ওয়ান হু ফ্লিউ ওভার দি কাকুজ নেস্ট
অনেক
কালজয়ী সিনেমা দেখেছি। যেমন, আইজেনস্টাইনের 'ব্যাটলশিপ পটেমকিন', দি সিকার 'বাইসাইকেল
থীফ', মৃণাল সেনের 'মৃগয়া' ও 'ভুবন সোম', সত্যজিতের প্রায় সব ছবি, শ্যাম বেনেগালের
'নিশান্ত', হৃষিকেশ মুখার্জির 'আনন্দ' ইত্যাদি। কমার্শিয়াল ছবির মধ্যে 'সাউন্ড অফ মিউজিক',
'মাই ফেয়ার লেডী', জিনা লোলোব্রিজিদার 'সামার অফ ৪২', 'রোমান হলিডে' (যা বাংলায় 'নায়িকা
সংবাদ') অন্যতম। তবে একটি অসামান্য ইংরাজী
ছবি কলকাতায় বোধহয় এক সপ্তাহের বেশি চলেনি। সেইটি আমার দেখা সর্বসেরা ছবি। নাম 'ওয়ান
হু ফ্লু ওভার দি কাক্কু’জ নেস্ট'। একাডেমির সব পুরস্কার (পাঁচটি) বিজয়ী
দ্বিতীয় চলচিত্র এটি। আর আকিরা কুরোসাওয়া নির্বাচিত
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশটি চলচিত্রের মধ্যে এইটি অন্যতম। অভিনেতা জ্যাক নিকলসনের অনবদ্য
অভিনয়। কাহিনী সংক্ষেপে জানাই।
ধর্ষণের
অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদণ্ডভোগী ম্যাকমারফি (জ্যাক নিকলসন) জেলের কঠোর পরিশ্রম এড়াতে
মানসিক রোগীর ভান করে মানসিক চিকিৎসালয়ে চলে আসে। সেখানে এক নার্স তার রোগীদের দমন
করতে অত্যাচারীর ভূমিকা নিতেন। নার্স ম্যাকমারফির প্রাণোচ্ছল এবং বিদ্রোহী মনোভাব দেখে
তাঁর ক্ষমতা দেখিয়ে রোগীদের সিগারেট এবং রেশন বাজেয়াপ্ত করেন এবং তাস খেলাও বন্ধ করে
দেন। নার্সের সঙ্গে ম্যাকমারফির সংঘাত শুরু হয়। একদিন সে এক স্কুলবাস চুরি করে অন্য
রোগীদের নিয়ে সমুদ্রের তীরে মাছ ধরতে যায়। এতে সহরোগীদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে
যায়।
এক
আর্দালি একদিন ম্যাকমারফিকে জানায় যে মেয়াদি কারাদণ্ড মানসিক রোগীদের জন্য প্রযোজ্য
নয়। তখন থেকেই ম্যাকমারফি পালানোর চেষ্টা করতে থাকে। সে ব্রমডেনকে হাইড্রোথেরাপি মেশিন
তুলে জানালা ভেঙে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করে। এটা জানা যায় যে ম্যাকমারফি, ব্রমডেন এবং
আর একজন রোগী দুরারোগ্য রোগী নয়। তাই বাকি রোগীরা দুরারোগ্য হওয়ায় তাদের যে কোন সময়েই
ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে একদিন এক রোগী সিগারেটের জন্য প্রচন্ড চেঁচামেচি শুরু
করলে, ম্যাকমারফি আর্দালিদের সঙ্গে লড়াই করে এবং তখন ব্রমডেন বাধা দেয়। এরপর নার্স
এই তিনজনকে শক থেরাপির জন্য পাঠান। এই সময় ম্যাকমারফি বুঝতে পারে যে ব্রমডেন বোবা বা
মূক নয়। ইলেকট্রোথেরাপির পর নিজের শয্যায় ফিরে এসে ম্যাকমারফি মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে যাওয়ার
ভান করে।
এরপর
ব্রমডেনের সঙ্গে ম্যাকমারফি পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। খ্রীষ্টমাসের দিন গোপনে
তারা এক পার্টির আয়োজন করে। নার্স রাতের ডিউটি সেরে চলে যাওয়ার পর শুরু হয় পার্টি।
ম্যাকমারফি প্রহরীদের ঘুষ দিয়ে মদের বোতল এবং দুইটি মেয়েকে জেলের ভিতরে নিয়ে আসার বন্দোবস্ত
করে। কিন্তু, অধিক পানের ফলে ম্যাকমারফি অত্যাসক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে পালিয়ে যাওয়া হয়
না। পরদিন সকালে নার্স এসে ওয়ার্ডের নয়ছয় অবস্থা দেখেন এবং এও দেখেন যে বেশির ভাগ রোগী
পালিয়ে গেছে। এক রোগী ও একটি মেয়েকেও একসাথে শুয়ে থাকতে দেখেন। তিনি সেই রোগীকে সবার
সামনে অপমান করতে গেলে সেই রোগী ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। তখন তাকে ডাক্তারের ঘরে পাঠিয়ে
দেওয়া হয়। সেই সময় ম্যাকমারফি এক আর্দালিকে ঘুষি মারেন এবং ব্রমডেনকে নিয়ে জানালা ভেঙে
পালিয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে সেই রোগী জানালার ভাঙা কাঁচের ফলা দিয়ে গলনালী কেটে আত্মহত্যা করে। নার্স
অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ম্যাকমারফি নার্সের গলা টিপে ধরেন। আর্দালিরা
নার্সকে বাঁচায়।
কিছুক্ষণ
পরে নার্সকে গলায় বন্ধনী লাগিয়ে ওয়ার্ডে আসতে দেখা যায়। কিন্তু, ম্যাকমারফিকে কোথাও
দেখা যায় না। গুজব ছড়ায় সে পালিয়ে গেছে। সেই রাতে ব্রমডেন ম্যাকমারফিকে তার শয্যায়
ফিরে আসতে দেখে। সে দেখে ম্যাকমারফি খোঁড়াচ্ছে এবং কোন সাড়া দিচ্ছে না। সে তার কপালে
এক স্নায়ু-শল্যচিকিৎসার চিহ্ন দেখতে পায়। বুঝতে পারে নার্স তাঁর প্রতিশোধ নিয়েছেন।
কান্নায় ব্রমডেন ম্যাকমারফিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি আমার সঙ্গে আসবে”
এবং তার গলায় বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। সে তখন বিশাল
হাইড্রোথেরাপি মেশিন মেঝে থেকে উপড়ে ফেলে তা দিয়ে জানালা এবং গরাদ ভেঙে পালিয়ে যায়।
Summer of 42 ছবির নায়িকা জিনা লোলোব্রিজিডা নন, জেনিফার ওনেল। 'নায়িকা সংবাদ'-এ Roman Holiday-র ছাযা থাকতে পারে, তবে উক্ত ছবির অনেক কাছে যায 'রাতের রজনীগন্ধা'।
উত্তরমুছুন