গল্পের চোখ
-তুই নাকি ‘দক্ষিণ ভারতে’ বাড়ি
করেছিস?
-হ্যাঁ, একটা ‘উচ্চস্তরের’
ফ্ল্যাট নিয়েছি।
-উচ্চস্তরের?
-আটতলায়। এক বেডরুম অবশ্য। যা দাম... শহরে হলো না, একটু শহরতলীর দিকে যেতে হলো। ছেলে-বৌমা চেন্নাইতে চাকরি
করে, ভাবলাম একসঙ্গে
না হলেও কাছাকাছি থাকা যাবে।
-সারাদিন কী করিস্? ফেসবুক আর
ইন্টারনেট?
-ওসব ভালো লাগে না। বারান্দায় বসে
সময় কাটাই, অনেক মজার মজার ব্যাপার দেখা
যায়... এই যেমন সেদিন... বাঃ, চা টা বেশ করেছিস তো... যাকগে, যা বলছিলাম। সকাল এগারোটা-সাড়ে এগারোটা
হবে। বারান্দা থেকে একটা রাস্তা দেখা যায়,
নতুন নতুন একতলা দু’তলা বাড়ি হচ্ছে এদিকে সেদিকে।
আরও দূরে তাকালে লম্বা উড়াল-পুল হাইওয়ে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর আকাশের গায়ে
পেনসিল স্কেচে আঁকা পাহাড়ের সারি...
-বাঃ, জায়গাটা তো খাসা মনে হচ্ছে!
-তা মোটামুটি। হ্যাঁ, সেদিন দেখলাম
অনেক লোক সারি বেঁধে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। শবযাত্রা। বেশ বড়সড় কেউ একটা গেছে বলে
মনে হলো। কাচের গাড়িতে অনেক ফুল দিয়ে
সাজানো। তারপর – এরকম আগে কোথাও দেখিনি – প্রায় জনা তিরিশেক মহিলা, তারা সকলে
কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছে। পেছনে আরও অনেক
লোক, বেশির ভাগ সাদা পোশাকে। এত লোকজনের ভেতরে
একটি বছর তিরিশের মহিলা আর একটা লোক বছর পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ হবে – এই দুজনের ওপর আমার
মনোযোগটা গিয়ে পড়ল। শব-বাহিকা গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আমি চোখ বন্ধ করলাম।
-হুঁ, তারপর?
-ওই যে লোকটা – ওর নাম বাসুদেবন।
আর ক্রন্দনরত মহিলাটি অর্পিতা, ওর বউ। অর্পিতা একটু জোরেই কাঁদবার চেষ্টা করছে,
হাজার হোক, বাড়ির বউ তো! কিন্তু ভালো পারছে না। কারণ তার মাথায় চিন্তা ঢুকেছে।
মারা গেছে বাসুর জ্যাঠা। অবিবাহিত। অনেক
টাকা, অনেক সম্পত্তি। তার অনেকটাই বাসু পাবে। তা তো ভালোই, কিন্তু বাসুর একটা
দুর্বল জায়গা আছে। অপরাজিতা। অত টাকা পেয়ে
বাসুর যদি সাহস বেড়ে যায় আর অত টাকা দেখে ওই বেহায়া অপরাজিতা যদি বাসু-অর্পিতার সংসারে ঢুকে পড়তে
চায়!
-তুই এত কিছু জানতিস? চেনাশোনা ছিল
নাকি?
-না, একেবারেই নয়।
-তাহলে?
- মাঝখানে বলেছিলাম না চোখ বন্ধ করেছিলাম।
চোখ বন্ধ করেই সব দেখতে পেলাম। মানে চোখের পাতা বন্ধ করতেই গল্পের চোখ খুলে গেল কি
না! যা তোকে বললাম তা সত্যি না হতে পারে, কিন্তু মিথ্যেও তো না হতে পারে! সত্যি-মিথ্যের
এই ছায়াঘেরা মাটিতেই তো গল্পের চারাগাছ গজায়। কী বুঝলি?
-বুঝলাম
ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে শিগগির তোর কলকাতা চলে আসা উচিত। একা থেকে থেকে তোর মাথাটা
যাচ্ছে, দেরি করলে আর সারবে না!
বাঃ বেশ ভালো
উত্তরমুছুন