই পল্লীর এক কোণায় সাগরের
জল একটা ছোট্ট ঝর্ণার মতো নেমে যাচ্ছে নিচে। লোকে এটাকে 'চোরাই ঝর্ণা' বলে। আঞ্চলিক
প্রেমিকপ্রেমিকাদের এটা প্রিয় লাভার্স পয়েন্ট। তার পাশেই একটা খোলা মাঠ, ও সেই মাঠ
পেরিয়ে একটি ছোট রামকৃষ্ণ মিশন। সেখানে অবৈতনিক বিদ্যালয়, ডাক্তারের চেম্বার। হিন্দি
আর ইংরাজির পাশাপাশি গোটা বাংলাতেও সেই লেখা দেখে মন ভরে গেল। মিশনের মহারাজের বয়স
সত্তরোর্ধ্ব। তার মানে অত্রির বাবা মুরারীমোহনের সমসাময়িক হবেন তিনি। আশুদা তাকে প্রণাম
করে অত্রি সুচন্দ্রার কথা বলল। মহারাজ নিজেও বাঙালি। সজল চোখে বললেন, ভারি দয়াবৎসল
ছিলেন মুরারীমোহন। জগদলপুরের জেলে যতোদিন ছিলেন, বহু আদিবাসী ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার
জন্য অকাতরে দান করেছেন। নিয়মিত প্রার্থনায় আসতেন ছেলেকে নিয়ে। অত্রি ডাক্তারি পাশ
করেছে শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, "অত্রি আর মেঘা, আমাদের রামকৃষ্ণপল্লীর গর্ব
ছিল। দুজনেই এক সঙ্গে মেডিক্যালে চান্স পায় ও পড়তে চলে যায় বর্ধমান।"
মেঘা চ্যাটার্জি এখন
ক্যালিফোর্নিয়ানিবাসী। মহারাজ জানালেন সেকথাও। মেঘাদের পরিবারের কেউ আর রামকৃষ্ণপল্লীতে
থাকে না। তাদের বসত বিক্রি করে তারা বিদেশ চলে গেছে।
-দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে
এইখানটা। বাঙালিয়ানা যা কিছু অবশিষ্ট ছিল, তাও বোধহয় আর রইল না জানেন! এখন এখানে বাঙালিরা
যে কজন আছেন, আর বাঙলায় কথা বলেন না। হিন্দিতেই কথা বলেন। ছত্রিশগড় সরকারও চায় এলাকায়
আদিবাসীরা প্রাধান্য পাক। তাই আর রবীন্দ্রজয়ন্তীও হয় না এখানে। বাঙালিয়ানা কী তবে মুছে
যাচ্ছে আশুবাবু?
রামকৃষ্ণ মিশন থেকে
ফেরার পথে সাগরপারে হাঁটতে হাঁটতে আশুদা বলল, "একটা সাদা রঙ কাঁচের প্রিজমের উপর
পড়লে যেমন সাতটি রঙ বেরিয়ে আসে, আমাদের এই ঝটিকা সফরও ঠিক তেমনই অত্রি আর সুচন্দ্রার
জীবনের সেই রঙ বের করে আনছে বুঝলি অর্ক?”
-কী বুঝলে আশুদা? রোশনি,
লক্ষ্মী না মেঘা? কে অত্রির নেপথ্যচারিনী?
-সে প্রশ্নর উত্তর তো
পাবো শিগগির, কিন্তু মহারাজের শেষ প্রশ্নর উত্তর কি খুঁজে পাবো?
-কোন প্রশ্ন?
-ওই যে। সত্যিই কি আমাদের
বাঙালিয়ানা শেষ হয়ে আসছে?
নীরবে হেঁটে চলেছি দুইজনে।
পাশে অতল নীল সাগর দীঘি। আশুদা নিজের মনে বলে চলে,"কত বছর পরে তোমার চিঠি পেলাম
আবার/ এই সকাল বেলার রৌদ্রে/আমার হৃদয়ে/বারুণীর কোটি কোটি সহচরী/তিমির পিঠ থেকে মকরের
পিঠে আছড়ে পড়ে/নটরাজ্ঞিদের মতো/মহান সমুদ্রের জন্ম দিল।"
-জীবনানন্দ দাশ! তাই
তো?
-ঠিক। অর্ক। ১৩৬৪ সালে
'কবিতা' পত্রিকায় প্রকাশিত 'চিঠি এল' কবিতা। কেন জানি, হঠাৎ সেই কবিতাটার কথাই মনে
এল।
বিকেলবেলা বিলাসরাওজির
সঙ্গেই আমরা সকলে গেলাম ডোকরাপল্লী। একটি বিশেষ উপায়ে ধাতুকে আদিবাসীরা ঝালাই করে একধরনের
কারুকাজ করে যার নাম 'ডোকরা'। এই ডোকরা মানভূমের ডোকরার থেকে শৈলীতে আলাদা। মানভূম
ময়ূরভঞ্জে ডোকরার কাজগুলো অনেক ছোট ছোট নিখুঁত। এখানে ডোকরা পুতুলগুলো আকারে অনেক বড়।
বিলাসরাওজির সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম মুরারীমোহন অত্রি আর সুচন্দ্রাদের নিয়ে
আসবার আগেও বেশ কয়েকবার এই ধরমপুরা এসেছিলেন। মুরারীমোহনের পৈতৃক জমিজমাতে চাষ করিয়েছিলেন
কিছুদিন। তার বেহালাবাদ্যে মুনশিয়ানার কথা রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের মতো বিলাসরাওজিও
বারবার বললেন। এখানকার ডোকরাপল্লীতে বারবার একজোড়া আদিবাসী দম্পতিকে দেখা যায়। আঞ্চলিক
লোকেরা ওদের 'রত্তি' আর 'মিত্তি' বলে। ছেলেটির মাথায় শিঙযুক্ত টুপি। মেয়েটি একটি টিকলি
পরে আছে। এমনই এক রত্তি মিত্তির মূর্তির সামনে এসে এক কাণ্ড ঘটে গেল।
অত্রি আর সুচন্দ্রা
এতক্ষণ তাদের অনুসূয়ামাসির সঙ্গে দিব্ব ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রত্তিমিত্তির মূর্তির সামনে
এসেই হঠাৎ সুচন্দ্রা জ্ঞান হারালো। মৃদু মৃগীর মতো কাঁপতে লাগলো তার হাত পা। আশুদা
নাড়ি দেখে সাইড পকেট থেকে একটা ড্রপ বের করে নাকে কয়েক ফোঁটা ঢেলে দিতেই সুচন্দ্রার
জ্ঞান ফিরল। আশুদা মুচকি হেসে বলল,"এমন এমারজেন্সির জন্যই আজকাল সবসময় পকেটে মিডাজোলাম
ড্রপ রাখা অভ্যাস হয়ে গেছে। ঋক এই অভ্যাসটা ধরিয়ে দিয়েছে। আজ কাজে এসে গেল।"
আশুদার ছেলে ঋকের মৃগী
হতে আমি একবার দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। ভয়ঙ্কর সে দৃশ্য। এখন অবশ্য ঋক সেরে উঠেছে। কিন্তু
পকেটে করে মিডাজোলাম বহন করার অভ্যাস আশুদার যায়নি। ভাগ্যিস যায়নি!
সুচন্দ্রার এই জ্ঞান
হারানোর ঘটনার পর দিনের সমস্ত ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা মুলতুবি রাখা হল। আমরা গেস্টহাউজ
ঘরে ফিরে এলাম। গম্ভীর আশুদাকে ফিরে এসে একবার জিজ্ঞেস করে বসলাম,"সুচন্দ্রাকে
এই নিয়ে দুবার চোখের সামনেই জ্ঞান হারাতে দেখলাম। এটা কি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার জন্য
হচ্ছে?তোমার কী মনে হয় আশুদা?"
