৮০তে
আসিও না
তুমিই বলতে... নাকি ছোটবেলা অনুযায়ী আমিই ধরে নিয়েছিলাম। তোমার
পিঠের আঁচিলগুলোকে কলিং বেলের বাটন্ মনে করে হেভ্ভি মজা পেতুম সে সময়। ভাবতাম, বুঝি তোমায় গরুর কামড়ে ওমন হয়েছে!
এইভাবে কত কত মিথ্যে সত্যি হয়ে গেছে তোমার
কথায়। আমার বয়সও মিথ্যে তোমার ছানি
পড়া চোখে। সত্যি বলতে, মেয়েবেলার শীতকালে তোমার সঙ্গে বসে, আমার হাঁস দেখা।
আমার গলার স্বর যত আধো আধো থেকে পরিণত হয়েছে, পাল্লা দিয়ে কিছুটা কমেছে আমাদেরও হাঁসও ইতি হয়েছে।
আমার তখন পাঁচের
ঘরের নামতা সবচেয়ে পছন্দের। আর তুমি
আসতে আসতে ভুলতে বসেছ তরকারিতে নুনের পরিমাণ। ক্রমশ কাঁচা থেকে যাচ্ছে উচ্ছে-কুমড়ো। আমি অবশ্য সেসব টের পেতাম না। এখন তোমার আঁচিলের থেকে,
তোমার গাল দুটো আমার বেশি প্রিয়। আদালতে যেমন অর্ডার-অর্ডার করে না, সেরকমই কিছু একটা করতাম তোমার গালদুটোকে নিয়ে। তুমিও কিছু বলতে না। তোমার বলা বলতে
তো শুধু গল্প। সে শ্যামবাজারে শকুন নামা-ই হোক বা বাবার রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটা...
কিন্তু কখনই তোমাকে নিজের কথা বলতে শুনিনি।
তুমি আমার জন্মদিনটা মনে রাখো তোমার অম্বুবাচির
নিরিখে। ওর আশেপাশের সময়ই হয়েছিলুম কিনা!
আমি অবশ্য ওইদিন অপেক্ষা করতাম, কখন পলিথিনে মোড়া দুটো আটার লুচি-সন্দেশ-চানাচুর আসবে!
আসতোও, একরকম প্রায় নিয়ম করেই।
এইভাবে আমিও বড় হতে লাগলাম, কিন্তু তুমি বুড়ি হলে না খুব একটা। খালি তোমার গায়ের ঝুলে যাওয়া চামড়ায় কী যে আরাম...
রাতে শোয়ার আগে তোমার বাঁধানো দাঁতগুলো যখন
কৌটতে রাখতে, প্রতিবার
সেইসময় তোমার কাছে আমার আবদার ধেয়ে আসত। তোমার ফোকলা দাঁতের হাসি
দেখে আমি হাসতাম। আর আমার হাসি দেখে তুমি হাসতে। তবে সব কিছুর উপরে ছিল ঘুমোনোর সময় আমার পিঠে তোমার হাত বোলানো। ওরকম ঘুম এখন অনেকদিন হয় না।
কানে তোমার মেশিন জুড়ল। তুমি বেশি শুনতে চাও।
কিন্তু শোনার বদলে তুমি একদিন দেখলে তোমার
পেনশনের খাতা।
ছোট থেকে তুমি যাদের সংখ্যা চেনালে, তারাই তোমাকে তোমার জমানো শূন্য ভোলাতে সাহায্য করলো।
তুমি কি কষ্ট পেলে?
কোথায় রাখো সেসব?
সেই ট্রাঙ্কটাতে?
বাড়ির ঠাকুরঘরের এককোণে যেটা থাকে?
আমি গেলে যেখান থেকে চুপিচুপি তুমি আমাকে
গজা খেতে দাও?
মাঝে-সাঝে টক হয়ে যেত সেসব। তুমি টের পেতে না,
আমি পেতাম।
এবারে যেতে পারিনি।
বাবার হাতে আসার সময় গুঁজে দিয়েছো ভাঁজ করে।
আমিও ভাঁজ খুলিনি। খালি মনে হয়েছে, ও জিনিস খুললে, তোমার তেলমাখা ভেজা চুলের গন্ধটা ছড়িয়ে
পড়বে সব জায়গায়।
সব্বাই শুঁকে নেবে সে গন্ধ।
তোমার গলার হাড়, হাতের আংটি যতই অন্য কারোর হোক না কেন; তোমার ভেজা গা, কালো কাড়ে বেঁধে রাখা চুল, ঝুলে পড়া চামড়া, ফোকলা মাড়ি, ঢুকে যাওয়া গাল... সব আমার। শুধু আমার।
শুনো না বেশি, দেখো না সব।
আরো বেশি করে ভুলে যাও তরকারিতে নুন দিতে।
আর আমিও ততক্ষণে খোঁজার চেষ্টা করি... চোখের
কোলে, ওটা কি সত্যিই তোমার আই
ড্রপ?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন