কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০ |
ক খ গ
দুবছর পড়ে পয়সার অভাবে কলেজ শেষ করতে পারিনি। আশা ছিল লেখক হব। হইনি। লিখব কোথায়? ভাবলাম লেখক না হই সাংবাদিক তো হতে পারি। পারিনি। কেউ নিলই না। ছবি আঁকার হাত ছিল। আঁকিয়ে হবার চেষ্টা করলাম – সুযোগ পাইনি। ভাবলাম আলোকচিত্র শিল্পের লাইনে যাই। হ্যাঁ, এটা হয়েছে। সাতঘাটের জল খেয়ে এখন এই আমার জীবিকা।
সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলির পর
মোবাইল যুগ এসেছে। সকলের পকেটেই ফোন-ক্যামেরা। তবু কয়েকজন ছবি তুলতে চায় – দিন গেলে
চার-পাঁচশো মতো হয়। তাতেই বেঁচে আছি। পুরীর সমুদ্রতীরে আমাকে দেখে থাকবেন। ক্যামেরা
হাতে ঘুরে বেড়াই – বেড়াতে আসা মানুষজনের কাছে এসে বলি “দিদি, একটা ছবি তুলে দেব? কিংবা
হুটোপুটি করে চান করতে থাকা পরিবারের মধ্যে গিয়ে বলি ‘একটা ছবি তুলি, মাত্র তিরিশ টাকা
কপি, হোটেলে পৌঁছে দেব…”
ছবি তুলে কপাল খোলেনি ঠিকই তবে হাজারে হাজারে লোক দেখতে দেখতে কপালে একটা অদৃশ্য তিন নম্বর চোখ খুলেছে। কতরকমের লোক – এদের মূল স্বভাবটা আমার ‘তৃতীয় নয়নে’ ধরা পড়ে যাচ্ছে।। এই যেমন আজ বিকেলে দেখলাম তিনটে মাঝবয়সী লোক বালিতে বসে আছে। হাসিহাসি মুখ করে এগিয়ে গেলাম। “স্যার একটা ছবি…”
প্রথম লোকটা কোন পাত্তা না দিয়ে
বন্ধুদের বলল, “এই চল, মাছভাজা আর কফি খেয়ে আসি। ক্ষিদে পাচ্ছে”। এ হচ্ছে ক মার্কা মানুষ। বেড়াতে এসে শুধু খাই খাই।
দ্বিতীয় লোকটা আমার দিকে কটমট করে তাকাল “আমাদের কাছে পাঁচ-পাঁচটা ফোন আছে – ছবি তুলব
পয়সা দিয়ে!” তারপর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, “রবিবারের টিকিটটা কনফার্ম হবে তো রে,
সোমবার থেকে শেয়ার বাজার নামছে। পাকা খবর। সকালেই কিছু শেয়ার কিনতে হবে, মাস ছয়েকে
ভালো রিটার্ন… অ্যাই, তুমি কাটো তো, পয়সার গাছ নেই আমাদের। ছবি
লাগবে না।”
খ জাতের মানুষ। এত বড় সমুদ্র একে টাকাপয়সার কথা পলকের জন্যেও ভোলাতে পারেনি।
আমার অবশ্য লক্ষ্য তৃতীয়জন। সে
এখন দূর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে। সূর্যদেবের ফেলে যাওয়া অল্প একটু লাল-হলদে আলো মেঘের
ওপর। দিন শেষ হবার বার্তা দিয়ে তিনটে পাখি ফিরে যাচ্ছে। লোকটা বলল, “তোলো দেখি একটা
ছবি আমাদের। সমুদ্র, আকাশ, মেঘ – চারপাশের বেলাশেষের ভাবটা যেন আসে।”
মন দিয়ে ছবি তুললাম। এ লোকটা গ
মার্কা।
পরের খদ্দেরের খোঁজে আবার হাঁটছি। দেখলাম অনেকগুলো কাক বালিতে জটলা করছে। বালি খুঁটে কাঁকড়া বা অন্য খাবার খুঁজছে। ক জাতের কাক। কয়েকটা কাক মাছভাজা-দোকানটার আঁস্তাকুড় তাক করে মতলব ভাঁজছে। দোকান খালি হলেই উড়ন্ত আক্রমণ করবে। মাছের ভগ্নাংশ আছে অনেক। খ জাত বলা যেতে পারে।
কাকগুলো বড় চেঁচাচ্ছে। এদের কক্বকখক ডাক শুনে আমার ‘তৃতীয় নয়ন’ আর একবার খুলে গেল।
সাগরতীরে হাজার মানুষের ভীড়, হৈচৈ।
তৃতীয় নয়নে দেখলাম সবই ক কিংবা খ। গ মানুষ এতো কমে যাচ্ছে আজকাল…
তৃতীয় নয়ন মেলে ধরে অপূর্ব চিত্র
উত্তরমুছুন।