আশুদা ভেবে বলল, "রোগের
লক্ষ্মণ দেখে মনে হচ্ছে, নিছক ডিসোসিয়েশন এটা নয়। এই রোগের শিকড় সুচন্দ্রার জিনের ভিতর
রয়েছে। অলোককৃষ্ণ বা শকুন্তলাদেবী, কারোর মেডিকেল প্রোফাইল আমার জানা নেই। তাই নিশ্চিত
হতে পারছি না। আপাতত ও ভালো হয়ে যাক। এটুকুই।"
পরদিন অবশ্য আবার পূর্ববৎ।
সুচন্দ্রা সম্পূর্ণ সুস্থ। বিলাসরাওজি সকালে খবর নিতে এসেছিলেন। সুচন্দ্রাই বলল,"আমি
একদম ঠিক আছি। কিচ্ছু হয়নি। তিরদগড় চলো।"
তিরদগড় নামটা শুনেই
অনুসূয়ার গাল লাল হয়ে উঠল। সুচন্দ্রা পরে আলাদা করে আমাদের দুজনকে বলেছিল, এই তিরদগড়
বেড়াতে এসেই অনুসূয়ামাসির সঙ্গে দেখা হয় রক্তিমমেসোর। তারপর থেকেই প্রণয় ও বিবাহ। গাড়ি
করে তিরদগড় যেতে যেতে বিলাসরাওজি বললেন,"আপলোগ পেহলে চিত্রকূট চলিয়ে। উসকে বাদ
তিরদগড় দেখ লেঙ্গে।"
ভারতবর্ষের নিজস্ব নায়াগ্রা
জলপ্রপাত। চিত্রকূট নিয়ে কতো উপকথা, মহাকাব্য। এখানেই তো রামচন্দ্রর সঙ্গে সুগ্রীবের
দেখা। ইন্দ্রাবতীর অবারিত জলপ্রবাহের সামনে নিজের ক্ষুদ্র অস্তিত্ব অপ্রাসঙ্গিক মনে
হল। এই অসামান্য দৃশ্যকল্পই হয়তো মুরারীমোহনকে তার গানের দলের নাম 'চিত্রকূট অপেরা'
রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মানুষের অবচেতন যে কতো বিচিত্র তা আশুদার কাছে শিখেছি। এই জলপ্রবাহ
বেহালার সুরমূর্চ্ছনার মতোই মুক্ত, স্বাধীন।
চিত্রকূট থেকে তিরদগড়
যাবার পথে ঘন শাল বনের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে অনুসূয়া বলছিল রাজা আর সরকারবাহাদুরের সেই
যুদ্ধের কথা। শেষে রাজাকেও তিরবিদ্ধ হতে হয় বিশ্বাসঘাতকদের হাতে। শুনতে শুনতে অত্রি
আর সুচন্দ্রা একই সঙ্গে ছোট ছেলেমেয়ের মতোই উৎসাহী হয়ে ওঠে। এই গল্পগুলো শুনতে শুনতে
তারা ছোটবেলায় খাবার খেত। ঘুমিয়ে পড়ত। এই অনুসূয়ামাসি সম্পর্কে মাসি হলেও আসলে তাদের
মায়ের মতোই। শকুন্তলাদেবীর অকালমৃত্যুর ভয় ও শোক কাটাতে যেন মমত্বর শূন্যস্থান করেছেন
এই মাসি। এতোদিনের বিদেশযাপনও যাঁর মাতৃত্বকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি। অনুসূয়া
বলছিল, আগে জগদলপুর রাজবাড়িতে আদিবাসী রাজার জন্য একটা হাতি থাকত। তার পায়ে শিকল বাঁধা
থাকত। লক্ষ্মীপুজোর সময় সেই হাতির পায়ের শিকল ধরে পিছুটান দেওয়ার প্রথা ছিল রাজপরিবারে।
রক্তিমের সঙ্গে অনুসূয়ামাসি বিয়ের পরেও সেই উৎসব দেখতে এসেছিল। তখন অবশ্য রাজা বা তার
রাজপরিবার নয়। সরকারি উদ্যোগেই সাজিয়ে তোলা হয় রাজবাড়ীপ্রাঙ্গন। তার ভিতর এক মন্দিরে
দেবী দন্তেশ্বরী। মা সতীর দাঁত পড়েছিল দন্তেওয়াড়ায়। এই দন্তেশ্বরী দেবী সেই দন্তেওয়াড়ার
অধিষ্ঠাত্রী দেবী।এমন গল্প শুনতে শুনতেই আবার একটা বিপত্তি ঘটল। তিরদগড়ের কাছেই একটি
রাস্তার বাঁকে আমাদের গাড়িটি বিগড়ে বসল। ড্রাইভার জানালো দশ কিলোমিটার দূরে গ্যারাজ
যেতে হবে। দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। রাতে এই পথ দিয়ে জগদলপুর ফেরা নিরাপদ নয়। আসলে 'বস্তার'
নামের সঙ্গে মাওবাদীদের নাম জুড়ে গেছে পাকাপাকিভাবে। এখনও তাদের বিক্ষুব্ধ আক্রমণ জনজীবন
স্তব্ধ করে দেয় বৈকি। বিলাসরাওজি বলছিলেন, তাদের বাড়িতেও নাকি উড়ো হুমকি পড়েছে মাঝেমধ্যে।
পাথরের নুড়িতে দলা পাকানো কাগজ। সেই কাগজে একটাই শব্দ লেখা। 'ভাগো'। সুতরাং ঠিক হলো
তিরদগড় ঝর্নার পাশেই একটি লজে আমরা থেকে যাব। কাল ভোর ভোর ফিরতে হবে। ঝর্নার কাছে এসে
জলের শব্দ মনের ভিতর দ্যোতনা জাগালো। তিরদগড়ের ঝর্নায় চিত্রকূটের সুরমূর্চ্ছনা নেই।
পাহাড়ের ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে ঝর্নার জল নেমে যাচ্ছে নিচে। অস্তাচলগামী সূর্যের আলোতেও
সেই মনোরম দৃশ্য মনকে প্রলুব্ধ করল। এইখানে অনুসূয়া সুচন্দ্রা অত্রি কৈশোরে কতোবার
না এসেছে। তবু তাদের ভিতর উন্মাদনা লক্ষ্য করলাম। আমার কাছে তিরদগড় এই প্রথম তার রূপ
বিস্তার করল। তাই আমার প্রলুব্ধতার কথা শব্দে প্রকাশ করা যাবে না।
সন্ধ্যা নেমে এল তিরদগড়ে।
আমাদের লজ থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল ঝর্না জলের আওয়াজ। আশুদা এরই মাঝে সুচন্দ্রা ঠিক
আছে কিনা জিজ্ঞেস করল।
-একটা মিসিং লিঙ্ক বুঝলি
অর্ক আমাকে সুচন্দ্রার অসুখটাকে নিশ্চিত হতে দিচ্ছে না। বলে আশুদা লজের বারান্দায় একটা
ছোট্ট নোটবুক নিয়ে ইজিচেয়ার টেনে বসে পড়ল। লজে মোট চারটি ঘর নিয়েছি আমরা। সাধারণত এখানে
রাত কাটাতে কমই আসে ট্যুরিস্ট। আমাদের চালক রামলোচন যেখানে গাড়ি বিগড়েছে, সেখানেই রয়ে
গেছে। একটি ঘরে সুচন্দ্রা আর অত্রি, একটি অনুসূয়ার, একটি বিলাসরাও আর একটি ঘর আমাদের।
রুটি আর মুরগির মাংস রান্না হলো রাতে। লজের বারান্দায় ঘন অন্ধকারে ঝর্নার শব্দকে নেপথ্যে
রেখে আমরা নৈশভোজে মন দিলাম। অনুসূয়া বলল,"বাইক অ্যাক্সিডেন্টের আগে অলোক জামাইবাবু
কতো এমন প্রত্যন্ত জায়গা বাইক চড়েই ঘুরে এসেছেন।"
-অলোককৃষ্ণর বাইক অ্যাক্সিডেন্ট
হয়েছিল? কবে?
-সে অনেকদিন। রাঁচি
যাবার পথে। তারপর গভীর মনোবল নিয়ে তিনি কাটিয়ে ওঠেন সেই আঘাত।
কথোপকথনে আশুদা অনুসূয়াকে
জিজ্ঞেস করল, "সুচন্দ্রার মতো ওর বাবা বা মায়েরও কি এই মৃগী হবার প্রবণতা ছিল?"
অনুসূয়া মাথা নেড়ে জানান
দিল, যে তার তেমন জানা নেই। নৈশভোজের পর যে যার ঘরে চলে গেলে আমরা খানিকক্ষণ বারান্দাতেই
থেকে যাব স্থির করলাম। রাত নামতেই নিভৃত প্রহরীর মতো শুধু ঝর্নাটুকু ছাড়া আর কেউই যেন
সাথ দিল না আমাদের। দোতলায় আমরা আর বিলাসরাও রয়েছি। বিলাসরাও ডিনারের পরেই ইনসুলিন
নিয়ে শুয়ে পড়েছেন। লজের কেয়ারটেকার বলছিল এই তিরদগড়ের জঙ্গলে রাতে বের হওয়া একেবারেই
নিরাপদ নয়। প্রথম বিপদ মাওবাদীদের। আর দ্বিতীয়টি চিতাবাঘের। শেষ দলছুট চিতাটি সে নিজের
চোখে দেখেছিল মাত্র দুই মাস আগে। যদিও সে লজ অবধি আসতে পারেনি। একতলার দুটি ঘরে অত্রিরা
ছিল। আশুদা নোটবুক পকেটে পুরে আকাশের তারার আলোআঁধারিতে বলল,"কাগজের পাতার বর্ণালীর
সঙ্গে থিয়েটারের আলোর বর্ণালীর পার্থক্য কী জানিস? কাগজের পাতায় হলুদ আর নীল রঙ পরপর
বসালে তারা দুজনে মিলে সবুজ হয়ে যায়। কিন্তু থিয়েটারে আলোর ক্ষেত্রে এই দুই রঙ মিললে
সাদা আলো তৈরি হয়। বর্ণালীর ভিবজিওর লাগে না।"
-অলোককৃষ্ণর বাইক অ্যাক্সিডেন্টের
কথাটা জানতে আশুদা?
আশুদা ঘাড় নেড়ে বলল,"না।
জানতাম না। তবে জানলাম। জানার যে শেষ নাই।"
এভাবে কথা বলতে বলতে
কতোটা গভীর হয়েছিল রাত কে জানে; হঠাৎ ঘরে ফিরে যেতে গিয়ে আমরা দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে
পড়লাম। উপরে ওঠার কাঠের সিঁড়িতে একটি ছায়ামূর্তি। তারার আলোয় সে মূর্তি স্পষ্ট হলো।
সুচন্দ্রা! এতো রাতে! তাকে তো রাতে ঘর থেকে বের হতে বারণ করেছিল আশুদা। সুচন্দ্রা শূন্য
দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কী হয়েছে? আমি আর আশুদা কাছে যেতেই সজল স্থির চোখে
সে বলল,"অত্রি নেই। ঘরে নেই। উপরে দেখতে এলাম, এখানে এসেছে কিনা!"
-সে কী! কখন থেকে!
-ডিনারের পর ঘরে গিয়ে
শুয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখলাম ও নেই।কোথাও নেই!
-সর্বনাশ!
তবে কি এতোদিন পর আবার
অত্রির উপর তার সেই সোমন্যামবুলিজমের পুরনো রোগ চেপে বসল? কে জানে! আমি আর আশুদা সুচন্দ্রাকে
নিয়ে মোবাইলের টর্চ হাতে সব ভয় উপেক্ষা করেই অত্রির খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম।
(ক্রমশ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন