কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৮


ঘুড়ি


আরও অনেকের মতো মহুলও জানে, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন নাকি ঘুড়ি ওড়াতেই হয়। তা মহুল তো নিছক ছেলেবেলা থেকেই ঘুড়ি উড়িয়ে আসছে। এটা তার প্যাশন। তবে শুধু তো ঘুড়ি ওড়ানো নয়, তার পূর্বপ্রস্তুতিও অনেক। বাজার থেকে ঘুড়ি, লাটাই, সুতো কেনা। সেই  সুতোতে মাঞ্জা মারা। আবার সুতোতে মাঞ্জা দেবারও অনেক সরঞ্জাম ও  কলাকৌশল আছে। ভাতের মার, সাগুগোলা, কাচের গুঁড়ো, শিরিষ-আঠা, রঙ-গুঁড়ো সব উপাদান মিশিয়ে আগুনের আঁচে ফোটাতে হয়। তারপর লম্বা করে সুতো একপ্রান্ত থেকে আর একপ্রান্ত কোনো খুঁটিতে আটকে হাতের মুঠোয় সেই মিশ্রণ নিয়ে সুতোতে লাগাতে হয়। শুকিয়ে গেলে সুতোর ওপর সেই মিশ্রণ সুতোকে ঢেকে ফেলে এবং সেই  মিশ্রণে যে মিহি কাচের গুঁড়ো থাকে তা অন্য ঘুড়ির সুতোকে কেটে ছিঁড়ে ফেলে। মহুলের এই কর্মকান্ডে সব সময় সঙ্গী হয় তার ছোটভাই রাহুল এবং সমবয়সী বান্ধবী বৈশালী। মহুল সাধারণত তাদের বাড়ির ছাদে অথবা বাড়ির  সামনের ফুটবল মাঠ থেকে ঘুড়ি ওড়ায়।

লাটাই মহুলের হাতেই থাকে। রাহুল দু’হাতে ঘুড়ির দু’প্রান্ত ধরে একটু একটু করে পিছিয়ে যায়। মহুল হাল্কাভাবে লাটাই ধরে রেখে সুতোর ঢিল ছাড়তে থাকে। বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে রাহুল ঘুড়িটা হাওয়াতে ভাসিয়ে দেয় আর মহুল সঙ্গে সঙ্গে সুতো গুটিয়ে ঘুড়িটাকে আরও আরও উচ্চতায় উড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকে। তারপর যখন ঘুড়ির পালে বাতাস লাগে, তখন ঘুড়ি নিজের আনন্দেই উড়তে শুরু করে। তখন মহুলের কাজ সুতোর ঢিল ছাড়তে ছাড়তে ঘুড়িকে বহুদূরে শূন্যে ভাসিয়ে রাখা।

সেদিন বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে ফুটবল মাঠে রাহুল আসতে পারেনি, বৈশালী যথারীতি এসেছিল। রাহুল সঙ্গে না থাকলে বৈশালী মহুলকে ঘুড়ি ওড়াতে সহযোগিতা করে। তাই সেদিনও বৈশালী ঘুড়ির দু’প্রান্ত দু’হাতে ধরে একটু  একটু করে পেছনে হেঁটে লাটাই থেকে ঘুড়ির দূরত্ব রচনা করছিল। মহুল আলাগা হাতে লাটাই ধরে রেখে সুতোর ঢিল ছাড়ছিল। তখন হাওয়া বইছিল বেশ দ্রুত গতিতে। এই গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আকাশে ঘুড়িকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব  মুশকিল হয়। সুতো ছিঁড়ে ঘুড়ি শূন্যে উধাও হতে চায়। তবে মহুল খুব দক্ষ ঘুড়িচালক। সে ঠিক সামলে নেয়।

কিন্তু আজ কী যে হলো, বৈশালী ঠিকঠাকই ঘুড়িটা ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল, হঠাৎ এমন একটা দমকা হাওয়া বইতে  শুরু করল, মহুল দেখল, শুধু ঘুড়ি নয়, ঘুড়ির সঙ্গে বৈশালীও উড়তে শুরু করেছে আকাশে। হকচকিত মহুল ভুলেই গেল লাটাইয়ে সুতো গুটিয়ে ঘুড়িটাকে নিজের বশে রাখতে। মহুলের দু’হাতে লাটাইটা বনবন করে ঘুরতে শুরু করল, আর পাগলা হাওয়ার টানে দু’হাতে ঘুড়ি ধরা অবস্থায় বৈশালী আকাশে আরও আরও ওপরে ভাসতে ভাসতে লাট খেতে শুরু করল। বৈশালী চীৎকার করে কিছু বলল। সেই কথা সুতো বেয়ে মহুলের কানে এসে পৌঁছল। সঙ্গে সঙ্গে মহুল লাটাইয়ে সুতো গোটাতে শুরু করল। এই অঞ্চলে মহুলের সুনাম আছে ঘুড়িচালক হিসেবে। সেই সুনাম তাকে বজায় রাখতেই হবে! বৈশালীকে যেভাবেই হোক মাটিতে নামিয়ে আনতে হবে!   


1 কমেন্টস্: