ভালো
দু’দিন লেগে থেকেও ক্লাস এইটের কেউই ভালো কিছু
কিছু করতে পারল না। অন্য ক্লাসগুলোয় চেষ্টা করেও লাভ নেই। এরা এই কাজের জন্য নয় আসলে। একমাত্র সবুজ
নামক ছেলেটি পারল। ও শিক্ষিত বাড়ির ছেলে। একটু বেশি বয়সে ভর্তি হয়েছে। ওর বাবা
স্থানীয় একজন হাতুড়ে। আর কেউ পারল না।
‘সোনার তরী’ আবৃত্তি করাচ্ছেন সঞ্জয়বাবু।
চারজনকে বেছেছেন। কিন্তু হচ্ছে না। উনি নিজেও আবৃত্তি করতে পারেন না। অগত্যা হতাশ
হয়ে পকেট থেকে মোবাইল আর হেডফোন বের করলেন।
‘এই তোরা একে একে আয়। এটাকে কানে লাগিয়ে
দিচ্ছি। শোন, কেমন করে করতে হয়। গতকাল সবুজ আমার বাড়িতে গিয়েছিল। এটা ইউ টিউব থেকে নিয়েছি। ওকে শোনালাম।
কাজ হয়েছে বুঝলি তো? আজ তো ভালোই করল। তোরা শোন একে একে। সাথী, আগে তুই আয়... তোর গলা তো ভালোই, একটু শিখে নিলেই মোটামুটি পেরে যাবি।’
ময়লা ক্লাসরুম। দেওয়ালে প্লাস্টার নেই। মেঝেতেও
ইট দাঁত বের করে আছে। ক্লাস এইটের এই ছেলেমেয়েগুলো সকলেই প্রায় দরিদ্র পরিবারের।
সবুজ ছাড়া সকলেই স্কুলে মিড-ডে মিল খায়। কেউ কেউ একটু বেশি করেই খায়, যাতে রাত অবধি খিদে না পায়। এদের কারো উচ্চারণ ঠিক নেই। সামনে সরস্বতী পুজো। একটা ছোট অনুষ্ঠান তো
করতেই হয়।
সাথী শুনল। মিলন শুনল। আবীর শুনল। একজন যখন
শুনছে অন্যরা একটু হাসাহাসি করছে। সবুজকে আর শোনালেন না সঞ্জয়বাবু। তারপর আবার
ফোটোকপি করা কবিতাটা পড়ে শোনাল। এবার আবেগ বেড়েছে। একটু কায়দা এসেছে গলায়। অবিশ্যি
‘স’-এর দোষ কাটেনি। ওটা এই এলাকায় কাটা সম্ভব নয়। পরের দিন ওরা মুখস্থ করে আনবে।
সবুজ নিজের খেয়ালেই আরেকবার শুরু করে দিল। ওর
গলাতেও আরেকবার মন দিয়ে শুনল সবাই। সবুজকে নিয়ে সঞ্জয়বাবুর চিন্তা নেই। ও অবশ্য
পড়াশোনাতেও সবার মধ্যে ভালো।
পরের দিন প্রথমে সবুজ মুখস্থ দিল। ভালোই করেছে
আগের দিনে মতো। সাথী মুখস্থ দিল। মিলন। আবীর। সবার আজ অনেক উন্নতি হয়েছে।
সবাই আজ সবুজের চেয়ে ভালো। সঞ্জয়বাবু মনের খুশিতে বলে ফেললেন, ‘বাঃ! দারুণ
করছিস তো রে তোরা! আমি তো আশাই করিনি, তোরা এত ভালো
পারবি!’
আচমকা সবুজ দাঁড়িয়ে উঠল। তার মুখ লাল হয়ে গেছে।
‘স্যার, এইটা ঠিক লয়।’
সঞ্জয়বাবু ঘাবড়ে গেলেন। সবুজকে অস্বাভাবিক
লাগছে। এত রেগে গেছে কেন! হাত শক্ত হচ্ছে, যেন খিচুনি আসবে এখুনি।
‘কী হলো রে তোর সবুজ?’
‘স্যার, অরা মোকে নকল করতিছে!’
‘কী?’
‘স্যার, মুই কালকে নিজে নিজে যেটা করেছিলম, অরা
সেটা শুনে লিয়েছিল। আজ তো সেটাকেই করতিছে! অরা তো ওই ফোনের মতন করে বললনি! মোকে
নকল করতিছে দেখুন।’
‘কী বকছিস? ভালোই তো করছে রে ওরা বাবা!’
‘না স্যার!’ উত্তেজনায় সবুজের বয়ঃসন্ধিকালীন
গলা এবার চিরে ফেটে গেল। ‘স্যার, জেরক্স কুনুদিন অজ্জিনালের মতন ভালো লয়! জেরক্সকে
ভালো বলতিছেন ক্যানে? অজ্জিনালের দাম নাই স্যার?’
'ভালো' প্রশ্ন
উত্তরমুছুন