কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

জয়া চৌধুরী




বইমেলার ঘুঘনি






বইমেলা শব্দটা কানে এলেই আমার চোখে কেমন আঁতেল শব্দটি ফুটে ওঠে। মানে বইমেলা হল ইন্টেলেকচুয়ালদের জায়গা। আশ্চর্য! বই ও মেলা দুটো শব্দ কেমন উল্টো রকম না! বই মানে নিবিড় আর মেলা মানে ছড়িয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী ভাবের মিলন এই বইমেলা। ইদানীং কয়েকবছর বইমেলায় যাওয়া কমে গেছিল। তবে এবারে কিঞ্চিত অধিক যেতে পারলাম। আসলে এবার আবার দুটো বই প্রকাশ পেল আমার ‘ম্যাজিক রিয়ালিজমের গল্প’  নামের একটি গল্প সঙ্কলন আর ‘কামিলার তিনটি মৃত্যু’ নামের একটি উপন্যাস। সে কারণেই এবং কিছু উদ্বোধনের আমন্ত্রণে যেতে হয়েছিল। এই লেখাটি যখন  লিখছি তখন বাংলাদেশের বইমেলা শুরু হয়ে গিয়েছে এবং তা রমরম করে চলছে। প্রতিদিন ফেসবুকে টের পাচ্ছি নানান বই উদ্বোধন, আলোচনা, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি নানান ঘটনা। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়ও এমন নানান অনুষ্ঠান হতে থাকে। এবারে দেখলাম একটি মুক্ত মঞ্চ করা হয়েছে। সুভাষ মুখোপাধ্যায় মঞ্চ। এটি একটি খোলা মঞ্চ যা গিল্ড বিনা ভাড়ায় দিয়েছেন। শুধু উৎসাহীদের নিজেদের নামটি নথিভুক্ত করে যেতে হয়েছিল। সই সংগঠনের একটি অনুষ্ঠান ছিল সেখানে। আমরা কজন সই সেখানে নিজেদের কবিতা বা অনুবাদ কবিতা পাঠ করলাম, কিছু বইয়ের উদ্বোধনও হল। সঙ্গে গান তো  ছিলই। সেখানেই শুনলাম এই মঞ্চটি বাংলাদেশের বইমেলাতে গিয়ে দেখে এসে এখানকার মেলাতেও করবার ইচ্ছা করেন গিল্ড সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। আশা করছি পরের বছর আরো ভিড় বাড়বে মঞ্চটি পাবার আশায়। কপাল গুণে বিশিষ্ট মানুষজনকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পেয়ে গেলাম।  চুমকী চট্টোপাধ্যায় শাহজাদ ফিরদউসেরা সেখানে ছিলেন।

লাতিন আমেরিকার স্টলে গত কয়েক বছরের মত এবারেও ভিড় পেলাম। প্রতিদিন সেখানে বই প্রকাশ, গল্পপাঠ ইত্যাদি লেগেই ছিল। আর্জেন্টিনা থেকে একদল সাহিত্যিক এসেছিলেন এবার মেলায়। তাঁদের কয়েকটি বই প্রকাশ পেল।  একদিন আমার স্প্যানিশ থেকে অনূদিত নতুন উপন্যাসটিও প্রকাশ করলেন আর্জেন্টিনার সাহিত্যিকেরা। লেখিকা গ্লাদিস মেরসেদেস আসেভেদো নিজে উপস্থিত ছিলেন। গ্লাদিস এই সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন সাহিত্যিক। বাংলা ভাষায় হিসাপানিক দুনিয়ার ক’জন নারীর লেখাই বা অনুবাদ হয়েছে  এতাবৎ! বড় কাজ বলতে ২০১৬ সালে গাব্রিয়েলা মিস্ত্রালের কবিতা ও গদ্য অনুবাদ করেছিলাম। এবার করলাম গ্লাদিসের উপন্যাস। মাঝে ইসাবেল আইয়েন্দে সহ কজনের লেখা করেছি, তবে এত বড় কাজ সেগুলি নয়।  এমনিতেও স্প্যানিশ ভাষা থেকে ক’জনই বা সরাসরি অনুবাদ করেন! যাইহোক মজার একটা ব্যাপার হয়েছে। একটি কবিতা পাঠের আসর চলছিল স্টলে। হঠাৎ আমি গিয়ে পড়েছি। তো দোভাষী হিসেবে আমাকেই বসিয়ে দেওয়া হল কবি এস্থের সিমোনের সঙ্গে। তিনি আর্জেন্টিনার কবি। বিশেষত কেচুয়া গাউচো এদের নিয়েই কবিতা লেখেন তিনি এবং পরিবেশ। সেদিন দুম করে গিয়ে কবিতা অনুবাদ করে পড়াতে পেরে খুব আনন্দই হয়েছিল। এস্থের সিমোন স্প্যানিশ আর আমি কলাইন বাংলা - সমান্তরাল ভাবে। মনে হয় উপস্থিত দর্শকেরা বেশ উপভোগ করেছিল। প্রথম নবনীতা দেবসেন মেমোরিয়াল লেকচার শুনলাম একদিন। দিলেন নন্দনা দেব সেন। তবে ওঁর সেদিনের পাঠের কেন্দ্রে নবনীতাদির শিশু সাহিত্যের উপরেই ফোকাস ছিল। মর্মস্পর্শী একটি পাঠ করেছিলেন তিনি।

জনস্বার্থ বার্তার স্টলে দেখি সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। আশ্চর্য সব লেখা লিখে ফেলেছেন ইনি। সেই সুযোগে বইয়ের ওপর স্বাক্ষর ও সেলফি তুলে নিলাম সাগ্রহে। সেদিন অনুবাদ সাহিত্য পাঠ ছিল কলকাতা ট্রান্সলেটারস ফোরাম ও জনস্বার্থ বার্তার যৌথ আয়োজনে। সাহিত্য আকাদেমী বিজেতা শ্যামল ভট্টাচার্য, বাংলা আকাদেমী সহ কাঁড়ি কাঁড়ি পুরষ্কার বিজয়িনী তৃষ্ণা বসাক, নন্দিতা ভট্টাচার্য, শর্মিষ্ঠা সেনগুপ্ত, তন্ময় বীর, নবনীতা সেনগুপ্ত, বাপ্পাদিত্য রায় বিশ্বাস  সহ অনেকেই পড়লাম লেখা। পাঞ্জাবী লেখিকা মিনু আসর জমিয়ে দিলেন।  মোদ্দা ব্যাপার হল নানান ভাষার অনুবাদ সাহিত্য পাঠের অনুষ্ঠান দারুণ জমেছিল। বেশ লোকজন দাঁড়িয়ে শুনছিল। 

কথা ছিল অনুবাদ পত্রিকার স্টলেও  সাহিত্য পাঠ হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ওলোট পালটে সেটি হল না। ব্যাস আমাদের সকলের মন খারাপ। শেষ দিনে মাঠে গিয়ে আগেই চলে গেলাম সাহিত্যিক বিতস্তা ঘোষালের ভাষা সংসদের স্টলে। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে এরা অনুবাদের পৃষ্ঠপোষক। একটা চমৎকার বই কিনলাম মকবুল ফিদা হোসেনের উপর সে স্টল থেকেই। আর চার পাঁচ দিনের বইমেলা সফরের এবারের সবচেয়ে মজা পেয়েছি সৃষ্টি সুখের স্টলে যেতে। ওখান থেকেই তো বেরোল আমার নতুন বই ম্যাজিক রিয়ালিজমের গল্প। আরেব্বাস! যখনই স্টলে উঁকি দিলাম, এ কদিনের সব সময়েই দেখি সরোজ   রসিদ কাটছেন বইয়ের। মানে বিক্রিবাটা টুকটাক হয়েছে। তবে মানুষ পড়েছে  কিনা বলতে পারছি না। একবছরে আগেও তো বই বেরিয়েছে। কিন্তু এমন হাতে গরম বিক্রি হতে আমার বই আগে দেখি নি। মনে হচ্ছে ঠিক পথেই চেষ্টা চালাচ্ছি। অনুবাদে আবার পাঠকের মন ফিরছে। তা বলে ডারটি পিকচারের সেলভা গণেশের মত পাবলিক যা চায় তাই দিতে পারব কিনা জানি না। ভরসা একটাই, পাঠকও তো নানান কিসিমের! আর পাঠকই জনার্দন।

তবে আর কি একবছর ফের কলম শানাই। আসছে বছর ফির সে বইমেলা। জয় তারা।  

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন