বাঙলা সাহিত্যে দেশভাগ ও শরণার্থী দুর্দশা — আমরা আর ওঁরা
বন্ধু অধ্যাপক বাংলা সাহিত্যের বাঘা
পণ্ডিত। আমায় বললেন বাংলা সাহিত্যে দেশভাগ নিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের নীরবতা কি
ওঁদের সাহিত্যে সত্যের প্রতি অনিষ্ঠার জ্ঞাপক নয়? আমি বললাম ‘হোঁ’! ‘হোঁ’ বা ‘হেঁ’
ভালো শব্দ! হেঁ বললে কিছু বলতে হয় না। হেঁ-র সঙ্গে একবার আবার হেঁ, মানে হেঁহেঁ বললে
একটু হাত কচলানো স্তাবকতাও মেশে। হোঁ-তে অনেক কিছু বলা যায়। ক্রমানুযায়ী সেগুলো হলো:
১) ওঃ হ্যাঁ; ২) মরুকগে, আমার কী, এইগুলোই ক্লাসে পড়ান; ৩) বাক্যব্যয়ে কাজ নেই। কারণ
বাংলা সাহিত্য নিয়ে কিছু বলতে আমি বেশ ভয় পাই।
তিন নম্বরটা নিয়েই বলি! তুষ্ণীক হওয়ার কারণ হলো আমার অবস্থাটা
খানিকটা সেই প্রবাদিত গ্রামীণ মুচির মতো যে তার প্রতিযোগী সাহেব শল্যবিদদের ষড়যন্ত্রে
শল্যবিদ্যা শিখে ফেলে নিজের আগে অনায়াসে করা অস্ত্রোপচারগুলিও আর নির্ভয়ে করতে পারতো
না। ছোটোবেলায় অবহেলে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পাঁচ কথা লিখে দিতাম ক্লাসে, পরীক্ষায়। কিন্তু
মনে পড়লো যে কিছুকাল আগে এক প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা বিভাগে ‘বাংলা সাহিত্যে
রাজনৈতিক সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্য, ১৯৫০-২০০০’ শীর্ষক সেমিনারে
চুম্বকবক্তৃতা দিতে গিয়ে আমি ‘বাংলা সাহিত্য’ কথাটাতেই আটকে গেলাম। সেখানে রাজনৈতিক সমাজ তথা পুরসমাজ সম্বন্ধে সমকালীন বাংলা সাহিত্যে নীরবতার আপাতঃ অরূপান্তরের অরূপবীণার
ঝঙ্কারের কথা বলতে গিয়ে আমায় প্রথমতঃ বাংলা সাহিত্য কথাটার
আগে পশ্চিমবঙ্গীয় বিশেষণটি যোগ করতেই হলো! কারণ আন্তর্জালে
১৯৫০ থেকে ২০০০ বাংলা সাহিত্যের এন্ট্রি দিলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবৎ নাম
ও কোর্স উঠে আসে, পশ্চিমবঙ্গের নয়। আর ১৯৫০ থেকে ২০০০ বাংলা
উপন্যাস এন্ট্রি দিলে উঠে আসে ওপার বাংলার লেখকদের এই বিদগ্ধ
আক্ষেপ, কেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ইতিহাসকাররাও এই
খণ্ডিত দৃষ্টির শিকার, যে তাঁদের আলোচনায় বাংলাদেশের কবি,
গল্পকার, ঔপন্যাসিকরা উল্লেখিত হন না। টরণ্টোনিবাসী বাংলাদেশি সাহিত্যিক
সুব্রতকুমার দাস, ‘প্রথম আলো: দূর
পরবাস’ ব্লগে দেখিয়েছেন যে ১৩৪৫ (১৯৩৮) সালে প্রকাশিত
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা-র ১৯৯২ সালের নবম
সংস্করণে অবধি ‘সৃজ্যমান উপন্যাস সাহিত্য’ শিরোনামের সর্বশেষ অধ্যায়টির প্রায় সোয়াশো পৃষ্ঠায় ভারত-বিভাগ-উত্তরকালের
বাংলা উপন্যাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের
কোনো ঔপন্যাসিক এতে অন্তর্ভুক্তি পাননি। আবার ১৯৬৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হবার
পর ক্রমাগতঃ নব সংস্করণায়িত সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা উপন্যাসের কালান্তর
বইতেও বাংলাদেশের লেখকদের নামগন্ধ নেই। দাস একই অভিযোগে বিঁধেছেন বাংলা সাহিত্য আলোচনার আরো অনেক দিকপালকে। যেমন,
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ভূদেব চৌধুরীর
বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্প ও গল্পকার (চতুর্থ পরিবর্তিত পরিবর্ধিত সংস্করণ
১৯৮৯) ;১৯৮৮ সালে প্রকাশিত অশ্রুকুমার শিকদারেরআধুনিকতা
ও বাংলা উপন্যাস; সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়েরউপন্যাস: দ্বান্দ্বিক
দর্পণ (প্রথম প্রকাশ ১৯৯৩, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৯৬); বাংলাদেশের
সমালোচক সমীরণ মজুমদার সম্পাদিত উপন্যাস শিল্প (১৯৯৭); ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত রুশতী সেনের সমকালের গল্প-উপন্যাস: প্রত্যাখ্যানের
ভাষা; একই বছরে প্রকাশিত স্বরাজ গুছাইতের বিনির্মাণ ও
সৃষ্টি: আধুনিক উপন্যাস; সুমিতা চক্রবর্তীর উপন্যাসের
বর্ণমালা (১৯৯৮) ইত্যাদি বইকে।১ তাহলে আর অবিশেষিত বাংলা সাহিত্যর কথা বলি কী করে? বাংলা সাহিত্য কথাটার জায়গায় পশ্চিমবঙ্গীয় বসিয়ে নেয়াই ভালো!
দ্বিতীয়তঃ দেশভাগ নিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের নীরবতা না হয় আছে, কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গীয় সাহিত্যিকদের সরবতা কতখানি? আসলে আমরা দেশভাগ আর উদ্বাস্তু অন্তঃপ্রবাহকে গুলিয়ে ফেলি। এরা পরস্পর সম্পৃক্ত হলেও একার্থক নয়। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। দেশভাগ পাঞ্জাবে আর বাংলায় একবারই হয়েছে ১৯৪৭ সালে। কিন্তু দেশভাগ সঞ্জাত শরণার্থী আগমন পাঞ্জাবে একবার হলেও, পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে পাঁচ-ছয়বার, ১৯৪৬-এ নোয়াখালির দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে বিষয়সম্পত্তি বিক্রি করে পূর্ব পাকিস্তানের পাট চুকিয়ে কলকাতা ও অন্যান্য জেলায় চলে আসা অনেক মানুষের কথা যদি বাদ দিই-ও। ১৯৪৯-এ খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ জেলাগুলোতে আবার দাঙ্গা শুরু হলে শরণার্থীদের ঢল নামে। এরপর ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬৫-র পাক ভারত যুদ্ধ হয়ে ১৯৭১-এর বাংলাদেশি স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যবর্তী কালে পূর্ব পাকিস্তানে অজস্র জাতিদাঙ্গায় হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছেন। ১৯৫০-এর পূর্ব পাকিস্তান দাঙ্গা তথা পাকিস্তানি পুলিশ, প্যারামিলিটারিবাহিনী কর্তৃক বাঙালি হিন্দুদের ওপর হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন,অপহরণ, ধর্ষণ ইত্যাদির ফলে অজস্র, অসংখ্য মানুষ পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। ঢাকা,বরিশাল (মুলাদি হত্যাকাণ্ড খ্যাত), চট্টগ্রাম (সীতাকুন্ড গণহত্যা খ্যাত), সিলেট, রাজশাহী (অ্যান্ডারসন সেতুর হত্যাকাণ্ড খ্যাত), ময়মনসিংহ, যশোর, ইত্যাদি বহু জেলা এই রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের কবলে পড়েছিল। অনেকে বলেন ৬৫০,০০০জন হিন্দু ১৯৫০ সালে বরিশাল থেকে ভারতে পালিয়ে যায়। ১৯৫০ সালের ৪ এপ্রিলে বিধানচন্দ্র রায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা জানান যে তখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লক্ষ শরণার্থী ইতমধ্যে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর মতে ৩৫ লক্ষ হিন্দু শরণার্থী ১৯৫০ সালে ভারতে পালিয়ে আসে।২ আবার ১৯৬২-এর রাজশাহী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী ও পাবনা জেলার স্থানীয় হিন্দু, বৌদ্ধ, সাঁওতালদের গণহারে হত্যা করার ঘটনায় ১১,০০০- এরও পর সাঁওতাল ও রাজবংশী ভারতে পালিয়ে যান। পরন্তু জম্মু-কাশ্মীরে হজরতবাল মসজিদে হজরত মুহাম্মদের সংরক্ষিত মাথার চুল চুরি করা হয়েছে–এই গুজবে জন্ম নেওয়া খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ ইত্যাদি জায়গাতে ১৯৬৪ সালের পূর্ব-পাকিস্তানের দাঙ্গার ফলে কমপক্ষে ১,৩৫,০০০ হিন্দু শরণার্থী প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, ১৯৯০ সালে অক্টোবরের শেষে এবং নভেম্বরের প্রথম দিকে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে এই গুজবের ফলে শুরু হওয়া জাতিদাঙ্গার পর আবারো একটি বড় ধরনের বাঙালি হিন্দু শরণার্থীর স্রোত আছড়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। শেষতঃ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এসে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এককোটি। সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয়দাতা রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে আশ্রিতের সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৪। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ত্রিপুরা। তবে সেখানে আশ্রিত ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৪৯১ শরণার্থী ছিল ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। এগুলোতে ভারতের দেশভাগ হয়নি, ১৯৭১-৭২এ পাকিস্তান দুভাগ হয়ে যাওয়া ছাড়া। কিন্তু পাঞ্জাবে না হলেও পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী স্রোত আছড়ে পড়েছে। এই ১৯৬২ থেকে ১৯৭১র মধ্যে আসা ছিন্নমূলদের কথা বাংলা সাহিত্যের পশ্চিমবঙ্গীয় বা বাংলাদেশি চাঁইরা কতটুকু লিখেছেন?
বাংলা সাহিত্যের প্রণালীবদ্ধ পাঠ আমার নেই। তবুও আমার সীমিত রাডারে যা ধরা পড়ে তার ভিত্তিতে বলছি পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলা সাহিত্য দেশভাগের রাজনীতির সন্নিষ্ঠ বিশ্লেষণ সেভাবে করেনি। যে অর্থে নীতীশ সেনগুপ্ত৩ বা ইয়াসমিন খান৪ দেশভাগকে ধরেছেন পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলা সাহিত্যে তার উদাহরণ কই? যেসব লেখা আছে তাদের সবই পূর্ব-পাকিস্তানে থেকে যাওয়া মানুষের বা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা ছিন্নমূল মানুষের লড়াইয়ের, যন্ত্রণার, নিস্ক্রিয় বিধুরতার ছবি বা খণ্ডচিত্র। এই খণ্ডচিত্রত্ব বাংলাদেশি বাংলা সাহিত্যেও আছে। যেমন, দুটো মিলিয়ে বললে গল্পের মধ্যে মনোজ বসুর ‘ইয়াসিন মিঞা, ‘বন্দেমাতরম’, এস এম বজলুল হকের ‘ভাগনা দিয়ে ভাগানো’, অঞ্জলি দেবীর ‘নবীন আশার খড়গ’, অপূর্বকুমার মৈত্রের ‘স্বাধীনতার ব্যথা’, নরেন্দ্র দেবের ‘চলচ্চিত্র’, সুমথনাথ ঘোষের ‘উদ্বাস্ত্ত’, হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পুনশ্চ, ‘ইতিহাস’ ও ‘লাঠিয়াল’, ঋত্বিক ঘটকের ‘স্ফটিকপাত্র’ ও ‘সড়ক’, ফণীন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের ‘গোপাল উড়ের লেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খতিয়ান’, ‘স্থানে ওস্তানে, সমরেশ বসুর ‘নিমাইয়ের দেশত্যাগ’, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘গণনায়ক’, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘হেডমাস্টার’ও ‘পালঙ্ক’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শ্বেতকমল’, ‘অধিকার’, প্রতিভা বসুর ‘দুকূল হারা’ ও ‘অপরাহ্ণে’। ওপার বাংলায়, মানে দেশভাগের পর — নইলে এঁরা কেউ কেউ অবিভক্ত বঙ্গের ছিলেন — সিকান্দার আবু জাফরের ‘ঘর’, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ‘নেহায়েৎ গল্প নয়’, নূর আলীর ‘মোহাজের’, বেগম হাশমত রশীদের ‘ফরিয়াদ’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘ছুরি’, ইত্যাদি। অথবা দুদশক পরে আসা উপন্যাসের ক্ষেত্রে এপারের জ্যোতির্ময়ী দেবীর এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা (১৯৬৭); আর ওপারের আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা (১৯৯৬), সেলিনা হোসেনের ‘গায়ত্রীসন্ধ্যা (২০০৭), হাসান আজিজুল হকের ‘শিউলি’ (২০০৬), ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ (২০১৩)। এছাড়া আত্মজীবনীমূলক মিহির সেনগুপ্তের ‘বিষাদবৃক্ষ’ (২০০৩), সুনন্দা শিকদারের ‘দয়াময়ীর কথা’ (২০০৮), সীমা দাশের ‘দ্যাশ থেকে দেশে ‘ (২০১০) ইত্যাদির নাম করা যেতে পারে।
অসাধারণ। লেখাটি
উত্তরমুছুনএকটি দলিল প্রায়।
এখানে আলোচ্য বিষয় নিয়ে আগামীতে কেউ কাজক চাইলে
এগোনোর জন্য লেখাটিকে দরকার পড়বে ।
শ্রদ্ধা ভালবাসা স্যার।
অসাধারণ লেখা। এতো তথ্য সমৃদ্ধ পান্ডিত্যপূর্ন লেখা পাঠককুলকে নতুনভাবে ভাবনার সঞ্চার করে। প্রণাম স্যার...❤️🙏
মুছুনOsadharon sir,anek ajana bishay jante parlam.
উত্তরমুছুনপ্রফুল্ল রয় এর লেখা, কেয়া পাতার নৌকা উপন্যাস টি উল্লেখ করলেন ক ই?
উত্তরমুছুনএ উপন্যাসেও রসদ তো কিছু কম ছিল না
অসাধারণ তথ্যপূর্ণ লেখা। ঋদ্ধ হলাম ।
উত্তরমুছুনখুবই সাহসী ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা, অবশ্যই ঋদ্ধ হলাম, কিন্তু একটি কথা মনে আসছে, যে সত্য বয়ান লেখকের কলমে ফুটে উঠলো সেটি বোঝার পরেও মনেহয় বর্তমান সময়ে ও তার পরেও এর উত্তর আগামীদিনের লেখকদের কাছে পাওয়ার ও সম্ভাবনা নেই ।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ লেখা। অবশ্যই ঋদ্ধ হলাম, তবে এর পরেও যে ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্য যে সে বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী হবে সে আশা কম।
উত্তরমুছুন