কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩

সুবল দত্ত

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫

 


রেড

 

পঞ্চাশ বছর আগে এই জায়গাটা একটা এঁদোগলি ছিল। দিনেই আঁধার। সারি দিয়ে সোনার কারিগরদের ছোটো কারখানায় ঢিবরি বাতি জ্বলত। মালসায় আগুন। হাপরের, নেহাই ও হাতুড়ির ও বাঁকনলে ফুঁ-এর শব্দ। নানারকম লোহার  ডাইসে সোনার পাত্তির ঠুকঠুক শব্দ। নানা কলকা ফুল ডিজাইনে পালিশের শব্দ।

ওসব কোথায় হাপিশ হয়ে গেছে! এখন আলোয় আলোময়। সম্পূর্ণ কায়াপলট।  ঝকঝকে নামীদামী অলংকার দোকান। পাকা ধোয়াপোঁছা সিমেন্টের রোড। দুপাশে জয়রাম সুখরাম কেদারনাথ গোপাল গোয়েল আরো অনেক দোকান। যারা সত্যিকারের পোদ্দার তারা আর একটিও নেই। শুধুই মাড়োয়ারীদের একচেটিয়া ব্যবসা। সোনা ও বন্ধকি কারবার।

প্রায় সন্ধে হব হব। জয়রাম অরনামেন্টসের সামনে একজন দাঁড়াল। তার সম্ভ্রান্ত অভিজাত পোশাক দেখে সিকিউরিটি সেলাম করে গেট খুলে দিল। সে তখনও দাঁড়িয়ে রইল। পায়ের নিচে লাল কার্পেট। আজ চল্লিশ বছর আগে একটা লোহার কড়াইতে ব্রাশ দিয়ে কুরে কুরে এইখানেই সে ধুলো সংগ্রহ করত। সেই ধুলো ধুয়ে চেলে লাল করে গরম করে সোনা বের করত। কাঁসাই কুমারী নদীর বালু থেকেও ওমনি করে সোনা পেত। ওতেই কোনোমতে পেট চলত। একদিন কী হল...

- সাবজী অন্দর আইয়ে। সিকিউরিটির কথায় চমক ভাঙল।

লোকটি ভিতরে দোকানের কর্ণারে সুসজ্জিত চেম্বারে ঢুকল। এক বৃদ্ধ রিভলভিং চেয়ারে বসে। ইনিই এই দোকানের মালিক জয়রাম শেঠ। লোকটি  নমস্কার করে কোটের ভিতরের পকেট থেকে কাগজে মোড়া ভারি জিনিস বের করে শেঠজীর টেবিলে রাখল। মোড়ক খুলতেই বেরিয়ে এল ধুলো কয়লা মাখা পাথর। সেটা থেকে হালকা সোনা রঙ ঠিকরে বেরোচ্ছে।

-দেখুন তো এটা চিনতে পারেন কি না?

শেঠজী ওটা দেখে চমকে উঠলেও মুখে কিছু বললেন না।

-এটা কি তামা? এটার কি কোনো দাম হয় না? এমনিই ফেলে দেবার জিনিস?

-আপনি কে? কী চান আপনি? শেঠজীর প্রশ্ন।

- আপনি দেখুন গলা (মালিক) ইটঅ কি গোটাটাই সোনার? আমি বুইজত্যে লারছি।

শেঠজীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ছবির মত মনে পড়ছে একটা খালি গা হাফ প্যান্ট পরা ছেলে তার বুড়ো বাবাকে সংগে করে হুবহু এমনি এক পাঁচকেজির নিরেট সোনা পাথর তার কাছে এনেছিল। শেঠজী সেটা কেড়ে নিয়ে মেরে দুজনকে আধমরা করে ভাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার থেকেই তো এই অঢেল সম্পত্তি। শুধু তাই নয়। তারপর অল্প টাকায় জোর করে সোনারদের দোকান ও জমি কিনে নিজের আত্মীয়ের দোকান বসিয়েছেন। এখন গুষ্টি শুদ্ধ দুনম্বর ব্য বসা ফেঁদেছেন। শেঠজী সব বুঝতে পারলেন। ঢোক গিলে বললেন - কে আপনি?

-আইগ্যা ব্যাওসা চালাচ্ছেন, ভীমরতি ত ধরেনাই? বুধার সোনা পাথর লুচকাঁই শেঠজী হল্যেন। গুনাহগার ত দিতেই হব্যাক?

-বুধা? রাস্তার মেথর বাচ্চা ছিল? আমার দুয়ারে ঝাঁট দিয়ে ধুলো কুড়াতো?

ঠিক এই সময় সিবিআই টিম চেম্বারে ঢুকল। সেই লোকটিকে সেলাম ঠুকে বলল, স্যার এখানে রেড করাতে দেওয়ালে লুকোনো প্রচুর সোনার বিস্কুট পাওয়া গেছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন